কোটা নিয়ে ছাত্রসমাজের প্রতি ছাত্রলীগের যে বার্তা
সরকারি চাকরিতে ‘কোটা’ ইস্যুর যৌক্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধানের লক্ষ্যে ছাত্রসমাজের উদ্দেএশ বেশ কিছু বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
শনিবার (১৩ জুলাই) সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিটি আরটিভি নিউজের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
ভাষা, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার, সমতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থা ও শিক্ষার সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী শহিদের রক্তস্নাত, বাংলার ছাত্রসমাজের নির্ভরতা-নিশ্চয়তার প্রিয় ঠিকানা, ন্যায়ের পথের নিরলস যাত্রী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দেশের ছাত্রসমাজের প্রতি প্রীতি ও শুভেচ্ছা।
বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার অবিকল্প সারথি, আধুনিক-উন্নত-আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশের কারিগর, গবেষণানির্ভর-বিজ্ঞানভিত্তিক-সমন্বিত-সন্ত্রাসমুক্ত-কর্মসংস্থানবান্ধব-অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের পথিকৃৎ, একদিনে ৩৬ কোটি পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করে বিশ্বে নজির স্থাপনকারী, নারীর শিক্ষা-সমতা-মর্যাদা-কর্মসংস্থানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তাঁর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকারি-বেসরকারি খাতে চাকরি ও কর্মসংস্থানের উদ্যোগ, শিক্ষা খাতে অভূতপূর্ব অর্জন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে জয় করার লক্ষ্যে তারুণ্যনির্ভর কর্মপরিকল্পনা, ডিজিটাল বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ অভিমুখে যে যাত্রা সূচনা করেছেন তার জন্য বাংলার ছাত্রসমাজ ও তরুণ প্রজন্মের পক্ষ থেকে দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রতি হৃদয় নিংরানো ভালোবাসা ও অভিনন্দন।
প্ৰেক্ষাপট
আন্দোলনের প্রেক্ষিতে দেশে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা বাতিল হয় ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একই বছরের ৪ অক্টোবর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। পরবর্তীতে ২০২১ সালে উচ্চ আদালতে করা একটি রিটের প্রেক্ষিতে এ বছরের ৫ জুন হাইকোর্ট ৪ অক্টোবর, ২০১৮-এর প্রজ্ঞাপন বাতিল ঘোষণা করে। সরকার পক্ষের আইনজীবী হাইকোর্ট বিভাগের দেয়া এই রায় বাতিলের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে আবেদন করে, বর্তমানে যা বিচারাধীন রয়েছে। এরই মধ্যে গত ৯ জুলাই, ২০২৪ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর পৃথক একটি রিটে ৫ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের দেয়া রায় স্থগিত করে দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকার কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনকে বহাল রেখে স্ট্যাটাস কো আদেশ জারি করে। এর ফলে সরকারি চাকরিতে চলতি সময়ে আর কোন কোটা ব্যবস্থা প্রচলিত নেই।
বাস্তবতা
বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত-আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা ও কর্মসংস্থান সম্পর্কে দ্বিধাহীনভাবে বলিষ্ঠতার সাথে কাজ করে চলেছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। যার ফলশ্রুতিতে এদেশের তরুণ সমাজ সরকারি চাকরি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগের মাধ্যমে নিজেদের মেধা ও শ্রম কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে দরিদ্র-অনুন্নত পর্যায় থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নিত করতে সক্ষম হয়েছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক নীতি ও কর্মসূচি দেশের সর্বত্র উন্নয়ন-অগ্রগতির আলো পৌঁছে দিয়েছে। দেশ ও সমাজের পিছিয়ে পরা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য নানামুখী সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কারণে তারাও আর পিছিয়ে নেই। দেশের তরুণ প্রজন্ম, শিক্ষার্থীসহ সমাজের সর্বস্তরে সরকারি চাকরির প্রতি যে আগ্রহ-আকর্ষণ বর্তমানে সৃষ্টি হয়েছে তা সম্ভব হয়েছে দেশরত্ন শেখ হাসিনার অনন্য-অতুলনীয় নেতৃত্বে দেশ পরিচালনার মাধ্যমে।
২০১৮ সালের আন্দোলন পরবর্তী প্রেক্ষাপটে কোটা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ তুলে দেয়ার কারণে নারীদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ সংকুচিত হয়ে যায়, যা দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য অন্তরায় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। আমরা লক্ষ্য করছি, কোটা ব্যবস্থা উঠে যাওয়ার পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এদেশের নারী সমাজ। উদাহরণস্বরূপ: কোটা থাকা অবস্থায় সর্বশেষ ৩৬, ৩৭ ও ৩৮তম বিসিএসে নারীদের চাকরি হয় যথাক্রমে ২৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ, ২৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং ২৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ। অন্যদিকে কোটা তুলে দেওয়ার পর ৪০, ৪১ ও ৪৩তম বিসিএসে নারীদের চাকরি হয় ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ, ২১ দশমিক ২০ শতাংশ এবং ১৭ দশমিক ০৫ শতাংশ। পুলিশ ক্যাডারে ৩৬তম বিসিএসে ১৬ জন, ৩৭তম বিসিএসে ১৪ জন, ৩৮তম বিসিএসে ১২ জন, ৪০তম বিসিএসে ৭ জন এবং ৪১তম বিসিএসে মাত্র ৪ জন নারী সুপারিশকৃত হন। অর্থাৎ কোটা না থাকার কারণে বিসিএসে দিন দিন নারীদের অংশগ্রহণের হার একেবারে তলানিতে চলে যাচ্ছে এবং উন্নয়নের মূলধারা থেকে নারীরা ছিটকে পরছে। এমনকি প্রায় ৫০টি জেলায় বিসিএস ছাড়াও সরকারি যেসব কর্মসংস্থানে সুযোগ ছিল সেগুলোতে নারীদের প্রতিনিধিত্ব শূন্য হয়ে যায়। ‘প্ল্যানেট ৫০/৫০’ বিনির্মাণে বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যেখানে সরকারি চাকরিতে জেন্ডার সমতা থাকা উচিৎ সেখানে বাংলাদেশে তা ২৫ শতাংশ এর নিচে রয়েছে। কোটা ব্যবস্থা উঠে যাওয়ার কারণে তা আরও প্রান্তিক পর্যায়ে চলে গেছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় সমন্বিত উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধনের জন্য বিশেষ বিধি থাকলেও ২০১৮ পরবর্তী বাস্তবতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব সম্ভব হচ্ছে না। উদাহরণস্বরূপ: ৪০তম বিসিএসে দেশের ২৪টি জেলা থেকে এবং ৪১তম বিসিএসে ১৮টি জেলা থেকে একজনও বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশকৃত হয়নি।
একইভাবে সমাজের পিছিয়ে পরা বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর জন্যও এটি সত্য। কোটা থাকা অবস্থায় ৩১ থেকে ৩৮তম বিসিএসে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ১৭৯ জন বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশকৃত হন। কোটা বাতিলের পর ৩৯তম বিসিএসে বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর ২৪ জন সুপারিশ পেয়েছেন এবং ৪০ ও ৪১তম বিসিএসে সুপারিশ পেয়েছেন মাত্র দুইজন।
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন রিপোর্ট-২০২০ অনুসারে ৩৫-৩৯তম ৫টি বিসিএস পরীক্ষার পরিসংখ্যান অনুযায়ী মোট ১৪ হাজার ৮১৩ নিয়োগপ্রাপ্তের মধ্যে মেধায় ৬৬ দশমিক ২ শতাংশ, জেলা কোটায় ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ, নারী কোটায় ৯ দশমিক ৬ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮ দশমিক ৭ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটায় ০.৮৮ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী কোটায় ০.১১ শতাংশ নিয়োগ হয়। এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে, কোটার শূণ্য পদে মেধা তালিকা থেকে পূরণ করার কারণে কোটা থাকা অবস্থাতেও প্রতি বিসিএসে ৬৬ দশমিক ২ শতাংশ নিয়োগ হয়েছে মেধার ভিত্তিতে।
এদিকে বিসিএসে আবেদন করার সময় কোন কোটা নেই। সর্বশেষ ৪৩তম বিসিএসে ৪ লাখ ৪২ হাজার আবেদনকারীর মধ্যে প্রিলি পাস করে মাত্র ১৫ হাজার ২২৯ জন লিখিত পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হন। লিখিত পরীক্ষাতেও কোনো কোটা নেই। এখান থেকে ৯ হাজার ৮৪০ জন উত্তীর্ণ হন ভাইভার জন্য। ভাইভাতেও কোন কোটা নেই। ভাইভায় উত্তীর্ণদের মধ্যে থেকে ২ হাজার ১৬৩ জনকে ক্যাডার সুপারিশ করা হবে। অর্থাৎ যদি কোটা থাকতো তাহলে প্রিলি, লিখিত ও ভাইভা প্রতিটি ধাপে পৃথকভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পর কোটার প্রসঙ্গ আসতো। সুতরাং এখানে মেধাবীদের মধ্যে থেকেই অধিক মেধাবীরা নিয়োগ পেতেন এবং কোটা কোনভাবেই তাদের মেধার বিস্তর ফারাক করে দিত না।
সর্বোপরি, যেখানে সরকারি চাকরির প্রতিটি পরীক্ষাতেই একজন পরীক্ষার্থীকে প্রিলি, লিখিত ও ভাইভা প্রতিটি ধাপ পার হয়ে আসতে হয় তাই ‘কোটা না মেধা’ স্লোগানটি একটি ভিত্তিহীন, কল্পনাপ্রসূত এবং উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা। এখানে মেধার বিপরীতে মেধার প্রতিযোগিতায় সমাজের অনগ্রসর অংশকে কিছুটা এগিয়ে দেওয়া হয়, যা পুরোপুরি ন্যায় এবং সংবিধানসম্মত।
জনদুর্ভোগ
আদালতের চূড়ান্ত রায় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে, আদালতে বিচারিক প্রক্রিয়ায় পক্ষভুক্ত হয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে না ধরে তথাকথিত আন্দোলনের নামে প্রকৃতপক্ষে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রা ব্যাহত করার প্রচেষ্টা চলছে, যা কোনোমতেই যৌক্তিক কোনো পদক্ষেপ নয়। এই আন্দোলনের কারণে চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে, হাসপাতালে রোগীদের যাতায়াত সম্ভব হচ্ছে না, জরুরি রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনীয় সম্পদ যেমন তেল, গ্যাস, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহন দুরূহ হয়ে উঠছে, কর্মজীবী-শ্রমজীবী মানুষের যীবনযাত্রা অচল হয়ে যাচ্ছে। আন্দোলন-আন্দোলন খেলা ও হিরোইজম প্রদর্শনের এই নিম্ন মানসিকতা এদেশের শিক্ষিত তারুণ সমাজের প্রতি সাধারণের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।
এমতাবস্থায় কোটা বাতিল বা সংস্কারের জন্য দেশব্যাপী যে আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে সে সম্পর্কে পুন:ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে। কোটা সংক্রান্ত বিষয়টির সংবেদনশীলতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল হবার পরও একথা বিবেচনাধীন যে, আন্দোলনকারীরা সমাজ ও দেশ হতে বিচ্ছিন্ন কেউ নয়। নিজেদের দাবি ও সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ চিন্তার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টিও তারা কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না। বিষয়টি এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যেন, সাধারণ জনগণ বনাম শিক্ষার্থী এমন একটি অবস্থা দাঁড়িয়ে গেছে।
আন্দোলনকারীদের প্রতি আহ্বান
বিদ্যমান প্রতিটি বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মনে করে যে, কোটা ব্যবস্থার একটি যৌক্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধান ও সংস্কার আনয়ন করা এই মুহুর্তে সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কোন হঠকারিতা নয়, তাড়াহুড়ো নয়, কোন অবরোধ বা জিম্মি পরিস্থিতি তৈরি করে ‘স্পট ডিসিশন’ গ্রহণ করা নয়। কোটা ব্যবস্থার সময়োপযোগী সংস্কার আনয়নের জন্য একটি সমন্বিত রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের মাধ্যমে আলোচনা সাপেক্ষে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রকাঠামোর প্রেক্ষিতে একটি যৌক্তিক, স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। এমন উদ্যোগে এদেশের ছাত্রসমাজ, তরুণ প্রজন্ম তাদের মেধা-মনন দিয়ে একটি উপযুক্ত ব্যবস্থা প্রণয়নে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু কোন সমন্বিত উদ্যোগের পথে না হেঁটে, এমনকি আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা না করেই কেন এই অনিঃশেষ আন্দোলন?
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করেছে, বর্তমানে যা বিচারাধীন বিষয়। একটি বিষয় যখন আদালতের গন্ডিতে প্রবেশ করে তখন তার সমাধান আইনের কাঠামোতেই হতে হয় এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় সময় অপেক্ষা করতে হয়। এ কথা কি আন্দোলনকারীরা জানে না? পাশাপাশি হাইকোর্টের পৃথক আরেকটি রায়ে যখন স্ট্যাটাস কো অবস্থা জারি করে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে সেহেতু আইনের পরবর্তী ধাপগুলো পর্যন্ত অপেক্ষা না করে কেন জনসাধারণ বিরোধী এই অবরোধ অব্যাহত রাখতে হবে তা এদেশের ছাত্রসমাজ, জনসাধারণ জানতে চায়।
একইসাথে দেশের আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কেও আন্দোলনকারীদের জানতে হবে, মানতে হবে। রাষ্ট্র ব্যবস্থার পৃথক তিনটি কাঠামো আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগ। প্রতিটি বিভাগ পৃথক ও স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং একটি অন্যটির কাজে হস্তক্ষেপ করে না। কোটা বাতিলের নির্বাহী আদেশ যেহেতু বিচার বিভাগ থেকে বাতিল করা হয়েছে সেহেতু আদালতে এটির কার্যক্রম শেষ হবার পরই কেবল আইন ও নির্বাহী বিভাগ নতুন করে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং ততোদিন অপেক্ষা করতে হবে। রাষ্ট্র কাঠামোর এই মৌলিক বিষয় না বুঝে জনগণকে জিম্মি করা অব্যাহত থাকলে আন্দোলনকারীদের এটিও মনে রাখা দরকার যে, এদেশের আইন বিভাগ সার্বভৌম, বিচার বিভাগ স্বাধীন এবং নির্বাহী বিভাগ জনগণের ভোটে প্রতিষ্ঠিত। তাই কোন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আন্দোলনের কাছে রাষ্ট্র কখনোই নতি শিকার করতে পারে না।
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশের শিক্ষার্থী সমাজের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে যে-
১. আন্দোলনের নামে অনিঃশেষ অবরোধ কার্যক্রম পরিচালনা কোনোভাবেই দাবির সুষ্ঠু সমাধান নিয়ে আসতে পারে না।
২. চলমান এইচএসসি পরীক্ষা, তীব্র তাপদাহ, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি এবং মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সড়ক অবরোধ, নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি এবং ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি থেকে তাদের অবিলম্বে ফিরে আসতে হবে।
৩. শিক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে, উচ্চ আদালতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের সিদ্ধান্ত মধ্যবর্তী সময়ের জন্য পুনর্বহাল হয়েছে। তাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে স্বাভাবিক আইনগত প্রক্রিয়ায় কোটা সংক্রান্ত জটিলতার যৌক্তিক সমাধান নিয়ে আসার জন্য শিক্ষার্থীদের সব রকম বিশৃঙ্খলাপূর্ণ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. কোটা-সংক্রান্ত বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন এবং কেউই দেশের প্রচলিত আইনের উর্ধে নয় বিধায় আইনি প্রক্রিয়াতেই এর চুড়ান্ত, স্থায়ী, যৌক্তিক ও অন্তরভুক্তিমূলক সমাধানের দিকে এগুতে হবে।
৫. এ ক্ষেত্রে দেশের শিক্ষার্থী সমাজের নির্ভরতার প্রতীক, তারুণ্যের স্বপ্ন পূরণের ঠিকানা দেশরত্ন শেখ হাসিনা তাদের পাশে রয়েছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাদের পাশে রয়েছে।
পরিশেষে
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে দেশের শিক্ষার্থী সমাজের পাশে অবস্থান করছে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সাথে আলোচনাসাপেক্ষে সমস্যার গভীরে গিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাৎক্ষণিক সমাধান নয় বরং বিচার বিভাগীয় পর্যবেক্ষণের আলোকে সাংবিধানিক অনুশাসন অক্ষুণ্ন রেখে, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রতি দায়বদ্ধতাকে বিবেচনায় নিয়ে, জেন্ডার সমতা নিশ্চিতকল্পে, প্রান্তিক ও নিম্নবর্গীয় মানুষের প্রতি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের আলোকে যৌক্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থায়ী, যুগোপযোগী, ইতিবাচক সমাধান নিয়ে আসার জন্য কাজ করছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
একইসাথে আদালতের প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জানাচ্ছে যে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতীক উচ্চ আদালত এদেশের মহান সংবিধানে উল্লেখিত সুযোগের সমতা নিশ্চিতকল্পে অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিদ্যমান বাস্তবতায় কোটা নিয়ে এমন একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে যাতে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ সন্তুষ্ট হবে, দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
সুতরাং, আন্দোলনের নামে দেশের শিক্ষার্থী সাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে জিম্মি করে, জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে, দেশরত্ব শেখ হাসিনা পরিকল্পিত স্মার্ট বাংলাদেশ অভিমুখে অগ্রযাত্রা ব্যাহত করার যেকোন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে দেশের ছাত্রসমাজকে সাথে নিয়ে এক্যবদ্ধ লড়াই অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
মন্তব্য করুন