• ঢাকা মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২ আশ্বিন ১৪৩১
logo

বার্তাসংস্থা এএফপিকে

শেখ হাসিনার ‘আয়নাঘর’ নিয়ে যা জানালেন ব্যারিস্টার আরমান

আরটিভি নিউজ

  ১৪ আগস্ট ২০২৪, ১৭:৪৮
ছবি: সংগৃহীত

শেখ হাসিনার পতনের পর ‘আয়নাঘর’ আবার আলোচনায় উঠে এসেছে। সেখান থেকে ইতোপূর্বে তিনজন বন্দি মুক্তি পেয়েছেন। ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত সেই কুঠুরিতে বছরের পর বছর মানুষকে আটকে রেখে ভয়ংকর নিষ্ঠুর নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে।

ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে সোমবার (৫ আগস্ট) পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দীর্ঘ আট বছর পর গোপন কারাগার থেকে বের করে নিয়ে আসা হয় জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাশেম আলীর ছেলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আরমানকে। ঢাকার উপকণ্ঠের একটি কর্দমাক্ত জায়গায় গাড়ি থেকে জীবিত অবস্থায় ফেলে দেওয়া হয় তাকে।

চোখ বাঁধা, হাতে হ্যান্ডকাফ- কী হয় এ নিয়ে বেশ আতঙ্কে ছিলেন তিনি। তখনও ব্যারিস্টার আরমান জানতেন না শিক্ষার্থীদের গণবিপ্লবের কারণে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। আর যেই গণবিপ্লবের পরই তিনি আট বছরের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

বার্তাসংস্থা এএফপিকে ব্যারিস্টার আরমান বলেছেন, আট বছরের মধ্যে সেবারই আমি প্রথম মুক্ত বাতাস পাই। আমি ভেবেছিলাম তারা আমাকে মেরে ফেলবে।

ব্যারিস্টার আরমানকে দীর্ঘ আট বছর বন্দি করে রেখেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তিনি গণবিপ্লবের মুখে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ওই গণবিপ্লবের মুখে তার দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের আকস্মিক সমাপ্তি ঘটে। যার মধ্যে ছিল গণগ্রেপ্তার এবং তার বিরোধীদের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।

ব্যারিস্টার আরমানকে আটকে রাখা হয়েছিল একটি গোপন কারাগারে। এই কারাগারে যারা থাকেন সেখানে তারা নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দেখতে পান না। মীর কাশেমের ছেলে ব্যারিস্টার আরমানকে আটকে রাখা হয়েছিল জানালাবিহীন একটি ঘরে।

তিনি জানিয়েছেন, গোপন এ কারাগারের রক্ষীরা সারাক্ষণ উচ্চ শব্দে গান ছেড়ে রাখত। এজন্য আজান শুনতেন না এবং বুঝতে পারতেন না কখন কোন নামাজের সময় হয়েছে। এ ছাড়া কত সময় আটকে আছেন সেটিও বোঝার উপায় ছিল না।

কিন্তু যখন গানের শব্দ বন্ধ হত তখন বুঝতে পারতেন এ কারাগারে তিনি একা নন, আরও অনেকে আছেন। কারণ, তিনি অন্যদের চিৎকার ও কান্নাকাটির শব্দ শুনতে পেতেন।

গত বছর হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছিল ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর নিরাপত্তা বাহিনী ৬০০টিরও বেশি গুমের ঘটনা ঘটিয়েছে।

গোপন কারাগারের কথা প্রথমে প্রকাশ্যে আসে ২০২২ সালে। ওই বছর এক হুইসেলব্লোয়ার এ ব্যাপারে তথ্য দেন। কিন্তু হাসিনার সরকার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি যেসব ব্যক্তিকে গুম করার অভিযোগ উঠেছিল তাদের অনেকে সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে মারা গেছে বলেও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছিল তারা।

ব্যারিস্টার আরমান আরও জানিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ফাঁসি হওয়া তার বাবাকে ফাঁসি দেওয়ার কয়েক দিন আগে তাকে গুম করা হয়। ওই সময় তিনি তার বাবার পক্ষে আইনি লড়াই করছিলেন। মিডিয়ায় প্রকাশ্যে বিভিন্ন কথা বলছিলেন। তার বাবার বিচার নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ করছিলেন। কিন্তু তিনি জানতেন না এসব করার জন্য তাকে টার্গেট করা হতে পারে।

‘একদিন রাতে তারা আমার বাড়িতে হানা দেয়। আমি কোনোদিন ভাবতেও পারিনি আমার বাবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের কয়েক দিন আগে আমাকে গুম করা হতে পারে। আমি তাদের বলতে থাকি, আপনারা জানেন আমি কে? আমাকে আমার মামলা চালিয়ে যেতে হবে। পরিবারের পাশে থাকতে হবে।’

তাকে গুম করার চার সপ্তাহ পর মীর কাশেম আলীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করা হয়। কিন্তু তিনি তা জানতে পারেন তিন বছর পর। কারাগারের এক রক্ষী ভুলক্রমে তাকে জানিয়ে দেন তার বাবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

নিজের মুক্ত জীবনের জন্য শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন ব্যারিস্টার আরমান। তিনি বলেছেন, পুরো বিষয়টি সম্ভব হয়েছে কিছু তরুণের মাধ্যমে। যখন আমি এসব শিশু, বাচ্চাদের দেখি। আমি সত্যিই আশা দেখি এটি একটি সুযোগ হবে যেখানে বাংলাদেশ নতুন দিক খুঁজে পাবে।

হাসিনা সরকার ব্যারিস্টার আরমানকে শুধু গুম করেনি। তার পরিবার যেন গুমের ব্যাপারে কোনো কথা না বলে সে ব্যাপারে প্রতি বছর সতর্ক করে দেওয়া হতো।

মন্তব্য করুন

Radhuni
  • রাজনীতি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
অবশেষে মমতার সঙ্গে বৈঠক করলেন আন্দোলনকারীরা
৮৫০ বছর আগে লক্ষ্মণ সেন পালিয়েছিল, আপনিও পালালেন: জামায়াত আমির
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান গ্রেপ্তার
সোনারগাঁয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাসহ ১৭৯ জনের নামে মামলা