চোখে প্রতিনিয়ত ভাই-বোনের রক্তাক্ত লাশগুলো ভাসে: সারজিস
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ সুন্দর একটা অবস্থায় পৌঁছালেও চোখের সামনে প্রতিনয়ত বৈষম্যবরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া ভাই-বোনদের রক্তাক্ত লাশগুলো ভাসে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত প্রীতি সমাবেশে এ মন্তব্য করেন তিনি।
অনেকেই জুলাই-আগস্টের ত্যাগের কথা ভুলে গেছেন উল্লেখ করে সারজিস বলেন, দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এখন আমরা বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষই এসব বিষয় ভুলে গিয়েছি। সেজন্য এই দেশে এখনও একজন খুনির নাম নিয়ে মিছিল হয়, স্লোগান হয় এবং দেয়াল লিখন হয়। মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমাদের বিবেকবোধ একেবারে ন্যূনতম পর্যায়ে চলে গেছে।
তিনি বলেন, দেশ আজ একটি সুন্দর অবস্থায় পৌঁছালেও চোখের সামনে সবসময়ই আমাদের ভাই-বোনদের রক্তাক্ত লাশগুলো ভাসতে থাকে। আমরা প্রতি সপ্তাহেই দেশের বিভিন্ন বিভাগে যাই। সেখানে প্রায়ই শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয়। দীর্ঘ সাড়ে চার মাস পার হলেও এখনও শহিদদের গর্বিত বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের লাশগুলো দেখান, বুলেটের ছবি দেখান। তখন মনে হয়, আমরা এখনও ১৮, ১৯, ২০ জুলাই এবং আগস্ট ৩, ৪, ৫ তারিখেই রয়েছি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক বলেন, গত ১৬ বছর ধরে উত্তরের জনপদের মানুষ বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে আমাদের যে জায়গায় পৌঁছানোর কথা ছিল, তার সামান্যও পূরণ হয়নি। গোপালী কোটা, পরিবার কোটা, আত্মীয়-স্বজন কোটা, তেলবাজি কোটা, লীগ কোটাসহ অসংখ্য কোটা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আর উত্তরবঙ্গের মানুষেরা শোষণের শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে তার বাড়ি অভিমুখে যে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করেছেন সেটির বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু, তিনি ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ অভিমুখে চার লেনের রাস্তার কার্যক্রম এক যুগ আগে শুরু করেছিলেন। এখন পর্যন্ত সেই কাজ শেষ হয়নি।
সারজিস আলম আরও বলেন, দক্ষিণের একটি পৌরসভা যে বাজেট পেয়েছে, উত্তরবঙ্গের একটি জেলা সে পরিমাণ বাজেট পায়নি অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে। একটা পরিবারের সদস্যদের নামে, তার আত্মীয়স্বজনের নামে এমনকি ওই পরিবারের শ্বশুর-শাশুড়ির নামেও অসংখ্য ইনস্টিটিউট হয়েছে। কিন্তু পুরো উত্তরের জনপদে তিনটি প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় নেই। একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নেই। কোনো একটি ইকোনমিক জোন (অর্থনৈতিক অঞ্চল) করা হয়নি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফোরামের সভাপতি মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রপতির সাবেক সামরিক সচিব লে. জে. (অব) ড. আমিনুল করিম রুমী। সঙ্গে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদেক কায়েম।
আরটিভি/এসএইচএম/এআর
মন্তব্য করুন