কিছু কিছু মৃত্যু সত্যিই অত্যন্ত কষ্টের, বেদনার: প্রধানমন্ত্রী
সত্যিই আমাদের দুর্ভাগ্য, মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে বর্তমান সংসদের চারজন সংসদ সদস্য মারা গেলেন। মানুষ জন্ম নিলে মৃত্যু অবধারিত। কিন্তু কিছু কিছু মৃত্যু সত্যিই অত্যন্ত কষ্টের, বেদনার। প্রয়াত সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের কর্মজীবনে সততা, নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও দেশপ্রেম ছিল অসামান্য। হঠাৎ করেই এত তাড়াতাড়ি তিনি এভাবে চলে যাবেন, তা কখনও ভাবতেও পারিনি।
বললেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুতে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ সব কথা বলেন।
আবেগজড়িত কণ্ঠে এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, এবারের সংসদের দুর্ভাগ্য পরপর চারজন সংসদ সদস্য ডা. ইউনুস আলী সরকার, ডা. মোজাম্মেল হক, আবদুল মান্নান এবং সবশেষ আজ (মঙ্গলবার) ইসমাত আরা সাদেক মারা গেলেন। ইসমাত আরা সাদেক অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সব কাজ করতেন। তার সবচেয়ে বড় গুণ ছিল সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতা, দেশপ্রেমও ছিল অসামান্য।
শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন তোফায়েল আহমেদ, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, সরকারি দলের কাজী নাবিল আহমেদ, ওয়াশিকা আয়েশা খান, আ ক ম সারোয়ার জাহান ও জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান।
আলোচনা শেষে শোক প্রস্তাবটি সর্বসম্মতক্রমে গৃহীত হয়। পরে প্রয়াত সংসদ সদস্য ইসমাত আরা সাদেকের রুহের মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন এবং মোনাজাত শেষে রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদের বাকি কার্যক্রম স্থগিত রেখে সংসদের অধিবেশন বুধবার বিকাল সোয়া চারটা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। মোনাজাত পরিচালনা করেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী।
শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জন্ম নিলে মৃত্যু অবধারিত। কিন্তু সেই মৃত্যু এমন সময় হয়, সেটা সত্যি খুব কষ্টকর। মিসেস সাদেক আসলে একজন গৃহিণী ছিলেন। বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে জড়িত থাকলেও কখনও রাজনীতিতে খুব সক্রিয় ছিলেন না। তার স্বামী প্রয়াত এএসএইচকে সাদেক যখন ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগ যোগদান করেন। ১৯৯৬ সালে যখন প্রথম সরকার গঠন করি, তখন প্রয়াত ইসমাত আরা সাদেকের স্বামী এএসএইচকে সাদেককে মন্ত্রী বানিয়েছিলাম। শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে তিনি অনেক কাজ করে গেছেন। ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস করা, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট করার জন্য গঠিত কমিটিও তারই নেতৃত্বে ছিল। মন্ত্রী সাদেক ওই কমিটির সভাপতি হিসেবে বারবার ভিয়েনাতে গেছেন, প্ল্যান্টের অনেক কাজ তিনি করে গিয়েছেন। এ ছাড়া সুন্দরবনকে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণার ক্ষেত্রেও তার যথেষ্ট অবদান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষামন্ত্রী সাদেকের মৃত্যুর পর মিসেস সাদেককে যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুরোধ করলাম, তখন প্রথমে তিনি ঘাবড়ে গিয়ে বলেছিলেন, আমি এটা করতে পারব? আমি বলেছিলাম, আপনি পারবেন। ওই নির্বাচন করে জিতে আসার পর প্রথমে তাকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিলাম। তখন প্রয়াত ইসমাত আরা সাদেক বললেন, আমি তো কখনও এভাবে অফিস চালাইনি, কখনও কিছু করিনি, আমি তো গৃহিণী ছিলাম। আমি কিভাবে করব? আমি বলেছিলাম, যেহেতু আপনি শিক্ষিত মহিলা, আমি আছি আপনার সঙ্গে, কোনো চিন্তা নেই। যখন যা দরকার হবে আপনি বলবেন, আর আপনি পারবেন এটা আমার বিশ্বাস। এরপর প্রতিটি কাজ অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সততার সঙ্গে করে গেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর ইসমাত আরা সাদেককে জনপ্রশাসনের দায়িত্ব দিলাম। তখনও তিনি দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলেন। প্রতি সপ্তাহে তার সঙ্গে বসতাম। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি কাজ করতেন। প্রতিটি কাজে তার সততা ও একাগ্রতা ছিল অসামান্য।
তিনি বলেন, মাত্র এক সপ্তাহ আগে আমার সঙ্গে দেখা করে মিসেস সাদেক আমাকে বললেন- শরীরটা খুব খারাপ। অপারেশন করতে হবে। তখন তাকে পরামর্শ দিয়ে বলেছিলাম- অপারেশনের আগে দ্বিতীয় অভিমত নিন। অনেকক্ষণ কথা হলো। কিন্তু উনি আজ আর নেই। কেশবপুরের উন্নয়নে তিনি অনেক কাজ করে গেছেন। তাকে ভুগতে হলো না।কিন্তু তিনি এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন ভাবতেও পারিনি।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ইসমাত আরা সাদেক অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তার স্বামী প্রয়াত শিক্ষামন্ত্রী এএসএইচকে সাদেকও ছিলেন অত্যন্ত উচ্চশিক্ষিত ও অভিজাত পরিবারের সদস্য। আমাদেরও চলে যেতে হবে। কিন্তু পরপর আমাদের কয়েকজন সংসদ সদস্য মারা গেলেন। এটা অত্যন্ত কষ্টের ও বেদনার।
এসজে/পি
মন্তব্য করুন