ঢাকামঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

ঋণের টাকায় বিদেশ পাড়ি দিয়ে শেষ সম্বল হারাচ্ছেন প্রবাসীরা

আরটিভি নিউজ

রোববার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ , ১১:২৩ পিএম


loading/img
ঋণের টাকায় বিদেশ পাড়ি দিয়ে শেষ সম্বল হারাচ্ছেন প্রবাসীরা

দেশের মাটিতে নিজের ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে ব্যর্থ হয়ে অনেকেই ঋণের টাকায় (নিয়োগ ব্যয় মেটানো) বিদেশে পাড়ি জমান। ঋণের টাকায় বিদেশে পাড়ি দিয়ে প্রবাসীদের অনেকে আবার বেকায়দায় পড়েন। এতে ঋণ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় প্রবাসীদের শেষ সম্বল সম্পত্তি বা জামানতের মালিকানা হারাতে হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

প্রবাসীদের নিয়ে বিবিএসের একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে, পুরুষ প্রবাসী কর্মীদের মধ্যে যারা নিয়োগ ব্যয় মেটানোর জন্য ঋণ করেছিলেন তাদের প্রায় ১২ দশমিক ৫ শতাংশ কর্মী ঋণ করা অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে জামানতের মালিকানা হারিয়েছেন। নারী কর্মীর ক্ষেত্রে জামানতের মালিকানা হারানোর হার তুলনামূলকভাবে বেশি, যা ১৬ শতাংশ। সার্বিকভাবে ১২ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবাসী ঋণ ফেরত দিতে না পারায় জামানত হারিয়েছেন। নষ্ট হয়ে পৈত্রিক ভিটা ও আবাদি জমি।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রথমবারের মতো অভিবাসন ব্যয় জরিপ, বাংলাদেশ ২০২০ পরিচালনা করেছে। অতি সম্প্রতি জরিপটি বিবিএস প্রকাশ করেছে, সেখান থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

জরিপের তথ্যানুযায়ী, বন্ধু-আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ঋণ করেছেন ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ, পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে ২৮ দশমিক ২ শতাংশ, এনজিও থেকে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ, মহাজনের কাছ থেকে ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং জমি-বন্ধক ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ। পুরুষ কর্মীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৮১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং নারী কর্মীদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ ঋণ করেছেন।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) থেকে সংগৃহীত প্রবাসীদের তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করে নমুনা কাঠামো প্রস্তুত করা হয়েছে জরিপে। নমুনা উত্তরদাতা ছিল আট হাজারটি প্রবাসী পরিবার। এতে একটি দু-স্তরবিশিষ্ট স্তরিত গুচ্ছ নমুনায়ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ সময়ে কম্পিউটারের সাহায্যে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

জরিপে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়া শ্রম প্রবাসীর সংখ্যার ভিত্তিতে গন্তব্যের দেশগুলোকে মোট ছয়টি প্রধান দেশ শনাক্ত করা হয়েছে। প্রধান গন্তব্য দেশগুলো হলো- সৌদি আরব, ওমান, মালয়েশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর ও অন্যান্য দেশ।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাতীয় পর্যায়ে গড় নিয়োগ ব্যয় ৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা। পুরুষ অভিবাসী কর্মীর গড় নিয়োগ ব্যয় ৪ লাখ ৭১ হাজার এবং নারী অভিবাসী কর্মীদের গড় নিয়োগ ব্যয় মাত্র ১ লাখ টাকা। অর্থাৎ, পুরুষ প্রবাসী কর্মীর নিয়োগ ব্যয় নারী প্রবাসী কর্মীর নিয়োগ ব্যয়ের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি।

প্রবাসী কর্মীদের মাসিক গড় আয় ২৫ হাজার ৬৯৩ টাকা। তার মধ্যে পুরুষ প্রবাসী কর্মীদের মাসিক গড় আয় ২৪ হাজার ৬৭৩ টাকা এবং নারী প্রবাসী কর্মীদের ১৮ হাজার ৩৩ টাকা। দক্ষ প্রবাসী কর্মীদের মাসিক গড় আয় সর্বোচ্চ ২৯ হাজার ৪৭৭ টাকা, অদক্ষ কর্মীদের ২৩ হাজার ৬২৯ টাকা এবং গৃহকর্মীদের ১৬ হাজার ৬৭৮ টাকা।

সিঙ্গাপুরে প্রবাসী কর্মীদের মাসিক গড় আয় সর্বোচ্চ ৩৮ হাজার ১২৯ টাকা, অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের মাসিক গড় আয় ২৬ হাজার ৬১ টাকা, মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে ২৩ হাজার ৮৯৬ টাকা, কাতারের ক্ষেত্রে ২২ হাজার ২৯৩ টাকা, সৌদি আরবের ক্ষেত্রে ২২ হাজার ১৪০ টাকা এবং ওমানে প্রবাসী কর্মীদের মাসিক গড় আয় ১৯ হাজার ১৭৭ টাকা।

আরও পড়ুন...
পুকুরে মুক্তা চাষে সাফল্য পেতে যাচ্ছে তারেক 

প্রবাসীদের মধ্যে ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ কোনো সাপ্তাহিক ছুটি ভোগ করতে পারেন না। এ হার সবচেয়ে বেশি সৌদি আরবে। সেখানে সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবাসী কর্মী কোনো সাপ্তাহিক ছুটি ভোগ করতে পারেন না। সবচেয়ে কম সিঙ্গাপুরে, সেখানকার ৭ দশমিক ১ শতাংশ প্রবাসী কর্মী কোনো সাপ্তাহিক ছুটি ভোগ করতে পারেন না।

বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী প্রবাসী কর্মীদের নিয়োগ ব্যয়ের সমপরিমাণ অর্থ পুনরুদ্ধার করতে সবচেয়ে বেশি সময় লাগে, তারপর ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের। ৩৫ থেকে ৪৪, ৪৫ থেকে ৫৪ এবং ৫৫ বছর বয়সীদের জাতীয় গড় সময়ের তুলনায় কম সময় লাগে।

জরিপে প্রবাসী কর্মীদের বাংলাদেশে ফেরত আসার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অবকাশ সময় অথবা ছুটিজনিত কারণে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরত এসেছে ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ, সৌদি থেকে ২৯ দশমিক ৩, মালয়েশিয়া থেকে ২৭ দশমিক ৫, কাতার থেকে ২১ দশমিক ২ শতাংশ এবং অন্যান্য দেশ থেকে ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবাসী কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন।

দক্ষ প্রত্যাবর্তনকারীদের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৮ শতাংশ পুনরায় একই গন্তব্য দেশে কিংবা অন্য কোনো দেশে প্রবাসী কর্মী হিসেবে ফেরত যেতে ইচ্ছুক। অদক্ষ প্রত্যাবর্তনকারীদের মধ্যে ৬৭ দশমিক ৭ শতাংশ এবং গৃহকর্মী হিসেবে প্রত্যাবর্তনকারীদের মধ্যে ৪২ দশমিক ২ শতাংশ পুনরায় প্রবাসী কর্মী হিসেবে ফেরত যেতে ইচ্ছুক।

এফএ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |