‘লুমাযাহ’ আল্লাহর কাছে এক ভয়াবহ অপরাধ!

আশিকুর রহমান

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫ , ০৮:০০ পিএম


‘লুমাযাহ’ আল্লাহর কাছে এক ভয়াবহ অপরাধ!
প্রতীকী ছবি

আমাদের আশপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা সরাসরি কাউকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলে অপমান করতে পছন্দ করেন। আবার বুক ফুলিয়ে বলেন, ‘আমি উচিৎ কথা বলতে কাউকে ছাড়ি না! আমি উচিৎ কথা মুখের ওপর বলে দেই!’ সরাসরি কাউকে লাঞ্ছিত করার পর এটা নিয়ে তারা বেশ গর্বও করেন! পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা এই মানুষগুলোকেই লুমাযাহ বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি! 

বিজ্ঞাপন

এসব ঠোঁটকাটা স্বভাবের লোকদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা হুমাযার ১ম আয়াতে বলেন, ‌‘ওয়াইলুলিলকুল্লি হুমাঝাতিল লুমাযাহ’। অর্থ: ‘দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে’। উক্ত আয়াতে উল্লেখিত ‘হুমাযাহ’ হচ্ছে কারও পেছনে কথা লাগানো বা গীবত করা। আর ‘লুমাযাহ’ হচ্ছে কাউকে সামনাসামনি দোষ ধরে অপমান করা, বাজে আচরণ করা। 

হযরত কাতাদাহ (রহঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলো মুখের ভাষায় এবং চোখের ইশারায় আল্লাহর বান্দাদেরকে কষ্ট দেওয়া (তাফসীরে ইবনে কাসির)। বর্তমান সমাজে গীবত এবং কাউকে তাচ্ছিল্য ভরে কোনকিছু বলাটা মহামারী আকার ধারণ করেছে। অথচ মহান আল্লাহ তায়ালা এই মানুষদেরকে পরিবর্তন হতে বলেছেন সূরা হুমাজাহতে। নয়তো তাদের জন্য ভয়ংকর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। তা হলো আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত হুতাশন। যা হৃদয়কে গ্রাস করবে। জ্বালিয়ে তাদেরকে ভষ্ম করে দেবে, কিন্তু তারা মৃত্যুবরণ করবেনা।

বিজ্ঞাপন

প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদও (সাঃ) ‘লুমাযাহ’ সম্পর্কে একাধিক হাদিস বর্ণনা করেছেন। যেমন, হযরত আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। আর মুমিন সেই ব্যক্তি, যাকে মানুষ তাদের জান ও মাল সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিরাপদ বলে মনে করে। (তিরমিযী ও নাসায়ী)

অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আসমা বিনতে ইয়াযীদ (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের মধ্যকার উৎকৃষ্ট লোকদের সম্পর্কে অবহিত করব না? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, যাদের দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। তিনি আরও বলেন, আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের মধ্যকার নিকৃষ্ট লোকদের সম্পর্কে অবহিত করব না? তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, যারা চোগলখুরী করে বেড়ায়, বন্ধুদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করে এবং পুণ্যবান লোকদের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়ায়’।[আহমাদ হা/২৭৬৪২] 

তিরমিজি শরীফে এ সম্পর্কিত আরেকটি হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ‘যে বা যারা দুই ঠোঁটের মাঝখান ও দুই পায়ের মাঝখানের নিরাপত্তা দিতে পারবে আমি তাদের জান্নাতে নিরাপত্তা দেব।’

বিজ্ঞাপন

সুতরাং কুরআন ও হাদিসের আলোকে নিঃসন্দেহে ‘লুমাযাহ’ একটি ভয়ঙ্কর অপরাধ। কুরআনে আল্লাহ রোজা না রাখার জন্য বা হজ্জ না করার জন্য ‘লুমাযাহ’-এর মতো এমন ভয়াবহ শাস্তির বর্ণনা দেননি। এমনকি বেনামাজিদের জন্য তিনি যে বিশেষ আগুন ‘সাক্বর’ তৈরি করেছেন, সেটাকেও তিনি ‘আল্লাহর আগুন’ বলেননি। তাই কথা বলার ক্ষেত্রে নিজেদের সংযত রাখা জরুরি। ইসলামবিরোধী কোনো কাজে জড়িত না থাকলে কাউকে এমন কিছু বলা উচিৎ নয়, যার ফলে সে আঘাত পায়, হৃদয় ভেঙে যায়। অন্যথায় আমরা যতই নামাজি, রোজাদার, টুপি-দাঁড়িওয়ালা হই না কেন, তাহলে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে ‘হুতামাহ’ নামক ভয়ংকর জাহান্নাম।

লেখক: প্রভাষক (ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি), তেরশ্রী ডিগ্রি কলেজ, ঘিওর, মানিকগঞ্জ। ই-মেইল: saad.ashikbd@gmail.com

আরটিভি/আইএম 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission