ঢাকাশুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

পশু জবেহ করার ইসলামী রীতি ও শিষ্টাচার  

আরটিভি নিউজ

বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫ , ০৬:৫৫ পিএম


loading/img
প্রতীকী ছবি

 

বিজ্ঞাপন

কোরবানি শুধু একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি একান্তভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগের প্রকাশ। মুসলিম সমাজে কোরবানির সময় পশু জবেহ একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলেও, অনেকেই এর প্রকৃত নিয়ম ও আদব সম্পর্কে সচেতন নন। অথচ, ইসলাম পশু জবেহের ক্ষেত্রেও এমন সব নিয়ম নির্ধারণ করেছে, যাতে রয়েছে সর্বোচ্চ মানবিকতা ও করুণা।

কোরবানির জবেহের উদ্দেশ্য শুধু মাংস সংগ্রহ নয়, বরং তাকওয়া অর্জন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন—‘আল্লাহর কাছে তাদের মাংস ও রক্ত পৌঁছে না, বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া (সুরা হজ্জ: ৩৭)।’ তাই কোরবানিকে শুধু একটি উৎসব হিসেবে না দেখে, আত্মশুদ্ধির একটি উপায় হিসেবে দেখা জরুরি।

বিজ্ঞাপন

জবেহের ইসলামী পদ্ধতি
১. নিয়ত ও প্রস্তুতি:
জবেহকারীর মুসলমান, সাবালক ও বিবেকবান হওয়া শর্ত। কোরবানির আগে ‘বিসমিল্লাহি, আল্লাহু আকবার’ বলা ফরজ। ইচ্ছাকৃতভাবে বিসমিল্লাহ না বললে মাংস হারাম হয়ে যায়।

২. পশুর প্রতি দয়া:
পশুকে কিবলামুখী করে, শান্তভাবে শুইয়ে দিতে হয়। তার আগে পানি খাওয়ানো ও মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করা উত্তম আদব।

৩. ধারালো ছুরি ব্যবহার:
ছুরি অবশ্যই ধারালো হতে হবে, যাতে পশুকে কম কষ্ট হয়। ইসলাম দৃঢ়ভাবে নিষেধ করেছে ভোঁতা ছুরি ব্যবহার ও পশুকে দীর্ঘ সময় কষ্ট দেওয়ার বিষয়টি।

বিজ্ঞাপন

৪. সঠিকভাবে গলা কাটা:
জবেহের সময় পশুর খাদ্যনালি, শ্বাসনালী ও দুই পাশের রক্তনালি—এই চারটি কাটতে হয়। তবে মেরুদণ্ড বা মাথা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা উচিত নয়, যা পশুর জন্য অতিরিক্ত যন্ত্রণা সৃষ্টি করে।

বিজ্ঞাপন

৫. নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া না ছাড়ানো:
পশু সম্পূর্ণ নিস্তেজ হওয়ার আগেই চামড়া ছাড়ানো নিষিদ্ধ। এটি পশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রকাশ করে এবং ইসলামের আদর্শের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

জবেহের সময় কিছু মানবিক আদব বা শিষ্টাচার রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পশুর সামনে ছুরি ধার করা যাবে না, এক পশুর সামনে আরেক পশু জবেহ করা উচিত নয়, পশুকে জোর করে টেনেহিঁচড়ে নেওয়া নিষিদ্ধ, জবেহের সময় দ্রুত ও সাবলীল হওয়া জরুরি।

এই প্রতিটি নির্দেশনা আমাদের শেখায়—একটি প্রাণের জীবনও ইসলামে কতটা গুরুত্বের দাবিদার। কোরবানির মাধ্যমে যেমন আত্মত্যাগের শিক্ষা পাই, তেমনই পশুর সঙ্গে সদ্ব্যবহার আমাদের মানবিকতাকে জাগ্রত করে।

জবেহ মানেই রক্তপাত নয়—বরং এটি এক আত্মিক বন্ধনের নাম। যেখানে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা, নিষ্ঠা, আর সৃষ্টির প্রতি দয়ার প্রকাশ ঘটে। ইসলাম এই প্রক্রিয়াকে করেছে শুচি ও পরিশীলিত, যাতে মানবিকতা ও ধর্মীয় দায়িত্ব একসঙ্গে মিলে যায়।

প্রতি বছর ঈদুল আজহায় কোরবানি আমাদের জীবনে এক নতুন উপলব্ধি আনে—ত্যাগের, সহানুভূতির এবং শুদ্ধতার। তাই আসুন, শুধু নিয়ম মেনে কোরবানি নয়, বরং আদব ও করুণা মেনে তা পালন করি। কারণ ইসলাম কেবল বিধান নয়, এটি একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা—যেখানে প্রতিটি কাজের পেছনে রয়েছে অর্থ, সৌন্দর্য ও শিক্ষা।

আরটিভি/টি

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |