আমরা যা কিছু দেখতে পাই তা মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, প্রায় ৮০ শতাংশ পদার্থ দেখা যায় না, যাদের তারা ‘ডার্ক ম্যাটার’ নামে ডাকেন। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এর অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন, কারণ, আমরা মহাকাশে যা দেখি তা দৃশ্যমান পদার্থের সাথে যোগ হয় না।
ছায়াপথের চারপাশে আলো প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বিচ্যুত হয়, যা ইঙ্গিত দেয় যে, দেখা যায় না এমন অতিরিক্ত ভর, একে প্রভাবিত করছে। আর আমরা যদি শুধু দৃশ্যমান পদার্থের কথা বিবেচনা করি, তাহলে তারারা তাদের ছায়াপথগুলিকে যেভাবে প্রদক্ষিণ করে, তা যুক্তিসঙ্গত মনে হয় না। কিছু একটা নিশ্চয়ই ছায়াপথগুলিকে একত্রে ধরে রেখেছে, অনেকটা অদৃশ্য আঠার মতো - ডার্ক ম্যাটার।
এটি কী দিয়ে তৈরি, তা এখনও এক রহস্য। কিন্তু আমরা এর প্রভাব পরিমাপ করতে পারি। ডার্ক ম্যাটারের মাধ্যাকর্ষণ আলোকে বেঁকিয়ে বাঁকা পথে যেতে বাধ্য করে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একে তাদের সুবিধার্থে ব্যবহার করেন। টেলিস্কোপের সাহায্যে তারা মহাকাশের নির্দিষ্ট অংশ বিশ্লেষণ করে আলো কীভাবে কোটি কোটি বছর ধরে ভ্রমণ করেছে, তা ট্র্যাক করেন।
এটি তাদের কোথায়, কত ডার্ক ম্যাটার আছে, তার মানচিত্র তৈরিতে সাহায্য করে। আগের চেয়ে আরও সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যাওয়ায় মানচিত্রের মানের ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ইউরোপের মহাকাশ টেলিস্কোপ ইউক্লিড আকাশ স্ক্যান করছে। এর উদ্দেশ্য, গত ১০ বিলিয়ন বছর ধরে ডার্ক ম্যাটারের বিস্তারের তালিকা তৈরি করা - অভূতপূর্ব নির্ভুলতার সাথে। তত্ত্ব অনুসারে, ডার্ক ম্যাটার মহাবিশ্বের গঠনকে রূপ দিয়েছে। ডার্ক ম্যাটার যেখানে ঘনীভূত হয়েছিল, সেখানে তার মাধ্যাকর্ষণ সাধারণ পদার্থকে আকর্ষণ করেছিল, যার ফলে তারা, ছায়াপথ এবং বিশাল ছায়াপথের গুচ্ছ তৈরি হয়েছিল।
এখনও পর্যন্ত, ডার্ক ম্যাটার সম্পর্কে আমাদের পরিমাপ এই ধারণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কম্পিউটার সিমুলেশন পরোক্ষ প্রমাণের আরেকটি স্তর যোগ করে। সিমুলেশনের মাধ্যমে কোটি কোটি বছর ধরে ছায়াপথ ও গ্যালাক্সি ক্লাস্টারগুলি কীভাবে বিবর্তিত হয়েছিল, তা মাত্র কয়েক সেকেন্ডে দেখানো যায়। ফলাফল স্পষ্ট: ডার্ক ম্যাটার ছাড়া মহাবিশ্ব দেখতে আজকের মতো হত না।
আরটিভি/এএইচ