পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি বিকল বলে কেউ কেউ রোগীদের ফিরিয়ে দিয়ে অলস সময় পার করছেন। চিকিৎসকরা আসছেন বিলম্ব সময়ে। তালাবদ্ধ ঘরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে সরকারের লাখ লাখ টাকা দামের যন্ত্রপাতি। অসহায় রোগীরা কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এই করুণ চিত্র ভৈরবের ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের।
জানা গেছে, যাতায়াতের সুবিধা থাকায় আশপাশের উপজেলা থেকে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দৈনিক সাত থেকে আটশ’ রোগী স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসেন। এই হিসেবে প্রতি মাসে অন্তত ২৫ হাজার রোগী এখানে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে থাকেন। তবে চিকিৎসক সংকটের কারণে সেবা নেয়া তাদের দ্বারা সম্ভব হয় না।
বর্তমানে হাসপাতালটিতে ২১টি পদের মধ্যে পাঁচটি পদ শূন্য রয়েছে। প্রতিদিন ডেন্টাল, গাইনি, শিশুসহ জরুরি বিভাগে ১৬ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কোনও দিন পাঁচ থেকে সাতজনের বেশি চিকিৎসক হাসপাতালে আসেন না। কিন্তু হাজিরা খাতায় সবারই উপস্থিতির স্বাক্ষর থাকে।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গেল ২০ জানুয়ারি থেকে অপারেশনের যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করণের চারটি অটোক্লেব মেশিন বিকল বলে হাসপাতালের সিজারিয়ান অপারেশনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে দূর থেকে প্রসূতি মায়েরা এসে ফিরে যাচ্ছেন। এছাড়া ২৪ ঘণ্টা রোগীদের সেবা দেয়ার জন্য ডা. কেএনএম জাহাঙ্গীর আবাসিক মেডিকেল অফিসারের দায়িত্বে থাকলেও তিনি হাসপাতালে থাকেন না। অধিকাংশ সময় ব্যয় করেন তার ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রাইভেট হাসপাতাল মেডিল্যাবে।
শুধু তাই নয় হাসপাতালের কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. জালাল উদ্দিন একজন অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক। তিনি হাসপাতালে ডিউটিরত অবস্থায় প্রায়ই চলে যান প্রাইভেট হাসপাতালে এমন অভিযোগও করেন ভুক্তভোগীরা।
এছাড়া গাইনি বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. হরিপদ দেবনাথ ও শিশু বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট মো. দিদারুল ইসলাম হাসপাতালের নির্ধারিত সময় শেষ না হতেই বসেন প্রাইভেট চেম্বারে। শহরের কমলপুরে প্রাইভেট হাসপাতাল ট্রমাতে রয়েছে তাদের চেম্বার।
অন্যদিকে হাসপাতালের পুরুষ, মহিলা ও শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, কর্তৃপক্ষের সঠিক তদারকি না থাকায় বেশ কয়েকটি জানালার কাঁচ ভেঙে পড়েছে। ফলে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। আবার রাতে পর্যাপ্ত আলোর জন্য বৈদ্যুতিক লাইট নেই। বিদ্যুৎ চলে গেলে মোমবাতিই একমাত্র ভরসা। কেননা জরুরি প্রয়োজনের জেনারেটরটিও দুই বছরের বেশি সময় ধরে বিকল রয়েছে।
এক্স-রে মেশিনের কক্ষটিতে কয়েক বছর ধরে তালা ঝুলছে। বছরের পর বছর ধরে একটি এক্স-রে না করেও মাসে মাসে ৫০ হাজারেরও বেশি টাকা বেতন তুলছেন একজন রেডিওলজিস্ট।
এ বিষয়ে কথা বলতে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. কেএনএম জাহাঙ্গীরের অফিস কক্ষে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। সরকারের দেয়া কোয়ার্টারেও থাকেন না তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি ছুটিতে রয়েছেন।
পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. মো. জালাল উদ্দিনের কার্যালয়ে গেলে তাকেও পাওয়া যায়নি। অবশেষে বন্ধ থাকা অপারেশন থিয়েটারে আড্ডারত অবস্থায় দেখা মেলে তার। পরে নিজ অফিস কক্ষে এসে হাসপাতালের এই দুরাবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন আরটিভি অনলাইনকে।
তিনি বলেন, সবাই যার যার দায়িত্ব নিয়ম মতোই পালন করছেন। আর যন্ত্রপাতিতো নষ্ট হতেই পারে। এ বিষয়ে লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার হাসপাতালে থাকেন না এই অভিযোগের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রয়োজনে ১০ মিনিটের মধ্যে আসতে পারবে। এমন দূরত্বে থাকতে পারেন।
তাছাড়া ফোন এলেই চলে যান এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. মো. জালাল উদ্দিন বলেন, অফিস সময় শেষ না হলে তিনি কোথাও যান না।
জেবি/পি