কিংবদন্তি পেলের অবস্থা যে সংকটাপন্ন, তা অবশ্য সবাই-ই জানতেন। কিন্তু ফুটবল মাঠে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের প্রতিরোধ ভেঙে ফুটবল সম্রাট যেভাবে গোল করতেন, একইভাবে তিনি মারণরোগ ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জিতবেন বলে আশা ছিল সমর্থকদের। কিন্তু সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে না-ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন রেকর্ড তিনটি বিশ্বকাপ জেতা একমাত্র ব্রাজিলিয়ান এই আইকন।
বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১টায় সাও পাওলোর অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ফুটবল বিশ্বে ‘কালো মানিক’ খ্যাত পেলে। ৮২ বছর বয়সে ফুটবল সম্রাটের প্রয়াণের খবর শোনার পর থেকেই শোকস্তব্ধ বিশ্বের সব ক্রীড়াঙ্গন। সাও পাওলোর মানুষ তো আপনজনকে হারানোর বেদনায় কাতর হয়ে পড়েছেন।
ফুটবল সম্রাটের প্রয়াণের খবর শোনার পর থেকেই অ্যালবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালের সামনে ভিড় জমতে শুরু করেছিল। সাও পাওলোয় এখন প্রত্যেক দিনই ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। সরকার তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় উপেক্ষা করেই ভক্তরা অপেক্ষায় রয়েছেন প্রিয় নায়কের।
বছরের এই সময়টায় সাও পাওলোর অধিকাংশই বাসিন্দাই ছুটি কাটাতে বেড়াতে চলে যান। নববর্ষ পালন করেই তারা ফেরেন। কিন্তু ফুটবল সম্রাটের প্রয়াণের খবর পাওয়ার পরেই ছবিটা বদলে গিয়েছে। ছুটি বাতিল করে অনেকে ফিরে এসেছেন শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে।
বিভিন্ন গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে, প্যারিস থেকে সাও পাওলোয় আসতে পারেন নেইমার জুনিয়র। এখানেই জন্ম বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা এই তারকার। পেলের মতো তারও উত্থান এই সান্তোসেই। যদিও ক্লাবের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি।
তবে নেইমারের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছে, ফুটবল সম্রাটের প্রয়াণের খবর শোনার পর থেকেই শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন ৩০ বছর বয়সী নেইমার। তাই এই কিংব্দন্তিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তিনি সাও পাওলোয় ফিরতে মরিয়া নেইমার। এদিকে ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোসহ সারা বিশ্বের অসংখ্য গণ্যমান্য অতিথিদের সেখানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন : জেমস-রোনালদোকে ছাড়িয়ে বছরের সর্বোচ্চ আয় মেসির
আগামী সোমবার (২ জানুয়ারি) সকালে পেলের কফিন আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতাল থেকে সান্তোসের ঘরের মাঠ ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে নিয়ে আসা হবে। এই মাঠেই বহু স্মরণীয় গোল করেছিলেন পেলে। তাই স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে তীর্থস্থান সমতুল্য এই মাঠে ব্রাজিলের সাধারণ মানুষ ওইদিন সকাল ১০টা থেকে শেষবারের মতো পেলেকে দেখতে পাবেন এবং পরেরদিন একই সময়ে শেষকৃত্যের যাত্রা শুরু হবে।
পেলের কফিন রাস্তা ধরে বহন করে সান্তোসের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হবে। এ সময় পথিমধ্যে কফিনটি পেলের শতবর্ষী অসুস্থ মা সেলেস্তের বাড়িতেও শেষবারের মতো নেওয়া হবে। নিজবাড়িতে সন্তানের শেষযাত্রায় বিদায় জানাবেন তিনি। এরপর ফুটবল সম্রাটের মরদেহ সান্তোসের সিমেট্রি মেমোরিয়াল নেক্রোপোল ইকুমেনিকায় পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে সমাহিত করা হবে।