অবসর নিতেই হয়, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গে এটি জড়িয়ে রয়েছে। তবে এমন হৃদয়বিদারক বিদায়ও হতে পারে, সেটাই দেখল দেশের ক্রীড়াঙ্গন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের অশ্রুসিক্ত বিদায় যেন অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনাই।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) চট্টগ্রামের হোটেল টাওয়ার ইনে এক সংবাদ সম্মেলনে অবসরের ঘোষণা দেন টাইগারদের ওয়ানডে দলপতি।
সংবাদ সম্মেলনে দেশসেরা এই ওপেনারকে বেশ অপ্রস্তুত দেখা যাচ্ছিল। প্রায় মিনিট দশেক নিজেকে সামলে নেন তিনি। এরপর ভেজা চোখ জোড়া মুছতেও দেখা যায় তাকে।
তবে তামিম কী ভেবেছিলেন এমন বিদায়ই তার জন্য অপেক্ষা করছে; কিংবা দেশের লাল-সবুজের কোনো ভক্তও কী কল্পনা করেছিলেন মিস্টার খানকে এভাবেই বিদায় নিতে হবে।
বিদায় বলাটা সহজ। কারণ, নিতান্তই ছোট একটি শব্দ ‘বিদায়’। কিন্তু অন্তর্নিহিত অর্থে কি আদৌ বিদায় বলতে কিছু রয়েছে! যে বিদায়ে জড়িয়ে থাকে কান্না আর দুঃখবিলাস। তবে মিস্টার ক্যাপ্টেন একাই কি কেঁদেছেন না। না, কখনোই না। তিনি দেশের প্রতিটি লাল-সবুজের সমর্থককে ডুবিয়েছেন অশ্রুসিক্ততায়।
লাল-সবুজের যে ভক্তটি চট্টগ্রামের এই ক্রিকেটারের সমালোচনায় বিভোর ছিল। তার ঠোটেও এখন তামিম বন্দনা। তাদের ভাষ্য, ‘ক্যাপ্টেন কাঁদলেন, কাঁদালেন’।
ভেজা চোখে তামিম যখন ১৬ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের ইতি টানার ঘোষণা দিলেন, তখনই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। তার কান্না ক্রিকেটপ্রেমীদেরও ছুঁয়ে গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তামিমের এই ঘোষণার পরপরই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অসংখ্য মানুষ।
চলচ্চিত্র নির্মাতা মিজানুর রহমান আরিয়ান লিখেছেন, তামিমের এই অশ্রুসিক্ত অবসর ঘোষণা হৃদয়বিদারক।
খান মোহাম্মদ মুসাব্বির নামের এক ক্রিকেটপ্রেমীর ভাষ্য, তামিমের হেটার্সরা অন্তত বিশ্বকাপে ওপেনিং পজিশনের খেলা দেখলেই বুঝবে; তার গুরুত্ব কতোটা ছিল। টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ডকাপে যেমনটা হয়েছিল, এইবারও তার বিপরীত কিছু ঘটবে নাহ! একজন বাংলাদেশি ক্রিকেটের ফ্যান হিসেবে ওয়ার্ল্ডকাপে তাকে অনেক বেশি মিস করব!
আফরিন সুলতানা নামে এক ভক্তের মন্তব্য, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন তামিম; আমার অত্যন্ত পছন্দের একজন ক্রিকেটার ছিলেন তামিম। এতো দ্রুত এই সিদ্ধান্ত আশা করি নাই, সম্মেলনে ওর কান্না দেখেই আমার কান্না পাচ্ছে।
বরাতুজ্জামান স্পন্দন লিখেছেন, তার বাঁহাতি ক্লাসি ব্যাটিং হয়তো আর দেখা হবে না। তবে আমার মতে ‘এইটা সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত’। বিশ্বকাপ খেলে বিদায়, আর কয়েক দিন খেলে বিদায়, নতুন ওপেনাররা বা কি খেলছে? এসব না বলে চিন্তা করুন যে আরও আগেই তাকে বাদ দেওয়ার কথা এসেছিল। পরবর্তীতে এশিয়া কাপে পর পর ৪ ম্যাচে ৪ ফিফটি! রাজার মতো প্রত্যাবর্তন! তার পর দলের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান। একটা বিশ্বকাপ খারাপ করার পর থেকে সে অনেকটা চক্ষুশূল হয়ে যায়! মানুষের ভালোবাসা থাকতে থাকতে সময় মতো বিদায় নেওয়াটা অবশ্যই সাহসিকতার পরিচয়।
এদিকে তামিমের এমন বিদায়ে হতাশ অনেক সমর্থক। তাদের দাবি, এভাবে বিদায়টা না হলেও পারত। টিম ম্যানেজমেন্ট, কোচ কিংবা অন্যদের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বগুলো না হলে পারতো। অন্তত লোক চোখের সামনে না আসার মতো হলেই পারতো।
ফারহানা হোসেনের ভাষ্যমতে, শেষ মেশ সিদ্ধান্তটা নিয়েই নিলো। হয়তো অনেকটা নিরাশ হয়ে, ক্ষোভে বা ক্লান্ত হয়ে। তবে এখানে কিছুটা দায় হয়তো আমাদেরও আছে। আমরা বাঙালি, তার এতো বছরের অর্জনকে ছাপিয়ে তার ভুলগুলোই মনে রেখেছি। কালকেও যারা তার চোট নিয়ে খেলার কারণে কটূক্তি করছিলেন, আজকে দেখা যাবে তার অবসর নেওয়ার কারণে দুঃখ প্রকাশ করছেন। তবে বাংলাদেশের কোনো ম্যাচে আর তামিমকে ওপেনিংয়ে দেখব না, ভাবতেই কেমন যেন কান্না পায়। তার এই কান্নাভেজা চোখ অনেক দিন ভোলার নয়।
বিদায় বেলায় লাল-সবুজের ক্রিকেটপ্রেমীদের ভাষ্য, বিদায় ক্যাপ্টেন, দেখা হবে ২২ গজের নতুন কোনো অধ্যায়ে।