পল্টন শহীদ তাজউদ্দীন ইনডোরের একপাশে অনুশীলনে ব্যস্ত নাফিস ইকবাল, আবুল হাশেম হাসিবসহ অন্যরা। আরেক পাশে অনুশীলন করছেন সাদিয়া রহমান মৌ, রেশমি তঞ্চ্যঙ্গা, ঐশি রহমান, খই খই সাই মারমা। জাতীয় দলের এই টেবিল টেনিস খেলোয়াড়দের যেন এতটুকু দম ফেলার অবসর নেই। অনুশীলনে কেউ লুপ করছেন। কেউ করছেন ব্লক। আবার ব্যাকস্পিন, ব্যাকহ্যান্ডেও সমানে ব্যাট চালাচ্ছেন খেলোয়াড়েরা।
তাদের এমন প্রস্তুতির উদ্দেশ্য—সামনে বড় তিনটি গেমস। আগামী ২২-৩১ অক্টোবর বাহরাইনে অনুষ্ঠিত হবে তৃতীয় এশিয়ান ইয়ুথ গেমস। এরপর ৭-২১ নভেম্বর সৌদি আরবে ইসলামিক সলিডারিটি গেমস। সবশেষে আগামী বছরের জানুয়ারিতে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ান গেমস (এসএ গেমস)।
এই তিন গেমসকে সামনে রেখে বাংলাদেশ টেবিল টেনিস ফেডারেশন ২৭ মে থেকে শুরু করেছে আবাসিক ক্যাম্প। যেখানে পুরুষ ও নারী মিলিয়ে ৪১ জন খেলোয়াড় সুযোগ পেয়েছেন। দেশি কোচদের অধীনে প্রতিদিন ৬ ঘন্টা করে অনুশীলন করছেন খেলোয়াড়েরা।ইনডোরে শুধু ফিটনেস অনুশীলন হচ্ছে। টেবিলেও অনুশীলন করছেন। তবে একটা জিমনেসিয়ামের অভাবে খেলোয়াড়দের ট্রেনিংয়ে পূর্ণতা আসছে না। এরই মধ্যে ভারোত্তোলনের জিমনেসিয়াম ব্যবহারের চেষ্টা করেও সেটা পায়নি টেবিল টেনিস ফেডারেশন।
শুরুতে আকারে ছোট রাখার পরিকল্পনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ক্যাম্পের পরিধি বাড়াতে হয়েছে টেবিল টেনিস ফেডারেশনকে। এ ব্যাপারে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন মাকসুদ আহমেদ সনেটের ব্যাখ্যা, আমাদের জন্য পরপর অনেকগুলো টুর্নামেন্ট করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। যে কারণে অনেকে বলছে যেহেতু আমরা টুর্নামেন্ট পাইনি। তাই আমাদের ট্রেনিংয়ে সুযোগ দেন। আমরা সবাইকে সুযোগ দিতে চাই।
আগামী জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে ক্যাম্প থেকে পুরুষ ও নারী বিভাগে চূড়ান্তভাবে বাছাই করা হবে ১০ জন করে খেলোয়াড়। যদিও এর ফাঁকে একটা র্যাঙ্কিং টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে চায় ফেডারেশন। ওই প্রতিযোগিতায় যদি কেউ কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে তাকেও দলে রাখা হবে।
এবারের ট্রেনিংয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ফিটনেসের ওপর। মাকসুদ আহমেদ বলেন, আমরা এবার সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি ফিজিকাল ফিটনেসের ওপর। তাদের বাড়তি পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হচ্ছে।
যদিও ইয়ুথ গেমস ও সলিডারিট গেমস আগে শুরু হলেও ফেডারেশনের পাখির চোখ এসএ গেমস। তেমনটাই জানালেন সাধারণ সম্পাদক, আমাদের আসল লক্ষ্য এসএ গেমস। বাকিটা পরীক্ষামূলক। সেখানে যে ভুলত্রুটিগুলো হবে পরবর্তীতে যেন সেগুলো শুধরিয়ে নিতে পারি।
এরই মধ্যে চীন থেকে কোচ আনারও পরিকল্পনা রয়েছে। বিদেশি কোচের অধীনে খেলোয়াড়েরা আরও উন্নতি করতে পারবে বলে মানছেন তিনি, আমরা চীনের একজন কোচ পেয়ে যাব। আগামী জুলাইয়ে হয়তো উনি চলে আসবেন।
বাংলাদেশ টেবিল টেনিসের কোনও ইভেন্টে কখনও এসএ গেমসে ফাইনালে উঠতে পারেনি। তবে এবার অন্তত রুপার পদকের স্বপ্ন দেখছেন খেলোয়াড়েরা।গত মে মাসে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ প্রেসিডেন্টস কাপ র্যাঙ্কিং টুর্নামেন্টে জুনিয়রে চ্যাম্পিয়ন নাফিস ইকবাল এমন ট্রেনিং পেয়ে উচ্ছ্বসিত। নাফিসের স্বপ্ন এসএ গেমসে রুপা জেতা, আমাদের খুব ভালো ট্রেনিং হচ্ছে। ভালো কিছু করার আশা আছে। এবারে ট্রেনিংয়ে ফুটওয়ার্ক ও ফিজিকাল ফিটনেসে জোর দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু এসএ গেমসের জন্য অনেক সময় আছে। তাই আমার লক্ষ্য অবশ্যই ভারতকে হারানো। তা না হলে অন্তত রুপা জিততে চাই।
একমি কাপ টেবিল টেনিসের সিনিয়র ও জুনিয়রের এককে চ্যাম্পিয়ন খৈ খৈ মারমাও নাফিসের সুরেই কথা বললেন, আমাদের আসল লক্ষ্য এসএ গেমস। এর আগে সলিডারিটি গেমসেও দেশকে কিছু উপহার দিতে চাই। আমরা চাইলেই এসএ গেমসে রুপা জিততে পারি। সেই আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে। তাছাড়া যেহেতু হাতে ৭ মাস সময় আছে আমাদের। শুধু শ্রীলঙ্কাকে হারালেই রুপা নিশ্চিত আমাদের।
আরটিভি/এসকে