আফ্রিকার দেশ বুরুন্ডিতে খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি অ্যাপ তৈরি করেছেন। ইতিমধ্যে এই অ্যাপ ব্যবহার করে কৃষকেরা উপকৃত হচ্ছেন।
তবে পরের ধাপে যেতে অ্যাপ ডেভেলপারদের অর্থ সহায়তা প্রয়োজন। বছর দুই আগে এনগোজি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এলি বুবুয়া ও ডিউডোনে আবানাবিমানার দল এমন একটি অ্যাপের ধারণা নিয়ে এসেছিলেন, যা ক্ষুদ্র চাষিদের তাদের ফসল রক্ষা করতে সহায়তা করে।
এলি বুবুয়া বলেন, ফসল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অ্যাপের কারণে উদ্ভিদের রোগ তাড়াতাড়ি সনাক্ত করা সম্ভব হবে। ফলে কৃষক অনেক বেশি ফলন পাবেন। আমরা, অতীতে খাদ্যের ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠা রোগগুলি প্রতিরোধ এবং সেগুলো এড়াতে যাচ্ছি। স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা অ্যাপটি ব্যবহার করে অসুস্থ ফসলের ছবি তুলতে পারবেন। এখন পর্যন্ত। এ ধরনের কিছু কৃষি অ্যাপ আগে থেকেই আছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা স্থানীয় চাহিদার সাথে খাপ খায় এমন একটি অ্যাপ বানাতে চেয়েছিলেন, এবং যতটা সম্ভব বাধামুক্ত করতে চেয়েছিলেন।
এলি বুবুয়া বলেন, কিরুন্ডি এবং সোয়াহিলির মতো স্থানীয় ভাষা অ্যাপে যুক্ত করায় সবাই এটা সহজে ব্যবহার করতে পারছেন। এমনকি যারা স্কুলে যাননি, যারা পড়তে পারেন না তারাও এটি সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন। কারণ, আমরা একটি অডিও ইন্টারফেস ডিজাইন করেছি। ২০২৩ সালের শেষ দিকে বুরুন্ডিতে অ্যাপটি চালু করা হয়েছিল। দেশের পশ্চিমে বসবাসকারী ডিভাল মভুগুসি গত বছর এটি ব্যবহার শুরু করেছিলেন। তিনি এবং বজুম্বুরা গ্রামীণ প্রদেশের তুগউইজুমউইম্বু সমবায়ের অন্যান্য কৃষকেরা ইতিমধ্যে নিয়মিতভাবে অ্যাপ ব্যবহার করে তাদের আলু ফসলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন।
কৃষক ডিভাল মভুগুসি বলেন, গত বছর আমি আলু চাষ করেছিলাম। সেগুলোর স্বাস্থ্য ভালো ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি এই জমিতে মাত্র এক টন আলু চাষ করতে পেরেছি। এই অ্যাপ ব্যবহার শুরু করার পর আমি একই পরিমাণ বীজ দিয়ে দুই থেকে তিন টনেরও বেশি আলু পেয়েছি। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০০ জন মানুষ অ্যাপটি ব্যবহার করছেন। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত প্রত্যন্ত গ্রাম পরিদর্শনে গিয়ে কৃষকদের তাদের অ্যাপের কথা জানান, এবং তাদের পরামর্শ বা উদ্বেগ শোনার চেষ্টা করেন। মাঝেমধ্যে অ্যাপে প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দেয়।
কৃষক এলিনে নিশিমিরিমানা বলেন, আমাদের জন্য উর্বর মাটি আর বীজ পাওয়াই কঠিন। তার উপর ফোন পাওয়া। তাই আমি আগ্রহী নই।
কৃষক ডিভাল মভুগুসি বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি সমাধান খুঁজে বের করতে পারে, এবং এমন একটি ফাংশন যোগ করতে পারে যা খাদ্য নিরাপত্তা আমাদের অফলাইনে অ্যাপটি ব্যবহারের সুযোগ করে দেবে, তাহলে সত্যিই ভালো হবে। অ্যাপ ব্যবহারকারীরা প্রশ্ন করে তথ্যও পেতে পারেন।
আরেক কৃষক দিদাস নিয়িন্দাবিরা মনে করেন, জ্ঞান স্থানান্তর গুরুত্বপূর্ণ। তিনি মূলত আলু, কাসাভা আর ভুট্টা চাষ করেন, এবং বিক্রি করেন। আলুতে আমরা ক্ষয় রোগ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট অন্যান্য রোগ দেখতে পাই। কার্যকর উপাদান দিয়ে ফসলের চিকিৎসা করার পর্যাপ্ত জ্ঞান কৃষকদের থাকতে হবে।
তাহলে উৎপাদন বাড়বে, বলেন তিনি। শিগগিরই অ্যাপটিতে কীটনাশক ছাড়াই রোগের চিকিৎসার টিপস থাকবে। অ্যাপটি বিশ্ববিদ্যালয়েও ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্মাতারা কৃষি শিক্ষার্থীদের এই টুলের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন, যেন তারা পরে এটি ব্যবহার করে কাজ করতে পারেন। স্টার্ট-আপটি এখনও কোনও অর্থ সহায়তা পায়নি। পরের ধাপে যেতে হলে তাদের স্পন্সর প্রয়োজন হবে।
অ্যাপের আরেক ডেভেলপার ডিউডোনে আবানাবিমানা বলেন, আমরা প্রথম যে সমাধানটি বিবেচনা করছি, তা হলো, ড্রোন এবং ড্রোন ম্যাপিং ব্যবহার করে রোগের উপস্থিতি এবং অবস্থান সনাক্ত করা। এতে আমাদের অনেক সময় বাঁচবে। অ্যাপ ডেভেলপারদের স্বপ্ন অনেক বড়। তাদের অ্যাপ ইতিমধ্যে কৃষকদের ফসল উৎপাদনের সময় ক্ষতি কমাতে, এবং খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে।
আরটিভি/এএইচ/এআর