ঢাকাবৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫, ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘ডিজিটাল শাওয়ার’ কী, মস্তিষ্কের জন্য কেন এটি অত্যন্ত জরুরি

আরটিভি নিউজ

সোমবার, ২৬ মে ২০২৫ , ০৫:৩৬ পিএম


loading/img
প্রতীকী ছবি

আমরা এমন এক সময়ের মধ্যে বাস করছি, যেখানে দিনের শুরু থেকে রাত পর্যন্ত আমাদের চোখ ও মন একটি ছোট স্ক্রিনের দখলে থাকে। ঘুম ভাঙতেই হাত চলে যায় ফোনে—নোটিফিকেশন, ইনবক্স, নিউজ, রিলস কিংবা ব্রেকিং নিউজ।

বিজ্ঞাপন

অফিসে স্ক্রিনের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটে, বাসায় ফিরে ফেরও স্ক্রিন—টিভি, ইউটিউব বা নেটফ্লিক্স। এমনকি অনেকেই ঘুমাতে যাওয়ার সময়ও ফোন হাতে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রলিং বন্ধ করতে পারেন না। এই ধারাবাহিকতার মধ্যে আমাদের মস্তিষ্ক একটানা তথ্য, ছবি, শব্দ এবং আবেগের জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায়, কিন্তু কোথাও গিয়ে থামে না।

তাই এই সময়ে মানসিক সুস্থতার জন্য সবচেয়ে জরুরি অভ্যাসগুলোর একটি হলো—‘ডিজিটাল শাওয়ার’।

বিজ্ঞাপন

ডিজিটাল শাওয়ার বলতে বোঝায়, একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সম্পূর্ণরূপে সব ধরনের ডিজিটাল মাধ্যম থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। ঠিক যেমন শারীরিক পরিশ্রমের পরে আমরা শরীর পরিষ্কার করতে গোসল করি, তেমনই মস্তিষ্ককেও তার ক্লান্তি ও চাপ থেকে মুক্ত করতে দরকার হয় এক ধরনের মানসিক গোসল বা শুদ্ধি— যেখানে কোনো পর্দা, কোনো টাচস্ক্রিন, কোনো ইনফো ওভারলোড থাকে না। এই সময়টুকুতে আপনি নিজেকে নিজের ভেতরে ফিরে পেতে পারেন।

প্রশ্ন জাগতেই পারে —কেন এটার এত প্রয়োজন? কারণ, আমরা আজকাল মানুষ হিসেবে ‘রেসপন্স মেশিনে’ পরিণত হচ্ছি। একটা ‘পিং’ বাজলেই মন চলে যায় অন্যদিকে; একটা নিউজ দেখলেই না চাইলেও মাথায় রয়ে যায় আতঙ্ক বা হতাশা। অবচেতন মন এইসব ধরে রাখে এবং দিনশেষে মাথা ভারী লাগে, মন খারাপ হয়, অথচ বোঝা যায় না কেন। এর বিপরীতে, ডিজিটাল শাওয়ার আমাদের মস্তিষ্ককে একটি নিঃশব্দ বিশ্রামের সুযোগ দেয়। এই নীরবতা থেকেই আসে ফোকাস, আবেগের ভারসাম্য এবং সৃজনশীল চিন্তা।

ডিজিটাল শাওয়ার শুরু করার জন্য আপনাকে করতে হবে কিছু সহজ কাজ—

বিজ্ঞাপন

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা সময় বেছে নিন, যেখানে আপনি কোনো মোবাইল, ল্যাপটপ, টিভি, রেডিও—কিছুই ব্যবহার করবেন না। ফোন সাইলেন্ট মোডে রাখুন, নোটিফিকেশন বন্ধ করুন এবং নিজেকে একটি ‘ডিজিটাল-মুক্ত জোনে’ নিয়ে যান। এই সময়টুকু আপনি কীভাবে কাটাবেন, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। আপনি বই পড়তে পারেন, গাছের যত্ন নিতে পারেন, প্রকৃতিতে হাঁটতে পারেন, পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে পারেন, বা একা চুপচাপ বসে থাকতেও পারেন। এমনকি পাঁচ মিনিটের ধ্যান (মেডিটেশন) বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস অনুশীলন করলেই আপনার মন অনেকটাই হালকা হয়ে উঠবে।

বিজ্ঞাপন

ডিজিটাল শাওয়ারের উপকারিতা বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত। এটি মনোযোগ বৃদ্ধি করে, মানসিক চাপ কমায়, ঘুমের মান উন্নত করে, এবং আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। সবচেয়ে বড় কথা, এটি আপনাকে আবার নিজের কাছে ফিরিয়ে আনে। আমরা প্রতিনিয়ত নিজের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি— অন্যের ভাবনা, কনটেন্ট, রিলস, লাইভ, নিউজের দুনিয়ায় হারিয়ে গিয়ে। কিন্তু দিন শেষে, শান্তি আসে নিজের নিঃশ্বাস, নিজের চিন্তা, নিজের চুপচাপ সময়ে।

এই অভ্যাসটি শুরু করতে গেলে প্রথমে কিছুটা অস্বস্তি হতে পারে—মনে হবে, কিছু একটা মিস করছেন। কিন্তু কয়েক দিন পরেই আপনি বুঝবেন, আপনি আসলে কিছু মিস করছেন না, বরং আপনি যা খুঁজছিলেন, তা নিজেকেই খুঁজে পেয়েছেন।

ডিজিটাল শাওয়ার বিশেষ করে দরকার যারা খুব বেশি স্ক্রিন টাইমে থাকেন, যেমন সাংবাদিক, স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষকমণ্ডলী, কনটেন্ট নির্মাতা, বা যাদের পেশা ডিজিটাল মাধ্যমনির্ভর। পাশাপাশি, যাদের ঘনঘন মন খারাপ হয়, ঘুমে সমস্যা হয় বা যারা নিজের ভেতরে অস্থিরতা অনুভব করেন —তাদের জন্যও এটি একটি কার্যকর মানসিক ‘ডিটক্স’ হতে পারে।

আজ, যখন আমাদের চারপাশে কেবল তথ্যের ছড়াছড়ি, তখন নিজেদের জন্য একটি ‘ডিজিটাল নীরবতা’ জরুরি। এই অভ্যাস হয়তো ছোট, কিন্তু এর প্রভাব গভীর। তাই, প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট নিজের জন্য রাখুন—কোনো পর্দা ছাড়া, কোনো শব্দ ছাড়া, শুধু আপনি ও আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস। এটিই হবে আপনার মস্তিষ্কের জন্য একটি স্নিগ্ধ, নিরব ‘ডিজিটাল শাওয়ার’।

 

আরটিভি/টি

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |