ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) একটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত টেলিকমিউনিকেশন অপারেটর, যা বিভিন্ন টেলিকম সংস্থার মধ্যে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ভয়েস ট্রাফিক এবং দেশীয় এসএমএস ট্রাফিকের নির্বিঘ্ন রাউটিং নিশ্চিত করে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২০০৭ সালের পূর্বে টেলিকম খাতে একচেটিয়া আধিপত্য, অবৈধ ভিওআইপি, সিডিআর মুছে ফেলা ইত্যাদির কারণে এই খাতে চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় যা নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষে জবাবদিহিতা ও মনিটরিং করা ছিলো অত্যন্ত দুরূহ। এছাড়া প্রভাবশালী এক্সেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস (ANS)’র দৌরাত্ব এবং মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর (MNO) দের একচেটিয়া ব্যবসা থেকে টেলিকমখাতে শৃঙ্খলা ফেরাতেই আইসিএক্স লাইসেন্স প্রদান করা হয়।
আইসিএক্স লাইসেন্স প্রদানের ফলে ইন্টারকানেক্শনে জটিল লেয়ারে ব্যবহৃত ১৫ টি স্বতন্ত্র লিংক বাদ পড়ে ফলে নেটওয়ার্ক সহজীকরণ হয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং সক্ষমতা বাড়ে এবং প্রভাবশালী অপারেটরদের ট্র্যাফিক বিঘ্ন ঘটানোর অপপ্রায়স নিয়ন্ত্রিত হয়। এছাড়া ২০০৮ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত আইসিএক্স খাত থেকে সরকার ১০,৫৬২ কোটি টাকা রাজস্ব পায় সরকার।
পট পরিবর্তনে টেলিকম খাতের কাঠামো পরিবর্তনে কাজ করছে সরকার। নিয়ন্ত্রক সংস্থার খসড়া টেলিকম নীতিমালায় এক্সেস নেওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার (এএনএসপি), ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড কানেক্টিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (এনআইসিএসপি) এবং ইন্টারন্যাশনাল কানেক্টিভিটি সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসসিপি) নামে তিনটি লেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। যেখানে আইসিএস্কের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষে বিলুপ্তির প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে আইসিএক্স খাত। তারা বলছেন, এই খাতের লাইসেন্স না থাকলে একদিকে যেমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে অন্যদিকে ৩০০ কোটির রাজস্ব হারাবে সরকার। আইসিএক্স খাত সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বিটিআরসির খসড়া টেলিকম নীতিমালায় বিদেশি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা হয়েছে।
এআইওবি’র সভাপতি ব্রি. জেনারেল (অব.) মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, মোবাইল অপারেটরদের সেবা নিয়ে মানুষের বিস্তর অভিযোগ। অতিরিক্তি কল চার্জ, কল ড্রপ, এবং নেটওয়ার্ক জনিত সমস্যা নিয়ে প্রতিনিয়ত অভিযোগ। যে অনিয়েমের জন্য ‘ইন্টারকানেকশন’ স্তরটি এমএনও দের কাছে থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, সেটি আবারও তাদের কাছে ফিরিয়ে দিলে এই খাতে আবারো বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে”।
অগ্নি সিস্টেমস লিমিটেডের হেড অব অপারেশনস আহমেদ উর রহমান (রোমেল) বলেন, যতি আইসিএক্স লাইসেন্স এই মুহূর্তে বাতিল করা হয়, তাহলে সরকার ৩০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে, বিপরীতে সরকার পাবে মাত্র ১৭ কোটি টাকা।
টেলিকম খাত বিশেষজ্ঞ মুস্তফা মাহমুদ হোসাইন বলেন, আইসিএক্স লাইসেন্স বাতিল হলে ছয় লাখ লোকের কর্মসংস্থান নষ্ট হবে। এই খাতে শৃঙ্খলা ধরে রাখতে অবশ্যই আইডিএলটিএস পলিসির বাস্তবায়নের দিতে কর্তৃপক্ষের নজর দিতে হবে।
আইসিএক্স খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই খাত থেকে সরকার বর্তমানে ৫০% শতাংশ হারে রেভিনিউ পায়। লাইসেন্সের এই খাতটি মোবাইল অপারেটরদের (এমএনও) কাছে গেলে সেক্ষেত্রে সরকার রেভিনিউ পাবে ৫.৫ শতাংশ।
এইখাতে আইসিএক্স লাইসেন্সধারী ২৩ টি প্রতিষ্ঠান চার হাজার ৪৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এই ব্যবসা কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডেটা সেন্টার গড়ে উঠেছে। প্রস্তাবিত খসড়া নীতিমালায় উল্লেখিত আইসিএক্স লাইসেন্স বাতিল কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে চারটি ডেটারের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করেন তারা।
আরটিভি/এফএ/এআর
