যুগ যুগ ধরে অনেক মানুষেই নীরবে নিভৃতে কোনো কিছুর প্রত্যাশা না করে মানবসেবায় নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেন। সকল প্রচারণার আড়ালে থেকে বটবৃক্ষের মতোই নিশ্চুপে ছায়া দিয়ে যান অসহায় দরিদ্র মানুষদের। এমনি একজন ব্রিটিশ নাগরিক জুলিয়ান এম রোজ।
দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে মেহেরপুরের বল্লভপুর হাসপাতালে নার্সিং সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এই দেশ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসার টানে নিজ দেশের মায়া ছেড়ে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছেন এখানে। দীর্ঘ দিনের এ পথচলায় তার সখ্যতা গড়ে উঠেছে কর্মক্ষেত্র ছাড়াও স্থানীয় সব বয়সী মানুষের সঙ্গে।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: ধর্ষকদের জনসম্মুখে পেটালো নারীরা (ভিডিও)
--------------------------------------------------------
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ১৯৬৪ সালে এদেশে আসেন জুলিয়ান। সেবার ধর্মে ব্রতী হয়ে ৮১ সালে নার্স হিসেবে যোগ দেন মেহেরপুরের মুজিবনগরের বল্লভপুর হাসপাতালে। হতদরিদ্র মানুষের সেবা করতে গিয়ে বিয়েটাও করা হয়নি জুলিয়ানের।
কুমারী রোজ মাঝে কয়েক বছর মায়ের সেবার জন্য নিজ দেশে ফিরে গিয়েছিলেন।তবে এদেশের মানুষের মায়ার টানে আবারও ফিরে আসেন।
জুলিয়ান রোজ আরটিভি অনলাইনকে বলেন, মানুষের সেবা করে যাই। এটা আমাকে ছাড়ছে না। তাই আমি খুশি হয়ে সেবা করে যাচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার কোনো ভবিষ্যৎ প্রোগ্রাম নেই। আমি দিনে দিনে থাকি। দিনে দিনে কাজ করে যাই।তার (যিশু) ইচ্ছায় যতদিন থাকতে পারব থাকব।
স্থানীয় মানুষদের কাছেও তিনি খুবই জনপ্রিয়।সবাই তাকে ভালোবাসে।জুলিয়ান যেমন এই দেশকে আপন করে নিয়েছেন, ঠিক তেমনি বল্লভপুরের মানুষজনও তাকে আপন করে নিয়েছেন।তারা জুলিয়ানের কাছে কৃতজ্ঞও।
স্থানীয় এক ব্যক্তি আরটিভিকে জানান, এই অন্ধকার এলাকায় তিনি দিনের পর দিন সেবা করে যাচ্ছেন।তার এই সেবার কারণে এলাকার মানুষ খুবই উপকৃত। তাই আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ।
ব্রিটিশ সরকারের পেনশনে চলা মহীয়সী এ নারী হাসপাতাল থেকে কোনো বেতন নেন না। বরং নিজের টাকায় সাহায্য ও সেবা করেন হতদরিদ্রদের।
বল্লভপুর হাসপাতালের এক সেবিকা আরটিভিকে বলেন, এখানে বাচ্চাদের সেবা দেয়ার জন্য একটি ইনকিউবেটরের ব্যবস্থা সিস্টার জুলিয়ান রোজ করেছেন। এতে এই হতদরিদ্র এলাকার সদ্যজাত শিশু সুরক্ষা পাবে।
জুলিয়ান রোজের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে এই হাসপাতালের সেবিকারাও মানবসেবায় নিজেদের উৎসর্গ করতে চান।
এক সেবিকা আরটিভিকে বলেন, আমরা হয়তো সিস্টার জুলিয়ানের মতো হতে পারব না। তবে তার মতো মানুষকে আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দেয়ার চেষ্টা করে যাব।
নিজেদের বিপদে আপদে সবসময় পাশে পাওয়া জুলিয়ানকে দ্রুত এ দেশের নাগরিকত্ব দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বল্লভপুর তথা মেহেরপুরবাসী।
এ বিষয়ে মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা আক্তার আরটিভিকে বলেন, সিস্টার জুলিয়ান রোজের নাগরিকত্ব পাওয়ার বিষয়ে ডিসি স্যার ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করব।
আরও পড়ুন:
জেবি/সি