রাজধানীর অনেক এলাকায় মশার তীব্র প্রকোপ থাকলেও প্রতিকার নেই। এসব এলাকার খাল-বিল আর ময়লার ভাগাড় মশার উৎপত্তিস্থল হলেও সেদিকে নজর নেই কর্তৃপক্ষের। সাধারণ মানুষ বলছেন, আসছে বর্ষায় এসব স্থান পরিণত হবে মশার কারাখানায়। আর কর্তৃপক্ষ বলছে মশা আটকাতে নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এবার মাঠে নামবেন তারা।
রাজধানীর রামপুরার ‘সি’ ব্লক থেকে শুরু হয়ে মেরাদিয়া হাট পর্যন্ত-রামপুরা-বনশ্রী খাল। পুরো এলাকায় পানি নিষ্কাশনের এ খাল এখন মশার আদর্শ উৎপত্তিস্থল। এলাকাবাসীর অভিযোগ দিন-রাত ২৪ ঘণ্টায় মশার জ্বালায় অস্থির থাকেন তারা। বাড্ডা, খিলগাঁও, নদ্দা, গোরানসহ বিভিন্ন এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ উদ্যোগ নেই বলে জানালেন ভুক্তভুগিরা।
এলাকাবাসীরা জানান, বিকেল থেকে অসংখ্য মশা, মশার কামড়ে টেকা যায় না। কয়েল বা এরোসলে কিছুতেই কাজ হয়ে না। সিটি করপোরেশনের লোকেরা কাজ করে না। খালে কোনো ওষুধ দেয় না।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এতো ‘দুর্বল’ কেন?
--------------------------------------------------------
মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব যে কাউন্সিলরদের হাতে তারা বলছেন, সকালে লার্ভিসাইডিং আর বিকেলে এডাল্টিসাইডিং দেয়াসহ সাধ্যের মধ্যে সবকিছু করছেন।
২১ নাম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এম এ হামিদ খান জানান, কিছু দিন পর পর ৪০ থেকে ৬০টি মেশিন দিয়ে পুরো ওয়ার্ডে মশার ওষুধ দেয়া হয়েছে। যার কারণে আমাদের দক্ষিণে মশার প্রকট কম।
২৬ নাম্বার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসিবর রহমান মানিক জানান, ড্রেনের পানি যেন সহজেই চলে যেতে পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা করছি। যেন পানি না জমে মশা জন্মাতে না পারে।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলছে, কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও স্থির পানি আর বাসা-বাড়ির আঙিনা হতে পরে এডিস মশার উৎপত্তিস্থল তাই বাসায় বাসায় গিয়ে তারা ওষুধ দিচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি.জে শেখ সালাউদ্দিন জানান, প্রত্যেকটি বাড়িতে একাধিক জায়গায় পরিষ্কার স্বচ্ছ জমানো পানি পেয়েছি। সবাই যদি আমাদের সাহায্য না করে তাহলে এডিস নিয়ন্ত্রণ আমাদের পক্ষে সম্ভব না। আমরা মানুষকে সচেতন করতে যাচ্ছি।
রাজধানীতে বাসা-বাড়ির আঙ্গিনা আর ফুল-বাগানগুলো যেন এক একটি মশার কারখানা। সিটি কাউন্সিলরদের অভিযোগ, নানা অনুরোধের পরও নাগরিকরা পরিচ্ছন্ন রাখছেন না, তাদের বাড়ির আঙ্গিনা। সিটি করপোরেশন বলছে, এয়ারপোর্ট, ক্যান্টনমেন্ট ও বসুন্ধরাসহ বেশকিছু আবাসিক এলাকায় পরিচ্ছন্নকর্মীদের প্রবেশে বাধা থাকায় সেখানে জন্মানো মশা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না তারা।
রাজধানীর খিলগাঁও সিপাহীবাগ বাজার এলাকায় নির্মাণাধীন বাড়িগুলোর ভেতরে জমে থাকা পানিতে ওষুধ দিচ্ছেন সিটি করপোরেশন কর্মীরা। এসব বাড়িতে জমে থাকা পানিতে মশার ডিম পাওয়ায় ক্ষোভ জানান তারা।
একই চিত্র রাজধানীর অন্যান্য ওয়ার্ডেও। মগবাজার, আজিমপুর, মোহাম্মদপুর ও মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ডোবা-নালায় ওষুধ দেয়ার পাশাপাশি নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলছেন কাউন্সিলররা। কেউ চাইলে বাসায় গিয়েও ওষুধ দিচ্ছেন সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কর্মীরা।
কর্তৃপক্ষ বলছে, খাল-বিল আর ডোবা-নালার মশা নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলেও এয়ারপোর্ট, ক্যান্টনমেন্টসহ সংরক্ষিত বিভিন্ন এলাকায় মশার বিস্তার নিয়ে দু:শ্চিন্তায় তারা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র আলেয়া সারোয়ার ডেইজি জানান, কিছু কিছু ভিআইপি এলাকা আছে যেখানে আমাদের সিভিল যারা ঢোকার কোনো অনুমতি নেই। মশার ডিম্বাণুগুলো সেখানেও উৎপন্ন হয়।
নাগরিকরা সচেতন থাকলে এবং বাসা-বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখলে এবছর ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার প্রতিরোধ করা যাবে বলে মনে করে সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্টরা।
আরও পড়ুন :
এসএস