ঢাকাশুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

ব্যাক্টেরিয়াযুক্ত মশার কামড় কমাতে পারে ডেঙ্গু

ডয়চে ভেলে

শনিবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৩ , ০৫:১৫ পিএম


loading/img
মশা

প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন ১০ কোটি মানুষ, প্রাণ হারান ২২ হাজার জন। এ অবস্থার উন্নতির সম্ভাবনা দেখছেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞাপন

কলম্বিয়ার আবুরা উপত্যকার তিনটি শহরের ডেঙ্গু সংক্রমণ ৯৭ শতাংশ কমার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকতে পারে উয়োলবাখিয়া ব্যাক্টেরিয়াযুক্ত মশা।

অলাভজনক সংস্থা ওয়ার্ল্ড মসকিউটো প্রোগ্রামের গবেষকরা অক্টোবরের শেষে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। এই সংস্থাটির কাজ ডেঙ্গু, জিকা ভাইরাস বা ইয়েলো ফিভারের মতো মশাবাহী রোগ ঠেকানো। সেজন্য উয়োলবাখিয়া ব্যাক্টেরিয়া মশার শরীরে ঢুকিয়ে সেই মশাগুলি এই রোগের প্রবণতা যেসব অঞ্চলে বেশি, সেখানে ছেড়ে দেন তারা।

বিজ্ঞাপন

এডিস এজিপ্টাই মশার রোগ ছড়ানোর ক্ষমতাকে কমাতে পারে উয়োলবাখিয়া ব্যাক্টেরিয়া। এডিস বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক রোগবাহী মশা।

২০১৫ সালে ব্যাক্টেরিয়াযুক্ত মশাগুলিকে প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে কলম্বিয়ার বেলো শহরে ছাড়া হয়। পরে মেডেয়িন ও ইটাগুয়া শহরেও ছড়ানো হয় এই মশা। এর আগেও ব্যাক্টেরিয়াযুক্ত মশা ছড়ানো হয়েছিল বিশ্বের অন্যান্য জায়গাতেও। তবে এত বড় আকারে এটাই প্রথম।

২০২২ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে এই গবেষণা থেকে জানা যায় যে, বেলো ও ইটাগুয়ার প্রায় ৮০ শতাংশ মশা উয়োলবাখিয়াযুক্ত মশাদের থেকে সংক্রামিত হচ্ছে। মেডেয়িনের জন্য এই হার ৬০ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু এই সংক্রমণ ডেঙ্গু সংক্রমণের ক্ষেত্রে কতটা প্রভাব ফেলবে তা জানতে গবেষকরা ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত স্থানীয় ডেঙ্গু সংক্রমণের হারের তথ্য খতিয়ে দেখেন।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, এই পরীক্ষা চালানোর শুরুর সময়ে, অর্থাৎ দশ বছর আগের ডেঙ্গু সংক্রমণের সংখ্যা থেকে পরীক্ষা চালানোর পর সংক্রমণের হার ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। মেডেয়িনে একটি নির্দিষ্ট কেসভিত্তিক নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা করা হয়। সেখানেও ব্যাক্টেরিয়াযুক্ত মশার সাথে ডেঙ্গু কমতে দেখা গেছে। কমার হার ছিল ৪৭ শতাংশ।

এই গবেষণার ইতিবাচক ফলাফলগুলি ‘সহজলভ্য সমাধানের দিকে আলোকপাত করে ও নাগরিক পরিসরে গণস্বাস্থ্য উন্নয়নের ক্ষেত্রে’ ভূমিকা রাখবে বলে গবেষকদের বিশ্বাস।

কলম্বিয়ার এই পরীক্ষা বিশ্বের সবচেয়ে বড় হলেও ওয়ার্ল্ড মসকিউটো প্রোগ্রামের তরফে এমন প্রকল্প আরো নানা জায়গায় নেওয়া হচ্ছে। এর আগে, ইন্দোনেশিয়ার ইয়োগিয়াকার্তাতে এই ধরনের পরীক্ষার পর ডেঙ্গু সংক্রমণ ৭৭ শতাংশ কমে যায়। ব্রাজিলে এই হার ৩৮ শতাংশ।

বিজ্ঞানীরা বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গুরোধে নানা ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ওয়ার্ল্ড মসকিটো প্রোগ্রামের প্রস্তাবিত সমাধান ভালো উপায় হলেও দীর্ঘস্থায়ী না-ও হতে পারে। ব্রাজিলের জীববিজ্ঞানী রাফায়েল মাসিয়েল দে ফ্রাইটাসের মতে, যেহেতু ডেঙ্গুর প্যাথোজেন সময়ের সাথে সাথে বিবর্তিত হতে পারে। ফলে একটা সময়ের পর তারা উয়োলবাখিয়া ব্যাক্টেরিয়ার প্রভাব কাটিয়ে ফেলার ক্ষমতাও অর্জন করে নিতে পারে।

ফ্রাইটাস যোগ করেন, আমি এটা বলবো না যে, উয়োলবাখিয়া পন্থা ডেঙ্গুর আজীবনের সমাধান। কিন্তু অবশ্যই এটা সমাধানের জন্য অন্তত একটা ভালো উত্তর।

এই উয়োলবাখিয়া পন্থার আরেকটি দুর্বলতা তার বিপুল খরচ। তাছাড়া, এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয় যে এই পরীক্ষার সাথে ঠিক কীভাবে সম্পর্কিত ডেঙ্গু সংক্রমণ। অন্যদিকে, কয়েকটি স্থানে ব্যাক্টেরিয়াযুক্ত মশা ছড়িয়েও কমেনি ডেঙ্গুর হার। ফলে উন্নতশীল দেশগুলিতে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে এই প্রকল্প, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |