নির্বাচনে কী বিএনপি আসবে?
অক্টোবরেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে, তেমনটাই জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ হবে নির্বাচন। তাই নির্বাচনকে ঘিরে রাজনীতির বাতাস এখন গরম হচ্ছে। কেমন হবে নির্বাচন? বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নাকি অন্য কোনও সরকার ব্যবস্থায় হচ্ছে নির্বাচন? ভাঙা-গড়ার রাজনীতিতে দল-জোটগুলোর ভূমিকা কী হবে, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া কতদূর এগোবে, আওয়ামী লীগ কতখানি ছাড় দেবে, সবচেয়ে বড় যে প্রশ্ন, শেষ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত কী আদৌ নির্বাচনে অংশ নেবে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও দলীয় নেতারা বলছেন, অক্টোবরের মাঝামাঝি সরকারবিরোধী আন্দোলন আরও জোরালো হবে। তফসিল ঘোষণাকে ঘিরে মাঠ গরম রাখতে চায় বিএনপি। সেজন্যে সঙ্গে রাখতে চাইবে জামায়াতকে। তবে নতুন করে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কার্যক্রমের ওপরেও নির্ভর করছে কী করবে বিএনপি। নির্বাচনকালীন সরকারে যদি শেখ হাসিনাই প্রধান থাকেন এবং বিরোধীপক্ষ যদি নির্বাচনে অংশ নিতে চায় তাহলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারে। আন্দোলন অক্টোবরের শেষ দিকে শুরু হতে পারে, যা চূড়ান্ত রূপ নেবে নভেম্বর-ডিসেম্বরে।
বিএনপির একটি সূত্র বলছে, কৌশল হিসেবে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারে। কারণ, ড. কামালের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রধান শর্তই ছিল জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। তবে ভোটের মাঠে রাজনৈতিক শক্তি দেখাতে জামায়াত ছাড়া বিএনপি কতটুকু শক্তি দেখাতে পারবে, তা নিয়েও শঙ্কা আছে। শেখ হাসিনার সরকার পতনের জন্য জাতীয় ঐক্যের সঙ্গে বিএনপির জোটবদ্ধ হওয়া যেমন জরুরি, তেমনি আন্দোলনের মাঠে জামায়াতের সমর্থন পাওয়াও জরুরি। এ পরিস্থিতিতে বিএনপিকে নিতে হবে কঠিন সিদ্ধান্ত।
এ বিষয়ে কথা হয় ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, বিএনপি জামায়াত চাইছে যে কোনো মূল্যে সরকারের পতন ঘটাতে। ড. কামালের জোট বলছে, ক্ষমতায় গেলে তারা নাকি প্রথম দুই বছরেই সব ঠিক করে ফেলবেন। আমাদের ধারণা, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের মূল টার্গেট শেখ হাসিনা। গণতন্ত্রের কথা তারা মুখে বলছেন। কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ড থেকে ভিন্ন অর্থ মিলছে। তবে আমরাও চাই বিএনপিসহ সব দল নির্বাচনে আসুক।
-------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : পাঁচ প্রার্থী নিয়ে বেকায়দায় আওয়ামী লীগ
-------------------------------------------------------
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, বিএনপির নতুন জোট গঠনের তোড়জোড়কে আমরা সহজভাবেই দেখেছি। বিষয়টি জাতিকে ভাবিয়ে তুলেছে, সঙ্গে আওয়ামী লীগকেও। গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি আন্দোলন সংগ্রাম করতেই পারে। তবে নির্বাচনে না এসে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র স্বাভাবিকভাবে নেয়া হবে না বলেও মত দেন তিনি।
এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সম্প্রতি এক সমাবেশে এমনটা আভাস দিয়ে বলেছেন, নেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। এটা হচেছ নির্বাচনে আমাদের যাবার প্রথম শর্ত। তারপর বলছি যে, নির্বাচন করতে হলে পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনকালীন একটা নিরপেক্ষ সরকার থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং সব দলকে সমান সুযোগ দিতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচনের সময়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।
সবশেষ গত শনিবার জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত (বিএনপি প্রধান) খালেদা জিয়া কারাগার থেকে খবর পাঠিয়েছেন, যে কোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই সরকারকে সরিয়ে দিতে না পারলে দেশের স্বাধীনতা থাকবে না। এই ঐক্যের প্রধান দাবি সরকারের পতন, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন গঠন করতে হবে। ইভিএম দিয়ে নির্বাচন করা যাবে না।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, আগে দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। তারপরে নির্বাচনী আলাপ হবে। দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তি ছাড়া, সরকারের পতন ছাড়া আমরা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে এখনও ভাবছি না।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক’র (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার আরটিভি অনলাইনকে বলেন, এখন সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এই মুহূর্তেই দেশের রাজনীতিবিদদের দায়িত্বশীল হয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলা উচিত।
তিনি বলেন, একটি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন মেয়াদে নতুন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিক- এটাই তো দেশবাসী চায়। সেই সরকার হোক বিএনপির কিংবা আওয়ামী লীগের, তাতে কিছু যায় আসে না। ভালো নির্বাচন হলে ভালো সরকার হবে এতে আর সন্দেহ কী! নির্বাচনে বিএনপি আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন বদিউল আলম মজুমদার।
আরও পড়ুন :
- যোগ্য নারী প্রার্থীকেই প্রাধান্য দেবে আ.লীগ হাইকমান্ড
- বিএনপির সমাবেশের দিনে মাঠ দখল রাখার ঘোষণা ১৪ দলের
এসজে/এমকে
মন্তব্য করুন