লেবানন বিস্ফোরণ: বৈরুতের ঘটনার পর বাংলাদেশের গুদামের অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিয়ে উদ্বেগ
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বিস্ফোরণের পর থেকেই বিপজ্জনক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। বিভিন্ন দেশে এখনও বিপুল মজুত রয়েছে এ রাসায়নিকের। বাংলাদেশে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো বিপজ্জনক রাসায়নিক নিরাপদভাবে আমদানি ও গুদামজাত করা হচ্ছে কিনা তা তদারকি করার জন্য কর্মকর্তা রয়েছেন মাত্র পাঁচ জন। আর আমদানি করা এই রাসায়নিক গুদামজাত করার জন্য দেশের বন্দরগুলোতে কোন নিরাপদ ব্যবস্থা নেই বলে জানান কর্মকর্তারা।
এই ধরণের দাহ্য পদার্থের আমদানির অনুমতি দেয়া এবং নিরাপদভাবে এগুলো সংরক্ষিত হচ্ছে কিনা তা দেখাশোনা করার দায়িত্বই হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বিস্ফোরক পরিদপ্তরের। কিন্তু অপ্রতুল জনবলের কারণে এরা দায়িত্বপালন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন বলে স্বীকার করেছে মন্ত্রণালয়ে সূত্র।
ছাড়পত্র পাওয়া আমদানির বাইরে স্থানীয়ভাবে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উৎপাদন করা হচ্ছে কিনা কিংবা সেগুলো নিরাপদভাবে বিক্রি, পরিবহণ কিংবা গুদামজাত করা হচ্ছে কিনা, সে সম্পর্কে জানতে চাইলে- কর্মকর্তারা কোনও তথ্য দিতে পারেনি।
বিস্ফোরক পরিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, ঢাকায় দুজন বিস্ফোরক পরিদর্শক কাজ করছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা এবং রাজশাহীতে একজন করে বিস্ফোরক পরিদর্শক কাজ করছেন। এসকল জায়গায় এক থেকে দুইজন করে সহকারী পরিদর্শকও রয়েছেন।
লেবাননের রাজধানী বৈরুতের অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট গুদামে ভয়ানক বিস্ফোরণের ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে অন্তত চারজন ছিলেন বাংলাদেশি। পাশাপাশি এই ঘটনায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর অন্তত ২১ জন সদস্য আহত হন এবং নৌবাহিনীর একটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নৌবাহিনীর জাহাজটি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের অংশ হিসেবে সেখানে দায়িত্ব পালন করছিল।
বৈরুতের বিস্ফোরণের পরপরই বাংলাদেশে এর ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছে বিস্ফোরক পরিদপ্তর। এর প্রধান মো. মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, বৈরুতের ঘটনার পর সারা দেশে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, স্থল, নৌ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের মতো নিয়ন্ত্রিত পদার্থ আমদানি হলে তা যেন অতিদ্রুত বন্দর এলাকা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়।
তিনি বলেন, বিস্ফোরকদ্রব্য গুদামজাত করার জন্য বন্দরগুলোতে যেমন বিশেষ ধরনের 'ম্যাগাজিন' বা অস্ত্র-গুদাম থাকে, সেটা বন্দরগুলোতে নেই বলেই ঝুঁকি কমানোর জন্য আমরা এই পরামর্শ দিয়েছি।
মো. মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, এ ধরনের রাসায়নিক আমদানির জন্য এই মুহূর্তে তিনটি বেসরকারি কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এরা মূলত: মেডিকেল চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন উপাদান তৈরি করে, যার মধ্যে রয়েছে নাইট্রাস অক্সাইড বা 'লাফিং গ্যাস' যেটি দাঁতের ডাক্তাররা ব্যবহার করেন।
সরকারি পর্যায়ে শুধুমাত্র মধ্যপাড়া গ্র্যানাইট মাইনিং কোম্পানির অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট আমদানির অনুমতি রয়েছে বলে তিনি বলেন।
এই কোম্পানি খনি-গর্ভে বিস্ফোরণের বারুদ হিসেবে এগুলো ব্যবহার করে থাকে।
কিন্তু এটা কীভাবে নিরাপদ রাখা হবে, কতদিন ধরে রাখা যাবে তা নিয়ে কঠোর নিয়মনীতি রয়েছে।
অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট গুদামের স্থানও অনেক সময় গোপন রাখা হয়, কারণ ১৯৭০-এর দশক থেকে ঘরে তৈরি বোমা বা হাতবোমা তৈরির উপাদান হিসেবে এটা ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট তাই বেশ জনপ্রিয়। খবর বিবিসি বাংলা।
এসএ/এসএস
মন্তব্য করুন