রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিস্তব্ধ নগরীতে মানুষের সঙ্গে যেন ঘুমের প্রস্তুতি নেয় লাল-নীল জাদুর শহর ঢাকাও। উষ্ণতার ছোঁয়ায় মানুষ যখন ঘুমে বিভোর, তখন শহরে জীর্ণ কম্বল মুড়িয়ে কনকনে শীতের সঙ্গে যুদ্ধ করে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া লাখও মানুষ। একটু উষ্ণতার জন্য অপেক্ষায় থাকে সকালের সূর্যের।
ঘড়ির কাটায় রাত ১২টা। শতছিন্ন একটি কাঁথায় গা মুড়িয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের ব্যর্থ চেষ্টা আছমা বেগমের। অপেক্ষা কখন সকাল হবে। এ যেন সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘শীতের সূর্য’ কবিতার বাস্তব চিত্র। তার ভাষায় হে সূর্য! তুমি তো জানো,/ আমাদের গরম কাপড়ের কত অভাব!/ সারারাত খড়কুটো জ্বালিয়ে,/ এক টুকরো কাপড়ে কান ঢেকে,/ কত কষ্টে আমরা শীত আটকাই!’
কনকনে এই শীতে আছমা বেগমের মতো ছিন্নমূল মানুষের রাত কাটে অবর্ণনীয় কষ্টে। রাজধানীজুড়ে এসব সহায়-সম্বলহীনদের কেউ কাগজ বা হালকা কাপড় পেতে, কেউবা আবার খোলা রাস্তায়, ফুটপাতে কিংবা গাছের নিচে শুয়েই রাত কাটিয়ে দেয়।
রাজধানীর সদরঘাট, যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ ও গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় রাতের হিমশীতল ঢাকার আকাশের নিচে শুয়ে আছে অসংখ্য ছিন্নমূল মানুষ।
ঘড়ির কাটায় রাত দেড়টা। দিনভর শহর দাপিয়ে রিকশা নিয়ে গ্যারেজে ফিরেন ওসমান আলী। হাড় কাঁপুনি শীতে যাত্রী কমে যাওয়ায় আয়ও কমেছে তার।
কারওয়ান বাজার, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন রিকশার গ্যারেজ চায়ের দোকান গুলোতে ঘুরে দেখা যায়, সারাদিন খেটে রাতের ঘুমানোর জায়গা নেই অনেকের।
কংক্রিটের এই নগরীতে আছমা, ওসমানের মতো যাদের তিনবেলা খাবার জোটে না, কিংবা দিনভর খেটেও গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই, তাদের সহায়তায় সামর্থ্যবানদের দাঁড়াতে হবে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই। এমনটাই প্রত্যাশা সচেতন মহলের।