বাংলাদেশে কাঁকড়ার ব্যবসার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। লাইসেন্সটি ইস্যু করা হয়েছে ১১ মার্চ বিকেলে।
লাইসেন্স অনুযায়ী, ব্যবসার নাম রাখা হয়েছে ‘ট্রাম্প এসোসিয়েশন’। লাইসেন্সে ট্রাম্পের পরিচয়, বাবার নাম ফ্রেড ট্রাম্প এবং মায়ের নাম ম্যারি অ্যান ম্যাকলিওড ট্রাম্প উল্লেখ করা হয়েছে, যা মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাস্তব তথ্যের সঙ্গে মিলে যায়।
এটি একটি অদ্ভুত ঘটনা হলেও সত্যি, ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগ এই লাইসেন্সটি ইস্যু করেছে। তবে, লাইসেন্সে ট্রাম্পের হাস্যোজ্জ্বল ছবি এবং ব্যবসার ঠিকানা ঢাকার আফতাবনগরে দেওয়া হয়েছে, যা কিছুটা বিস্ময়কর। লাইসেন্সে মালিকের ঠিকানা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে হলেও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ঢাকার আফতাবনগরের ৪০/৪২ নম্বর বাড়িতে উল্লেখ করা হয়েছে। আর ব্যবসার ধরন দেওয়া হয়েছে কাঁকড়া মাছ বিক্রেতা।
এখানেই শেষ নয়, ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ ও স্টারলিংকের মালিক ইলন মাস্কের নামে রেস্টুরেন্ট ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ট্রেড লাইসেন্সের আবেদন করা হয়েছে। ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করলেও তাতে অনুমোদন দিয়েছে ডিএনসিসি।
সম্প্রতি স্বয়ংক্রিয় ই-ট্রেড লাইসেন্স সেবা চালু করে ডিএনসিসি। যেখানে একজন নাগরিক নিজেই আবেদন করে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা জমা দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স বের করতে পারছেন।
ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, আগের পদ্ধতিতে কোনো আবেদন এলে দায়িত্বপ্রাপ্ত লাইসেন্স ও বিজ্ঞাপন সুপারভাইজাররা প্রথমে মাঠপর্যায়ে গিয়ে যাচাই-বাছাই করতেন। সবকিছু সঠিক থাকলে আবেদনকারীকে লাইসেন্স দেওয়া হতো। কিন্তু তথ্য যাচাইয়ের প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে তুলে দেওয়ায় অনেকে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে লাইসেন্স করে নিচ্ছেন। লাইসেন্স পেতে আগে বিভিন্ন সংস্থা কিংবা অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতি বা ছাড়পত্র প্রয়োজন হতো। কিন্তু এখন সেগুলো ছাড়াই ই-ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হয়ে যাচ্ছে। ফলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ইস্যু হওয়া অনেক ই-ট্রেড লাইসেন্সে এমন অসংগতি পাওয়া যাচ্ছে।
স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে লাইসেন্স করার সুযোগ দেওয়ার পর থেকে ভুয়া ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই ই-ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান। ট্রাম্পের নামে ইস্যু হওয়া ই-ট্রেড লাইসেন্সটি সেই ঘটনারই একটি উদাহরণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তবে তিনি দাবি করেন, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামেও যে ই-ট্রেড লাইসেন্স হতে পারে, তা ডিএনসিসির কর্মীরা করে দেখিয়েছেন।
মনিরুজ্জামান বলেন, আমাদের স্টাফরাই (কর্মীরা) ট্রায়াল (পরীক্ষা) করার জন্য ওটা (ট্রাম্পের নামে ই-ট্রেড লাইসেন্স) করেছেন। তারা ট্রায়াল করে দেখিয়েছেন, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামেও ট্রেড লাইসেন্স হয়ে যাচ্ছে। ইলন মাস্কের নামেও হয়ে যাচ্ছে। এটা করা হয়েছে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে যে ভুয়া ই-ট্রেড লাইসেন্স বের করা যায়, সেটা বোঝানোর জন্য।
ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেছেন, সেবা সহজ করতে প্রক্রিয়া সরল করা হয়েছে। তবে বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ লাইসেন্সের ক্ষেত্রে তদন্ত হয়।
কিন্তু নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মোহাম্মদ খান বলছেন, যাচাই ছাড়া লাইসেন্স দেওয়া নগর ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে।
ট্রেড লাইসেন্সের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র, ঠিকানার প্রমাণ, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ ছাড়পত্র দরকার। কিন্তু যাচাই ছাড়া লাইসেন্স ইস্যু হওয়ায় ১০ গুণ বেশি লাইসেন্স ইস্যু হচ্ছে।
আরটিভি/একে/এস