উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জে প্রমত্তা যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলেছে। প্রবল বেগে বইছে বিপদসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে।
যমুনার অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি ও প্রবলস্রোতে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের শিমলা পাঁচঠাকুরীর মাটির অংশসহ কংক্রিটের পুরোটাই নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার সঙ্গে ভয়াবহ ভাঙনে মুহূর্তের মধ্যে পাঁচঠাকুরী পাঁচপাড়া গ্রামের আড়াই শত বাড়িঘর, জমিজমা, মসজিদ, মুরগির খামার, গাছাপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন আতংকে আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামের সহস্রাধিক বাড়ি ঘরের মানুষেরা। ভয়াবহ নদী ভাঙনে নিঃস্ব-সর্বস্বান্ত অসহায় মানুষদের বুকফাটা কান্না আর আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠছে।
শুক্রবার (২৪ জুলাই) দুপুর থেকে আজ রোববার (২৬ জুলাই) সকাল পর্যন্ত সদর উপজেলার সিমলা ও পাঁচঠাকুরি এলাকার প্রায় ১০০ মিটার বাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতি ও অবহেলার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী।
ভাঙন কবলিতরা অভিযোগ করে বলেন, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সিমলা-পাঁচঠাকুরী স্পারে ১ জুন ধস নামে। প্রায় ৭০ মিটার এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বালির বস্তা ফেলে কোনও রকমে বাঁধটি সংস্কার করা হলেও তিন সপ্তাহের মাথায় স্পারের মূল স্যাংকসহ অধিকাংশ এলাকা নদী গর্ভে চলে যায়। এর পর থেকেই মাঝে মাঝে এই এলাকায় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে থাকে একর পর এক বাড়িঘর ও স্থাপনা।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার দুপুরে হঠাৎ করে শুরু হয় ভয়াবহ ভাঙন। রোববার সকাল পর্যন্ত দুই শতাধিক বাড়িঘর, মসজিদ, আসবাবপত্র, গবাদি পশু, ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এসময় ভাঙন কবলিতদের আহাজারি ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। ঘরবাড়ি রেখে জীবন নিয়ে পালিয়ে এসেছেন অনেকে। ভাঙন আতংকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে অনেকে। যমুনার আকস্মিক ভাঙনে সহায় সম্বল আর মাথা গোজার শেষ আশ্রয়টুকু হারিয়ে অসহায় মানুষগুলো আশ্রয় নিয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের খোলা আকাশের নিচে, এ যেনো এক অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। এমন তীব্র ভাঙন এর আগে তারা কখনো দেখেনি।
অন্যদিকে তৃতীয় দফায় টানা চতুর্থ দিনেও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। বন্যা কবলিত জেলার ৬টি উপজেলা সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়ার সাড়ে তিন লাখ বানভাসি পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবারের সংকট, টয়লেট, পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যাসহ সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
রোববার (২৬ জুলাই) সকালে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম রফিকুল ইসলাম জানান, আজ সকালে যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ২৩ মিটার। যা বিপদসীমার ৮৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২ সেন্টিমিটার।
অপরদিকে কাজিপুর পয়েন্টে রেকর্ড করা হয়েছে ১৬ দশমিক ২৪ মিটার। ২৪ ঘণ্টায় ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহিম বলেন, যমুনায় পানি ধীরগতিতে বাড়ছে। বন্যার্তদের জন্য ২৬৭ মেট্রিক টন চাল, ৩৯৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার ছাড়াও শিশুখাদ্য ও গবাদিপশুর খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা করে মোট ৪ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
এসএস