শরীয়তপুরে ৩৭টি স্থানে ব্যাপক নদী ভাঙন
শরীয়তপুরে পদ্মা নদীর বন্যার পানি কিছুটা উন্নতি হলেও দেখা দিয়েছে ব্যাপক নদী ভাঙন। শরীয়তপুরের পাঁচটি উপজেলার ৩৭টি স্থানে নদী ভাঙনে বসত বাড়ি হারিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন সাড়ে ৭শ’ পরিবার। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি নদী ভাঙন হচ্ছে নড়িয়া উপজেলায়। গত দশদিনে প্রায় ৩শ’ বসত বাড়িসহ একটি প্রাইমারি স্কুল ও চারটি মসজিদ সম্পূর্ণরূপে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
ঈদের দিনেও ঘর ভাঙার কাজে ব্যস্ত ছিলেন পদ্মা পাড়ের অসহায় মানুষগুলো। ঈদের আনন্দ ছিল না তাদের মাঝে। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে এসব মানুষের। ২০১৮ সালে সর্বকালের ভয়াবহ নদী ভাঙন হয়েছিল শরীয়তপুরের নড়িয়ায়। সে সময় অসংখ্য বহুতল ভবন ও কাঁচা-পাকা সড়ক, মসজিদ-মন্দির, বাজারসহ সাড়ে ছয় হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবছর আবার নতুন করে দেখা দিয়েছে একই নদী ভাঙন।
এ বছর বর্ষার প্রথম থেকেই নড়িয়া উপজেলার কীর্তিনাশা নদীর বৈশাখীপাড়া, ঢালীবাড়ি মসজিদ, নড়িয়া ব্রিজের দুই পাশসহ পাঁচটি পয়েন্টে, ঘড়িসার বাংলা বাজার এলাকায় তিনটি পয়েন্টে, সুরেশ্বর দরবার শরীফের স্থায়ী বাঁধের দুইটি পয়েন্টে ধসে পরে। এছাড়া চরআত্রা ইউনিয়নের চর এলাকায় একতলা ও দোতলা বিশিষ্ট দুইটি ভবনসহ একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৪টি মসজিদ সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। এখন ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে আরও একটি মসজিদ। তাছাড়া আরও ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে সদর উপজেলার কীর্তিনাশা নদীর কোটাপাড়া, মুন্সীর হাট, ভেদরগঞ্জ উপজেলা গাজীপুর, তারাবুনিয়া, কাচিকাটাসহ ১১টি পয়েন্টে, গোসাইরহাট উপজেলার আলালপুর এলাকায় ডামুড্যা-সুরেশ্বর নদীর চারটা পয়েন্টে, জাজিরা উপজেলার মাঝির ঘাটের জিরো পয়েন্টে, পদ্মা সেতুর রক্ষা বাঁধে, বড় কান্দি গ্রামে নাজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়। দূর্গার হাট ও কুন্ডের চর ইউনিয়নের সিডার চর এলাকায় অব্যাহত ভাঙনে হুমকিতে আছে করপাড়া গুচ্ছগ্রাম শত শত পরিবার। তবে ভাঙন রোধে সর্ব শক্তি নিয়োগ করে জিও ব্যাগ ডামপিংসহ সব ধরণের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।
নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সবুজ বলেন, আমাদের এই পদ্মার চরাঞ্চলে কোনও দিন বিদ্যুৎ আসবে বা বেড়িবাঁধ হবে তা আমরা কোনদিন স্বপ্নেও ভাবিনি। কিন্তু আমাদের এই চরাঞ্চলের ছেলে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী সেই স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন এবং তা বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন। তার বদৌলতে আমাদের এখানে বিদ্যুৎও আসছে এবং বেড়িবাঁধের কাজও শুরু হয়েছে। আমাদের কপাল খারাপ স্থায়ী বাঁধের কাজ শুরু হওয়ার আগেই এবার বর্ষায় গত কয়েকদিন যাবত শুরু হয়েছে ব্যাপক নদী ভাঙন।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম. আহসান হাবীব জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি তিন সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এক সপ্তায় পানি কমেছে ১১ সেন্টিমিটার। এতে বন্যার পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দেখা দিয়েছে ব্যাপক নদী ভাঙন। ইতোমধ্যে শরীয়তপুর জেলার ৩৭টি স্থানে থেমে থেমে নদী ভাঙছে। এরই মধ্যে সেখানে গত ১২ দিনের ভাঙনে প্রায় ৩শ’র মতো পরিবার গৃহহীন হয়েছে। তবে ভাঙন রোধে ভাঙনপ্রবন প্রতিটি স্থানেই বালু ভর্তি জিও ব্যাগ, জিও টিউব ও ব্লগ ডাম্পিং কার্যক্রম অব্যাহত আছে। পানিসম্পদ উপমন্ত্রী সবসময় খোঁজ-খবর রাখছেন এবং দু-চারদিন পর পর স্ব-শরীরে এসে কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করছেন।
জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, শরীয়তপুরে কয়েকদিন যাবত বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। প্রাপ্ত তালিকা অনুযায়ী গত ১০ দিনের নদী ভাঙনের শিকার হয়ে গৃহহীন হয়েছেন ৬৮৪ জন পরিবার। তবে ভাঙন অব্যাহত থাকায় এর সংখ্যা এখন আরও বেড়েছে। ভাঙনকবলিত প্রত্যেক পরিবারের জন্য তিন হাজার করে নগদ টাকা ও চাল বিতরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভাঙনকবলিতদের জন্য ৯ লাখ টাকা ও ৭৩০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
তিনি আরও বলেন, এর আগে ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার চেয়ারম্যান স্ট্যাশন বাজারে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ পরিবারের প্রত্যেককে দুই বান্ডেল ঢেউটিন ও ৬ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে। আরও বরাদ্দের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আশা করি শীঘ্রই পেয়ে যাব। এছাড়া বন্যা কবলিত হয়ে পানিবন্দি রয়েছেন ৬০ হাজারেরও বেশি পরিবার। তাদের মাঝেও ত্রাণ এবং শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, সারাদেশে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে জরুরি ব্যবস্থাসহ স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় শরীয়তপুরের নড়িয়ায়ও ইতোমধ্যে ভাঙন রোধে জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে জিওব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। এছাড়াও অতি অল্প সময়ে বাস্তবায়নযোগ্য ছোট প্যাকেজের মাধ্যমে ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নড়িয়া উপজেলার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন পদ্মার চরের চরাত্রা ইউনিয়নের বসাকেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুইটি পাকা ভবন নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার খবর পেয়ে আমি ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে তাৎক্ষণিক চরআত্রা-নওয়াপাড়ার ভাঙ্গন কবলিত ক্ষতিগ্রস্ত ১৫০ পরিবারকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৫ হাজার করে নগদ অর্থ, শাড়ি, লুঙ্গি ও সরকারি খাদ্য সহায়তা সামগ্রী বিতরণ করেছি।
এসএ/এসএস
মন্তব্য করুন