প্রাণের মায়ায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বৃদ্ধ কৃষক সোরহাব
চাদাঁ না দেওয়ায় বখাটেরা কুপিয়ে জখম করেছে ৬৭ বছর বয়সী সোরহাব হোসেনকে। ফের হামলার ভয়ে প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার হাটিপাড়া ইউনিয়নের বনপারিল গ্রামের ওই বৃদ্ধ কৃষক।
সরেজমিনে কথা হয় ভুক্তভোগীর পরিবারের একমাত্র ছেলে মোস্তফা কুয়েত প্রবাসী। স্ত্রী, ছেলের বউ, এক নাতি ও এক নাতনি নিয়ে বাড়িতে বসবাস করেন তিনি। বাড়ির পাশেই কৃষি জমির পাশাপাশি ছোট বড় তিনটি পুকুর রয়েছে তার। তিন বছরের চুক্তিতে ৫০ হাজার টাকায় পার্শ্ববর্তী শিকারীপাড়া এলাকার সংকর মাঝিকে পুকুরগুলো লিজ দিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি বন্যার পানিতে ডুবে যায় সেই পুকুরগুলো। সেখানে ভেশাল দিয়ে মাছ শিকার করেন সংকর মাঝি ও তার লোকজন।
এই পুকুরে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে সোরহাবের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডা হয় এলাকার বখাটে যুবকদের। সোরহাবের কাছে চাঁদা হিসেবে দাবি করা হয় দুই লাখ টাকা। এই টাকা না দেওয়ায় দুই আগস্ট দুপুরে সোরহাবকে বাড়ি থেকে গলায় গামছা বেঁধে টেনে নৌকায় তুলে নিয়ে যায় দুলাল মোল্লার ভিটায়। ধারোলে অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং বাঁশ ও কাঠের বাটাম দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করে ওই বখাটেরা।
পরে গুরুতর আহতবস্থায় মৃত ভেবে তাকে ফেলে রেখে গেলে স্থানীয়রা সোরহাবকে উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে মঙ্গলবার রাতে মানিকগঞ্জ সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। এরপর থেকে আত্মীয় বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সোরহাব।
এ বিষয়ে আলাপ হলে সোরহাব হোসেন বলেন, চাঁদা না দেওয়ায় তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় নতুন একই এলাকার ওহাব আলীর ছেলে মিঠুন (২৪) এবং হৃদয় (২২), পান্নু বেপারীর ছেলে মিরাজ (২১), কিয়ামুদ্দিনের ছেলে বাবু (৪২), একু ইসলামের ছেলে আওয়াল (২১), ইউনুছ খানের ছেলে মিজান (২০) ও শাহীন (২২)।
সোরহাব হোসেনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, চোখের সামনে থেকে স্বামীকে তুলে নিয়ে মারধর করে ওইসব ছেলে-পেলেরা। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথেও বাঁধা দে তারা। পরে এলাকার লোকজনের সহায়তায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায় বিচার দাবি করেন তিনি।
সোরহাবে ছেলের বউ আকলিমা আক্তার বলেন, আমার স্বামী বিদেশ থাকে। আমার শশুরের একটাই ছেলে। ঘটনার দিন আমার শশুরকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মারধর করে। আবার বাড়িতে এসে হুমকিও দিচ্ছে মামলা করলে মাইরা লাশ গুম করে ফালামু এবং বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুরাই দিমু। আমরা এর বিচার চাই।
জেলে সুমন হাওলাদার বলেন, এলাকার লোকজন ওনাকে নৌকায় করে ভেশালে নিয়ে আসে। তারপর তাকে টেনে হিচরে নৌকায় তুলে পাশের ভিটায় নিয়ে যায়। আমরা ভয়ে ভেশাল থেকে লাফ দিয়ে পাট ক্ষেতের ভেতর দিয়ে দুরে চলে যাই। পরে শুনি ওই বৃদ্ধকে তারা অনেক মারধর করেছে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফরহাদ হোসেন বলেন, ব্যস্ততার কারণে সোরহাব হোসেনের অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করার সুযোগ হয়নি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের সঙ্গে হামলাকারীদের সকলের বাড়িতে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তারা দস্যু প্রকৃতির।
মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার-ইন-চার্জ (তদন্ত) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। দেখি কি অবস্থায় আছে।
পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম বলেন, করোনায় আক্রান্ত থাকায় থানার ১২ জন সদস্য আইসোলেশনে আছেন। এ কারণে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমাকে ফোন দিতে বলেন, আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব।
জেবি
মন্তব্য করুন