স্ত্রীর নামে জমি লিখে দেয়ায় ছেলেদের হাতে মৃত্যুর ভয়ে আছেন অসহায় বাবা
জমি লিখে নেওয়ার পর অসহায় বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন দুই ছেলে। নিরুপায় হয়ে তারা ঠাঁই নিয়েছিলেন খোলা আকাশের নিচে। শুক্রবার গ্রামবাসী জোর করে বাবা-মাকে শেষপর্যন্ত ছোট ছেলের বাড়িতে তুলে দেন। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ছোট ছেলের ঘরের একটি কক্ষে তাদের থাকতে দেয়া হয়েছে। তবে আশ্রয় মিললেও তাদেরকে মেরে ফেলতে পারেন তার ছেলে ও ছেলের বউরা এমন ভয়ে ভীত মা মেহেরুন বেগম।
শনিবার (২১ নভেম্বর) বাসাইল উপজেলার কাশিল ইউনিয়নের কামুটিয়া গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ন অবস্থায় ছোট ছেলের ঘরের একটি কক্ষে মেঝেতে শুয়ে আছেন বয়সের ভারে ন্যুব্জ আব্দুল খালেক (৭০)। পাশে বসেই কাঁদছেন তার স্ত্রী মেহেরুন বেগম (৬৫)। মেহেরুন বেগমের সাথে কথা বলতে গেলেই জোড়া হাতে অনুনয় বিনয় করে বলেন, কিছু কইয়া হারুমনা, আমগো মাইরা হালাইবো, বাবা তোমরা যাওগা। এমনটা বলতেই ছোট ছেলে কাদেরের স্ত্রী ঐ কক্ষে ঢুকে প্রতিবেদকের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা কি চান, ওনারা কি কইবো, যা কওয়ার তাতো কাইল সামবাদিকগো কইছেই, এহন আমার কতা হুনুন।
তিনি বলেন, শ্বশুরের (আব্দুল খালেক) বাড়ি প্রথমে আমাগো গেদির বাবা ও তার চাচা (বাবুল) দুজনের নামে লিখে দেন। আমার স্বামী তার অংশ বিক্রি করে বর্তমানে যে বাড়িতে আছি এখানে বাড়ি করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঐ বাড়ির জায়গা প্রতি শতাংশ দেড় লাখ টাকা করে স্থানীয় একজন কিনতে রাজি হয়। তখন আমার শাশুড়ি (মেহেরুন বেগম) আমার স্বামীকে বলেন, বাড়ির জায়গাটি তার বড় ছেলের কাছে বিক্রি করতে হবে। তার সাথে এবং আমার ভাসুর(বাবুল) এর সাথে মৌখিক চুক্তি হয়। যতদিন শ্বশুর-শাশুড়ি জীবিত থাকবেন ততদিন ঐ বাড়িতে তারা বসবাস করবেন। এরকম চুক্তির পর প্রতি শতাংশে ৪০ হাজার টাকা কমে ভাসুরের নামে লিখে দেন আমার স্বামী। এখন গ্রামের মানুষ জোর করে আমাদের বাড়িতে রেখে গেল। আমরাই খাবার দাবার দিতেছি। তবে শ্বশুর শাশুড়িতো আমার একার নয়, দুজনকে সমান খরচ বহন করার দাবি করেন তিনি।
স্থানীয় হজরত আলী বলেন, খালেক ভাই ও ভাবিকে তাড়ানোর জন্য তাদের ঘরের বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেন বড় ছেলে বাবুল। তখন তারা গ্রামের বিভিন্ন লোকের কাছে বলেছেন যাতে তাদের লাইনটি জোড়া দিয়ে দেয়। কিন্তু কোনো মতেই বাবুল বিদ্যুতের লাইন লাগাতে দেননি। খালেক ভাই চোখে দেখে না। বুইড়া মানুষ তিনি মনে করছেন, তিনি জীবিত থাকতেই এমন করে বড় ছেলে, মইরা গেলেতো তার স্ত্রীকে আরও কষ্ট দিব, তাই খালেক ভাইর নামে থাকা ২৮ শতাংশ আবাদি জমি তার স্ত্রীর নামে লিখে দেন।
এই লিখে দেওয়ার বিষয়টি বড় ছেলের কানে এলে, বড় ছেলে বাবুল তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। তারপর তারা আশ্রয় নেন খালেক ভাইয়ের স্ত্রী মেহেরুন ভাবীর বাবার বাড়িতে। সেখানে আড়াই মাস থাকার পর ৩-৪দিন আগে চলে আসেন তাদের ছোট ছেলের বাড়ির উদ্দেশে। তার ছোট ছেলে অভিমানে তাদের বাড়িতে উঠতে দেয় না। পড়ে গ্রামবাসী এসে তাদের ঐ বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করেন। বর্তমানে এখানেই আছেন। তবে মেহেরুন ভাবীর ভিতরে ভয় আছে, ছেলেরা না কিছু করে বসে। কারণ জোর করেই ছোট ছেলের বাড়িতে তাদের রাখা হয়েছে।
বড় ছেলে বাবুলের সাথে কথা বলতে গেলে কাউকেই বাড়িতে পাওয়া যায়নি।
কাশিল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা খান বাহাদুর বলেন, আমি খবর পেয়ে, সাথে সাথে গিয়ে ঐ বৃদ্ধ আর বৃদ্ধাকে তাদের ছোট ছেলের বাড়িতে তুলে দিয়ে আসছি। প্রতিবেশিদের খোঁজ খবর রাখতে বলছি। খুব শিগগিরই স্থায়ী সমাধান করার চেষ্টা চলছে।
পি
মন্তব্য করুন