ঢাকাশনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

ধর্ষণচেষ্টার মামলা করে সমাজচ্যুত গৃহবধূর পরিবার 

নোয়াখালী প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ ২০২১ , ১০:৫১ এএম


loading/img
ধর্ষণচেষ্টার মামলা করে সমাজচ্যুত গৃহবধূর পরিবার

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় এক গৃহবধূ (২৭) ধর্ষণচেষ্টার মামলা করায় ভুক্তভোগী পরিবারকে সমাজচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অব্যাহত হুমকির মুখে ওই গৃহবধূ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। 

বিজ্ঞাপন

 ভুক্তভোগী গৃহবধূর বাবা জানান, তার মেয়ে ধর্ষণচেষ্টার মামলা করায় সমাজপতিরা দুই সপ্তাহ ধরে তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করে। ছোট শিশুদের মাদরাসা এবং মসজিদে যেতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন তারা।

ভুক্তভোগী গৃহবধূর অভিযোগ, আমার মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আসামি কেফায়েত উল্যাহর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি কেফায়েত উল্যাহকে গ্রেপ্তার করে চরজব্বর থানা পুলিশ। কেফায়েত গ্রেপ্তার হওয়ার পর সমাজপতি মো. সোলেমান, মো. এমরাত সওদাগর তার পক্ষ নিয়ে সালিশ-বৈঠক করেন।

বিজ্ঞাপন

পরে তারা সকলে আদালত থেকে মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ করে। যদি মামলা না তুলে নেই তাহলে আমাকেসহ আমার পরিবারকে এই এলাকায় থাকতে দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমি এখন দুই সন্তান নিয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছি।

ভুক্তভোগী গৃহবধূ জানান, গত ৮ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে মো. বাহার (৪০) ও কেফায়েত উল্যাহ (৪৫) তার ঘরে ঢুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ধর্ষণচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তাকে কিল-ঘুষি মেরে একটি দাঁত ফেলে দেয়।

এ ঘটনার পর তিনি নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এ গত ১০ আগস্ট মামলা করেন। এ মামলার পর আসামি কেফায়েত উল্যাহর স্ত্রী বাদী হয়ে তার পরিবারের ৪ সদস্যের বিরুদ্ধে গত ১৯ আগস্ট একই আদালতে ধর্ষণের অভিযোগ এনে পাল্টা মামলা করেন।

বিজ্ঞাপন

গৃহবধূর মামলার আইনজীবী খালেদ মো. সাইফ উদ্দিন কামরুল জানান, এই গৃহবধূর মামলাটি আদালতের নির্দেশে দুই বার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হয়। পাল্টা মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশের হাতিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারকে (এএসপি) নির্দেশ দেওয়া হয়। দুই দফা বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনে এ নারীর মামলার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে আদালতে রিপোর্টে  উল্লেখ করা হয়।

নারীর স্বামী ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে করা পাল্টা মামলাটির তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে এএসপি আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

গৃহবধূর বাবার অভিযোগ, সমাজপতিদের সিদ্ধান্তের পর থেকে তিনি স্থানীয় মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে যান। সেখানে তাকে মেয়ের মামলা তুলে না নেওয়া পর্যন্ত মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়। বাড়ির ছোট ছেলে মেয়েদের স্থানীয় মাদরাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

এই অভিযোগের বিষয়ে সমাজপতি এমরাত সওদাগর বলেন,  মামলা দিয়ে এলাকাকে কলঙ্কিত করেছেন ওই নারী। সমাজের ৫৫ থেকে ৬০ জন বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদের সমাজচ্যুত করার। তবে মসজিদে নামাজ আদায় করতে এবং বাচ্চাদের মক্তব-মাদরাসা আসতে নিষেধ করা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন।

এই বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, আদালতে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলার বিষয়ে তিনি অবহিত আছেন। তবে পরিবারকে সমাজচ্যুত করার বিষয়টি তিনি অবগত নন। কাউকে সমাজচ্যুত করার কোনো সুযোগ নেই।

জিএম 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |