জীর্ণ পুরাতনকে পেছনে ফেলে আগামীর দিনগুলোতে অনিশ্চয়তা কাটিয়ে শুভময়তা ছড়িয়ে যাতে আশা জাগানিয়া হতে পারি, সে কথাই সবার মনে-প্রাণে আজ। শেষ হচ্ছে ১৪২৩ বঙ্গাব্দ- এরই ধারাবাহিকতার স্পষ্টতা দেখা যায় ব্যবসায়ীদের কারবারে। ‘হালখাতা’র আমন্ত্রণের সঙ্গে চুকিয়ে নিতে চান পুরাতন সব হিসাব-নিকাশ। আদরের সঙ্গে ঘরে তুলে নিতে চান নতুন বাংলা বছরকে।
এরই মধ্যে নতুন আশা ও স্বপ্নের সঙ্গে ১৪২৪ সনের যাত্রাকে সুগম করার সব প্রস্তুতি নিয়েছে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা। হালখাতা শব্দটি তাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে গেছে ওতপ্রোতভাবে। বঙ্গাব্দ বা বাংলা সনের প্রথম দিনে ব্যবসায়ীরা দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করে থাকেন।
শাখারী বাজারের মাসুরী জুয়েলার্সের মালিক জানান, বছরের প্রথম দিনে ব্যবসায়ীরা তাদের দেনা-পাওনার হিসাব সমন্বয় করে হিসাবের নতুন খাতা খোলেন। এজন্য খদ্দেরদের বিনীতভাবে পাওনা শোধ করার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। এ উপলক্ষে নববর্ষের দিন ব্যবসায়ীরা তাদের খদ্দেরদের মিষ্টিমুখ করিয়ে থাকেন। খদ্দেররাও তাদের সামর্থ অনুযায়ী পুরোনো দেনা শোধ করে দেন।
এদিকে জিয়া সিলভার হাউজের কর্ণধার জিয়া মালিক বলেন, আগেকার দিনে ব্যবসায়ীরা একটিমাত্র মোটা খাতায় তাদের যাবতীয় হিসাব লিখে রাখতেন। এই খাতাটি বৈশাখের প্রথম দিনে নতুন করে হালনাগাদ করা হতো। হিসাবের খাতা হাল নাগাদ করা থেকে ‘হালখাতা’র উদ্ভব। শুধু বাংলাদেশে নয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ছোট-বড় মাঝারি যেকোনো দোকানে এটি পালন করা হয়ে থাকে।
রাজধানীর তাঁতীবাজার, পাটুয়াটুলী, ইসলামপুর, নবাববাড়ী, বাদামতলী, সদরঘাট, ওয়ারী, বনগ্রাম, নবাবপুর রোড, সৈয়দ নজরুল ইসলাম রোড, জনসন রোড, সুভাষ বোস এভিনিউ, নর্থব্রুক হলসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যাবসায়ীরা পালন করবে হালখাতা আয়োজন।
মোগল সম্রাট আকবরের সময়ে প্রচলিত হিজরি চন্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সম্রাট নিজ দরবারের বিশিষ্ট জ্যোতিবিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরি চন্দ্র বর্ষপঞ্জীকে সৌর বর্ষপঞ্জীতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন। ৯৯২ হিজরি মোতাবেক ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবর এ হিজরি সৌর বর্ষপঞ্জীর প্রচলন করেন।
তবে তিনি ২৯ বছর আগে তার সিংহাসন আরোহনের বছর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এজন্য ৯৬৩ হিজরি সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়।
আগে বঙ্গে প্রচলিত শকাব্দ বা শক বর্ষপঞ্চির প্রথম মাস ছিল চৈত্র মাস। কিন্তু ৯৬৩ হিজরি সালের মুহররম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস। এজন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং পহেলা বৈশাখকে নববর্ষ ধরা হয়।
মোগল সময় থেকেই পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কিছু অনুষ্ঠান করা হতো। প্রজারা চৈত্রমাসের শেষ পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করতেন এবং পহেলা বৈশাখে জমিদাররা প্রজাদের মিষ্টিমুখ করাতেন এবং কিছু আনন্দ উৎসব করা হতো। এছাড়া বাংলার সব ব্যবসায়ী ও দোকানদার পহেলা বৈশাখে‘হালখাতা’করতেন। পহেলা বৈশাখ এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এটি মূলত রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন নিয়ম-কানুনকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে কাজ-কর্ম পরিচালনার জন্য নির্ধারিত ছিল।
যেদিন বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম মাস হয়ে এলো, সেদিন থেকেই বৈশাখের আনন্দটি নবান্নের আনন্দের চেয়েও আরো বড় আলাদা আঙ্গিক পেতে শুরু করে। মহাজন ও ব্যবসায়ীরা বৈশাখেই ‘হালখাতা’অনুষ্ঠান চালু করেন। হালখাতা হলো যে বছরটি চলে গেলো সেই বছরের হিসাবের যোগ বিয়োগ করে পুরনো খাতাটি তুলে রেখে নতুন বছরের প্রথম দিন নতুন খাতায় হিসাব চালু করা।
লাল সালু কাপড়ের মলাটে মোড়ানো নতুন এই হিসাবের খাতায় ওপরে লেখা হতো ‘এলাহী ভরসা।’এই এলাহী শব্দটিও সম্রাট আকবরের ‘তারিখ ই এলাহী’থেকে এসেছে বলে জানা যায়।
ইতিহাস থেকে আরো জানা যায়, আগে বৈশাখের অনুষ্ঠানের চেয়ে চৈত্র সংক্রান্তির অনুষ্ঠান ছিল আকর্ষণীয়। এই রেশ ধরেই বৈশাখের পদার্পণ। এখনও চৈত্রের শেষ দিনে গ্রামের বধূরা বাড়ি-ঘর পরিষ্কার করে। বিশেষ করে পানিতে মাটি মিশিয়ে ঘরের ভেতরে ও আঙ্গিনায় লেপে দেয়। উঠান ঝকঝকে পরিষ্কার করে রাখে।
গণভবনে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী
নগরবাসীকে নববর্ষের উপহার দিলাম
নববর্ষে ডিএমপি’র বিশেষ ট্রাফিক নির্দেশনা
নববর্ষের অনুষ্ঠানে ধূমপান করলে ব্যবস্থা
ওয়াই/ সি