৪ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকার এক বিরল গোলাপ
ভিডিওতে যে গোলাপ দেখছেন এর মূল্য ৪৩ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। যা টাকায় প্রায় ৪, ৭৭৪ কোটি। দেখে হয়তো বুজতেই পারছেন এটি কোনো সাধারণ গোলাপ নয়। মরুভূমি চিন্তা করতে চোখে ভেসে ওঠে ধূসর এক চিত্র। কিন্তু সেই মরুভূমির দেশ কাতারেই কি না ফুটেছে এক বিশাল গোলাপ! যার নাম ডেজার্ট রোজ।
এই গোলাপটি মূলত কাতারের জাতীয় জাদুঘর, যার প্রতিটি পাপড়ি দেখতে অবিকল গোলাপের মতো। এই জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হয় ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ। প্রায় ৪০ হাজার বর্গ মিটার এলাকাজুড়ে এই স্থাপত্যটি তৈরি হতে সময় লেগেছে প্রায় এক দশক, খরচ হয়েছে প্রায় ৪৩ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার! যা টাকায় ৪ হাজার ৭৭৪ কোটি। ফরাসি স্থপতি জ্যঁ ন্যুভেলের নিখুঁত নকশায় তৈরি এই জাদুঘরটি দেখতে যেন সত্যিকারের এক বিশাল গোলাপ।
কিন্তু কেন এর নাম ডেজার্ট রোজ? কারণ এটি অনেকটা মরুভূমির গোলাপের মতো। কোন গোলাপ? বলছি, মরুভূমিতে জন্মানো স্যান্ড রোজ বা বালুর গোলাপ আসলে কোনও ফুল নয়। কাতারের মরুভূমির জিপসাম আর বালু মিলে বিশেষ ধরনের পাথরের স্তূপ তৈরি করে, যা দেখতে অনেকটা গোলাপ ফুলের মত। এই প্রাকৃতিক আকর্ষণ থেকেই জাদুঘরের নাম ডেজার্ট রোজ রাখা হয়।
জাদুঘরের ভেতরে গেলে চোখের সামনে ভেসে উঠবে কাতারের তিনটি অধ্যায়। দেশটির প্রাচীনকালের গল্প, জীবনযাপনের বিবর্তন, আর আধুনিক কাতারের উত্থান। ১১টি গ্যালারি জুড়ে প্রদর্শিত এই গল্পগুলো দেখতে দেখতে মনে হবে যেন এক ঐতিহাসিক যাত্রায় পা রেখেছেন। প্রথম গ্যালারিতে দেখা যাবে ৭০০ মিলিয়ন বছর আগের পৃথিবী, ফসল আর বিভিন্ন জীবাশ্ম। এরপর ধীরে ধীরে ফুটে উঠবে কাতারের জনগণের জীবনযাপন, তাদের বেদুইন সংস্কৃতি, তেল ও গ্যাস আবিষ্কারের গল্প এবং আধুনিক উন্নয়নের চিত্র। এই জাদুঘরের আরেকটি বিশেষ দিক হলো, এখানে দেয়ালজুড়ে বিশাল পর্দায় চলমান ভিডিও আর ত্রিমাত্রিক ডায়োরামার মাধ্যমে ইতিহাসকে জীবন্ত করে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ভেতরের জায়গাগুলো যেমন আকর্ষণীয়, বাইরের পার্কটিও তেমনি মনোমুগ্ধকর। পার্কে ১১৪টি ঝর্ণা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি কৃত্রিম হ্রদ, যার নাম আলফা। এই বিশাল পার্কটিতে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে সবুজ গাছপালা আর খেজুর গাছের সারি। ১ লাখ ১২ হাজার বর্গমিটারের এই পার্কে কাতারের মরুর মাঝে এক চমৎকার সবুজ পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
এছাড়া, জাদুঘরে রয়েছে শিল্পকর্ম, প্রাচীন পাণ্ডুলিপি, এবং দর্শনার্থীদের জন্য অসাধারণ এক গিফট শপ। কাঠ দিয়ে তৈরি শপটি দেখতে থ্রি-ডি ধাঁধার মতো, যা মনোমুগ্ধ করে দর্শকদের। এখানে কাতারের ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্ম থেকে শুরু করে ছোট ছোট উপহার সামগ্রী সবই পাওয়া যাবে।
জাদুঘরের এই মনোমুগ্ধকর পরিবেশ শুধু কাতারের ঐতিহ্য নয়, বরং তাদের সংগ্রাম, অর্জন আর গৌরবের প্রতীক। আগামী বিশ্বকাপে কাতারে আগত অতিথিরা কাতারের জাতীয় জাদুঘরের এই বিস্ময়কর সৌন্দর্য দেখে আরও মুগ্ধ হবেন, এতে কোনও সন্দেহ নেই।
আরটিভি/এফআই
ভাইরাল হতেই হাঁস নিয়ে খাবার ডেলিভারি
সবার জীবনে একটু মজা দরকার—আর মজার মানে যদি হয় এক হাঁসের সঙ্গে মোটরসাইকেলে ডেলিভারি করা, তবে কেমন মজা হবে বলুন তো? অবাক লাগছে? এই ব্যক্তি ঠিক এমনটাই করছেন! তিনি রাস্তায় মোটরসাইকেলে খাবার ডেলিভারি করছেন, আর পেছনে বসে আছে হাঁস, যার নাম কুওয়াক কুওয়াক। হাঁস আর মানুষের এই অদ্ভুত জুটি শহরের রাস্তা ঘুরে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছে খাবার। কিন্তু হয়ত ভাবছেন এ আর এমন কি?
খাবার ডেলিভারি তো অনেকেই করেন, কিন্তু এই ব্যাক্তি সেই সাধারণ কাজকেই অসাধারণ করতে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন হাঁস। শুরুতে একটি হাঁস থাকলেও পরে তিনি আরও একটি হাঁস যোগ করেছেন যার নাম কিক কিক! কুওয়াক কুওয়াক ও কিক কিককে নিয়ে তারা রীতিমতো সোশ্যাল মিডিয়ায় সেলিব্রেটি বনে গেছেন। আর এতে বেড়েছে তার ডেলিভারির সংখ্যাও।
এই গল্পটি ফিলিপাইনের। এখানে ডেলিভারি ড্রাইভার ক্রিশ্চিয়ান নাভারো লাকসন ক্রিশ্চিয়ান আর তার হাঁস কুওয়াক কুওয়াক মিলে শহরের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে খাবার পৌঁছে দেয়। মজার বিষয় হলো, তারা দুজনেই এক রকম পোশাক পরে ডেলিভারি করতে বের হয়! মোটরসাইকেলে করে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে খাবার পৌঁছে দেওয়ার সময় তারা শুধু খাবার নয়, অসংখ্য মানুষের মনও জয় করে।
ভিডিওতে দেখা যায়, কখনো রাস্তায়, কখনো তারা শপিং মলে হাঁটছে, ডেলিভারি দিচ্ছে, আর আশেপাশের মানুষ মুগ্ধ হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে, আবার কেউ কেউ এসে সেলফিও তোলেন। আর তার এমন কান্ড রীতিমত তাকে জনপ্রিয় তুলেছে। এছাড়া এই হাঁসকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন ভিডিও প্রকাশ করলেও মূহুর্তে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ তাদের ভিডিও দেখেন।
ক্রিশ্চিয়ান জানান, আমার পরিকল্পনা ছিল মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো কিছু করা। আমরা যখন শপিংমলে ঢুকি, সবাই আমাদের দেখে হাসে। এটা আমাকে খুব আনন্দ দেয়, মন শান্ত করে, আর একটা ভালো অনুভূতি দেয়।
তিনি জানান, তিনি ভিন্ন কিছু করতে চেয়েছিলেন। এমনকি তিনি প্রথমে একটি ছাগল নেওয়ার কথা ভাবছিলেন, কিন্তু শেষে কুওয়াক কুওয়াকের মতো একটি হাঁসকেই বেছে নিলেন, যেটি আরও বেশি অসাধারণ। হাঁসকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার চ্যালেঞ্জ থাকলেও, ক্রিশ্চিয়ান কুওয়াক কুওয়াকের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।
আরটিভি/এফআই
শিশু শিকার করা হেনরি এখন পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ!
পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক কুমির হেনরি। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো তার রয়েছে ছয়টি স্ত্রী ও দশ হাজারেরও বেশি সন্তান। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি। তার বয়স ১২৩ বছর! হেনরির নামকরণ করা হয়েছে বিখ্যাত শিকারি হেনরি নিউম্যানের নামে। তার দৈর্ঘ্য ১৬ ফুট, যা প্রায় একটি মিনিবাসের সমান, আর ওজন ৭০০ কেজি।
হেনরির গল্প শুরু হয় বতসোয়ানার ওকাভাঙ্গো বদ্বীপে, যা এখন ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। ১৯০০ সালের ১৬ ডিসেম্বর হেনরির জন্ম। সেই সময়ে এটি ছিল এক মূর্তিমান আতঙ্ক। বিশাল তীক্ষ্ণ দাঁত ও চোয়ালের কারণে হেনরি পরিচিত ছিল। বিশেষ করে বতসোয়ানার আদিবাসীদের মধ্যে হেনরি শিশুদের শিকার করে খেয়ে ফেলার জন্য কুখ্যাত ছিল।
আদিবাসীরা বহুবার চেষ্টা করেছে হেনরিকে ধরার জন্য। তারা বিখ্যাত শিকারি হেনরি নিউম্যানের কাছে সাহায্যের জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু হেনরি নিউম্যান তাকে হত্যা করেননি। বরং, তিনি তাকে জীবিত ধরে নিয়ে যান এবং খাঁচায় বন্দী করে রাখেন। এই ঘটনা ঘটে ১৯ শতকের গোড়ার দিকে। সেই থেকে তিন দশক ধরে হেনরি দক্ষিণ আফ্রিকার স্কটবার্গের ক্রোকওয়ার্ল্ড কনজারভেশন সেন্টারে অবস্থান করছে। তার বিশাল আকৃতি ও বয়সের কারণে হেনরি এখানে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
হেনরি নীল কুমির প্রজাতির, যা সাব-সাহারা আফ্রিকার ২৬টি দেশে পাওয়া যায়। নীল কুমির তাদের মারাত্মক হিংস্র স্বভাবের কারণে শীর্ষ শিকারি হিসেবে কুখ্যাত। প্রতিবছর সাব-সাহারা অঞ্চলে শত শত মানুষের মৃত্যুর জন্য এদের দায়ী করা হয়। এই অবাক করা কুমিরের জীবনযাত্রা শুধু এখানেই থেমে নেই। হেনরিকে বিশ্বাস করা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত কুমির। এর চেয়ে বড় কুমিরও আছে– ক্যাসিয়াস নামে, যা বাস করে অস্ট্রেলিয়ায়। কিন্তু হেনরি তার বয়সের জন্যই বিশেষভাবে পরিচিত।
ছয় স্ত্রী ও দশ হাজার সন্তান আর এক অনন্ত জীবনের রহস্য নিয়ে আজও বেঁচে আছে হেনরি। প্রকৃতির রহস্যময় জগতে এমন গল্প হয়তো আরও অনেক আছে, যা এখনো উন্মোচন হয়নি।
আরটিভি/এফআই
দিনে দুইবার সাগরে ডুবে যায় রহস্যময় যে রাস্তা
ভিডিওতে যে রাস্তাটি দেখছেন, ভাবুন, সকালে এই রাস্তা দিয়ে অফিসে গেলেন, শুকনো পাকা রাস্তা। কিন্তু অফিস থেকে ফেরার পথে হঠাৎই দেখলেন, সেই রাস্তা আর নেই। চারদিকে নীল সমুদ্রের অথৈই জল। ভাবছেন, দৃষ্টিভ্রম নাকি? কিন্তু না, কিছুক্ষণ পর সাগরের বুকে আবারও ভেসে উঠল সেই রাস্তা।
ভাবছেন, একি ভূতুড়ে কাণ্ড, চোখকে হয়তো বিশ্বাস করাতে পারছেন না। অবিশ্বাস্য মনে হলেও ফ্রান্সে এমনই একটি রাস্তা আছে, যেটি দিনের বেশির ভাগ সময় পানির নিচে তলিয়ে যায়, আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য ভেসে ওঠে মানুষের চলাচলের জন্য। এই রাস্তা পার হওয়ার জন্য শুধু সময়জ্ঞানই নয়, প্রয়োজন সাহস আর রোমাঞ্চের। কারণ, একটি ভুল আপনাকে আটকে ফেলতে পারে আটলান্টিক মহাসাগরের রুদ্রমূর্তির মাঝে; যা শুধু ফ্রান্স নয়, সারা বিশ্বে রহস্য আর বিস্ময়ের প্রতীক। কিন্তু কেন এমনটি! চলুন, জেনে নেওয়া যাক।
ফ্রান্সের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত এই অদ্ভুত রাস্তার নামপ্যাসেজ দ্যু গোয়া, যা প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার লম্বা। যেটি ফ্রান্সের পশ্চিম উপকূলে নোয়ারমুতিয়ে দ্বীপকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে। তবে এই রাস্তার বিশেষত্ব হলো—প্রতিদিন দুইবার এটি প্রায় চার মিটার পানির নিচে তলিয়ে যায়। আর ভাটার সময় প্রায় দুই ঘণ্টার জন্য এটি আবার চলাচলের উপযোগী হয়। আর তখন অনায়েসে ছোট বড় সব ধরনের যান চলাচল করে।
এই অদ্ভুত প্রাকৃতিক চক্রের কারণেই প্যাসেজ দ্যু গোয়া সারা বিশ্বে পরিচিত। তবে এটি কেবল রহস্যময় নয়, বিপজ্জনকও। অনেক সময় পর্যটক বা স্থানীয়রা সময় ভুলে গেলে হঠাৎ জোয়ারের কবলে পড়ে যান। রাস্তার দুই প্রান্তে সাইনবোর্ডে জোয়ার-ভাটার সময়সূচি লেখা থাকে, তবুও অসাবধানতাবশত গাড়ি বা পথচারী আটকে পড়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে।
তবে এমন পরিস্থিতি এড়াতে কর্তৃপক্ষ রাস্তার পাশে বিশেষ উদ্ধার প্ল্যাটফর্ম স্থাপন করেছে। বিপদে পড়লে মানুষ সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারেন। কিন্তু পরিস্থিতি কখনও কখনও এত দ্রুত অবনতির দিকে যায় যে, উদ্ধার কাজও চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে।
প্যাসেজ দ্যু গোয়া কেবল স্থানীয়দের জন্য নয়, পর্যটকদের কাছেও রোমাঞ্চকর। অনেকে এটি পার হওয়ার জন্য বিশেষভাবে সময় নির্ধারণ করেন। তবে স্থানীয়দের সতর্কতা খুবই স্পষ্ট—জোয়ারের সময়সূচি মেনে না চললে এই রোমাঞ্চ এক মুহূর্তেই বিপদে পরিণত হতে পারে। আটলান্টিক মহাসাগরের বোর্নিউফ উপসাগরের ওপর দিয়ে বিস্তৃত এই রাস্তা প্রকৃতির এক আশ্চর্য সৃষ্টি।
আরটিভি/এফআই-টি
জলপ্রপাতের ভয়ংকর মৃত্যুফাঁদ দুই যোদ্ধার কাছে যেন দুধভাত
চারদিকে বিশাল উচ্চতার জলপ্রপাত, যার কাছাকাছি যাওয়ার সাহস কেবল নিঃসংশয় দুঃসাহসীদেরই আছে। বরফের সংস্পর্শে জলপ্রপাতের জলীয় বাষ্প ঠান্ডা বাতাসে জমে যেন ধোঁয়ার আবরণ তৈরি করে। জলপ্রপাতের গভীরে সেই ধোঁয়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে যেন এক ভয়াল মৃত্যুপুরী।
এখানে যদি কেউ পড়ে যায়, তার লাশ খুঁজে পাওয়া তো দূরের কথা, এমনকি হাড়গোড়ের কোনো চিহ্নও মিলবে না। যেখানে এই দৃশ্য সাধারণ মানুষকে স্তম্ভিত করে দেয়, সেখানে এই দুই সাহসী যোদ্ধা শুধু আকাশ আর মৃত্যুর মাঝখানে টানানো সরু, ঢিলেঢালা এক রশিতে এমনভাবে হাঁটছে যেন প্রিয়জনের হাত ধরে ধীর গতিতে মেঠোপথে পায়চারি করছে।
দর্শক, কী দারুন ও ভয়ংকর না ব্যাপারটা! যেখানে পা রাখা তো দূরের কথা, দাঁড়ানোই অসম্ভব। সেই অসম্ভবকেই যেন পান্তাভাত মনে করছে এই সাহসীরা।
এই রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটেছে আফ্রিকার বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের ওপরে। ঝমঝম করে পড়তে থাকা পানির স্রোত, আর তার ওপরে টানানো একটি সরু দড়ি। আর সেই দড়ির ওপর দিয়ে পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছেন দুই ইউরোপীয় দুঃসাহসিক যুবক।
এদের একজন লুকাস ইর্মলার, ২৬ বছর বয়সী রসায়নের শিক্ষার্থী আর রেইনহার্ড ক্লাইনডল, ৩৪ বছরের ক্রাইম লেখক। এসেছেন জার্মানির ফ্রেইসিং আর অস্ট্রিয়ার গ্রাজ থেকে এই অভিনব হাড় হিম করা পারফমেন্স দেখাতে, যার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন দীর্ঘ দুই বছর।
আর এখানে যে রশিটি দেখছেন এর নাম স্ল্যাকলাইন। টাইটরোপের মতো মনে হলেও এটি অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। কারণ দড়িটি থাকে ঢিলা, যার ফলে এটি বাউন্স করে আর টানটান থাকে না। তাই এর ওপর দিয়ে হাঁটার জন্য প্রয়োজন অসীম মনোযোগ আর শরীরের ভারসাম্যের নিখুঁত নিয়ন্ত্রণ।
সেই দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটার সময়, তাদের প্রতিটি পদক্ষেপ যেন প্রকৃতির বিপুল শক্তি আর মানুষের সীমাহীন মনোবলের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। তাদের মন মুগ্ধকর পারফরম্যান্সের সময় জলপ্রপাতের বিশাল জলরাশির গর্জন যেন আরে বেড়ে গেছে। আশপাশের মনোরম দৃশ্য যেন পুরো ঘটনাটিকে আরও অসাধারণ করে তুলেছে।
এই দুঃসাহসিক অভিযানের মাধ্যমে লুকাস ইর্মলার এবং রেইনহার্ড ক্লেইন্ডল প্রমাণ করে, হ্যা ভয়ের পরই জয়। এখানে শুধু তাদের সীমাহীন সাহসিকতার পরিচয়ই দেননি, প্রমাণ করেছেন, মানবসত্তার সবচেয়ে বড় শক্তি হলো আত্মবিশ্বাস।
আরটিভি/এফআই-টি
এখানকার অলিগলিতে কেবল যেন বানরের রাজত্ব
কেউ জানালার কার্নিশে আর কেউ গাছের মগডালে, আবার কেউ ব্যস্ত প্রধান ফটক পাহারায়। অলিগলিতে যেন কেবল বানরের রাজত্ব! মজার ব্যাপার হলো কিছু বানর তো এখন রীতিমতো সেলিব্রেটি! মানুষের ভিড় জমছে তাদের সঙ্গে সেলফি তুলতে। ধামরাইয়ের পথে হাঁটলে চোখে পড়বে বানরের এমন লাফিয়ে বেড়ানোর দৃশ্য।
ধামরাইয়ে বানরের বসবাসের ইতিহাস দীর্ঘ। একসময় পৌর শহরজুড়ে এদের অবাধ বিচরণ ছিল। মানুষের ঘরের ছাদ থেকে শুরু করে টিনের চাল আর গাছের ডালে ছিল তাদের জায়গা। স্থানীয়রা বলছেন, একসময় এই এলাকায় সহস্রাধিক বানরের দেখা মিলত। কিন্তু আজ, সেই সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ৪০০-তে।
গাছপালা কমে যাওয়ায় বানররা এখন বাসা-বাড়িতে হানা দিচ্ছে। খাবারের অভাবে তারা মানুষের ফলের গাছ, ফসল এমনকি ঘরের খাবারও লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, এই বানরদের বাঁচাতে প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থা। সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে তাদের জন্য বাসস্থান তৈরি করা আর খাবারের ব্যবস্থা করা গেলে তারা হয়তো টিকে থাকতে পারবে।
সামাজিক বনায়ন ও খাদ্য সরবরাহের মাধ্যমে বানরকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করছেন বন কর্মকর্তা।
তবে বানরের সংখ্যা আগের তুলনায় কমলেও সম্প্রতি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দাবি উপজেলা প্রশাসনের।
মানুষ এবং প্রকৃতির এই সহাবস্থান যেন টিকে থাকে, সেজন্য ঐতিহ্যবাহী এ বানর রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
আরটিভি/এফআই
এ যেনো নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো!
যেখানে দেশের শহরে আকাশ ছোঁয়া উড়াল সেতু আর ইট-পাথরের কাঠামোতে ঢেকে যাচ্ছে সব রাস্তা, সেখানে সোমেশ্বরী নদীর বুকে তৈরি হলো কাঠের সেতু। দীর্ঘদিন ধরে একটা সেতুর অভাবে নদীর এপার-ওপারের মানুষগুলো বয়ে বেড়াচ্ছিলেন অসহনীয় দুর্ভোগ। সে দুর্ভোগ অবসানে বানানো হয়েছে ২শ মিটার দীর্ঘ কাঠের সেতু।
রোববার দুপুরে অনাড়ম্বর এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সেতুটির দ্বার খুলে দেওয়া হয়। সেতুর ওপর দিয়ে এখন রিকশা, মোটরসাইকেল এমনকি চলবে ছোট গাড়িও। এতে বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য, নিরাপদে স্কুলে যেতে পারবে শিক্ষার্থীরা।
নেত্রকোনার দুর্গাপুরের শিবগঞ্জ আর পৌরশহর দুর্গাপুর—এই দুই এলাকার মাঝে সোমেশ্বরী নদী যেন এক অদৃশ্য দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দিনের পর দিন মানুষজন ঝুঁকি নিয়ে নৌকা পারাপার করছিলেন। বৃষ্টি-বাদলে সেই দুর্ভোগ আরও বেড়ে যেত। স্কুলপড়ুয়া বাচ্চাদের জন্য নদী পেরোনো যেন একটা যুদ্ধ ছিল।
একাধিকবার দাবি জানানো হলেও এগিয়ে আসেনি বিগত সরকারের কোন জনপ্রতিনিধি কিংবা স্থানীয় প্রশাসন। এই বাস্তবতায় এগিয়ে আসেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তাঁর অর্থায়নেই তৈরি হয় এই কাঠের সেতু। এলাকাবাসীর মতে, এটা কোনো ছোট কাজ নয়। রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল—সবকিছুই পারাপারের উপযোগী করে গড়া এই সেতু এক কথায় দুর্গাপুরের মানুষের জন্য এক নতুন আশার আলো।
সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। তবে অনেকে বলছেন, কাঠের সেতুটা আপাতত সমস্যার সমাধান করলেও ভবিষ্যতে আরও টেকসই একটি সেতুর প্রয়োজন হবে। কিন্তু তার পরও এই সেতু যেন মানুষের হৃদয়ে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এই সেতু দুর্গাপুরের মানুষের জীবনযাত্রায় নিয়ে আসবে আমূল পরিবর্তন, এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।
আরটিভি/এফআই