জীবন বাজি রেখেও যে মাছের স্বাদ পেতে চায় বহু মানুষ
এটি এমন একটি মাছ, যার স্বাদ নেওয়ার জন্য নিজের জীবন হাতে নিয়ে খেতে হবে! শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। এই মাছ প্রশিক্ষিত শেফদের দ্বারা রান্না করা হয়, কারণ সামান্য ভুলই হতে পারে মৃত্যুর কারণ। বিষাক্ত জেনেও জাপানে এই মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে শীতকালে এই মাছের ব্যাপক চাহিদা থাকে জাপানে। এই মাছে রান্না করা যে কোনও খাবার ভীষণ সুস্বাদু বলে পরিচিত। চাহিদা বেশি হওয়ায় এই মাছের দামও আকাশছোঁয়া। কিন্তু কি এমন মাছ যেটার স্বাদ নিতে হলে দিতে হবে জীবন?
দেখতে গোলগাল। গায়ে ছোপ ছোপ দাগ। চোখ দুটো সবুজ। সমুদ্রে অতলে বাসকরা এই মাছের নাম ফুগুমাছ। জাপানে পরিচিত ব্লোফিশ নামে।বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এই মাছকে পটকা মাছ হিসেবে চেনা হয়। আর এই নামটির উৎপত্তি মাছের সেই বৈশিষ্ট্য থেকে, যেখানে এটি বিপদের সময় নিজেকে ফুলিয়ে বড় আকার ধারণ করতে পারে। এর শরীরে রয়েছে টেট্রোডোটক্সিন নামে এক ধরনের বিষ। বলা হয়, এই বিষ পটাশিয়াম সায়ানাইডের তুলনায় প্রায় ১ হাজার গুণ বেশি বিষাক্ত। যার এক গ্রাম বিষই কয়েকজন মানুষের প্রাণ নিতে যথেষ্ট। তা সত্ত্বেও, এই বিষাক্ত মাছের স্বাদেই মজে গিয়েছে এশিয়ান দেশ জাপান।
কিন্তু কি এমন স্বাদ আছে এই মাছে, যার জন্য মৃত্যুর ঝুঁকিও নিতে রাজী জাপানের মানুষ। শুধু নিজেরাই মুগ্ধ তা নয়, পর্যটকদের কাছেও ফুগু মাছের রয়েছে আলাদা কদর। যার সুবাদে প্রতিবছর জাপানের রেস্টুরেন্টগুলো আয় করে মোটা অঙ্কের অর্থ। মূলত এই বিষাক্ত মাছের প্রতি আকর্ষণের প্রধান কারণ হলো, এর অসাধারণ স্বাদ। অনেকেই মনে করেন, এটি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক ধরনের ভিন্ন অনুভূতি আসে, যা অন্য কোনো খাবারে পাওয়া যায় না। আর এই কারণে, ফুগু মাছ জাপানের খাদ্য সংস্কৃতির একটি বড় অংশ হয়ে উঠেছে।
তবে সুস্বাদু এই মাছ রান্নার বিধিও বেশ কড়া। এর যকৃত, ক্ষুদ্রান্ত্র, ডিম্বাশয়, ত্বক প্রভৃতি বাদ দিয়ে রান্না করতে হয় । কারণ এই সব অঙ্গে রয়েছে ভীষণ বিষ। তবে এই মাছের বিষাক্ততা এবং এর বিপদ মাথায় রেখেই, ফুগু মাছ খাওয়ার আগে প্রতিটি দেশেই বিভিন্ন ধরনের সতর্কতা মেনে চলা হয়। জাপানে ফুগু পরিবেশন করার আগে সরকার থেকে শেফদের কঠোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আর লাইসেন্সপ্রাপ্ত রেস্তোরাঁতেই কেবল এই মাছ পরিবেশন করা হয়। কেননা শুধু অভিজ্ঞ শেফরাই সঠিকভাবে মাছ থেকে বিষ আলাদা করে তা নিরাপদভাবে পরিবেশন করতে পারেন।
তবে শুধুমাত্র জাপানেই নয়, সাম্প্রতিককালে ফুগু মাছ খাওয়ার রীতি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে অন্যান্য দেশেও । দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও বিশেষ কিছু রেস্তোরাঁয় পরিবেশন করা হয় ফুগু। কিন্তু যেকোনো দেশে এই মাছের পরিবেশনা করতে হলে, শেফদের প্রয়োজন হয় বিশেষ লাইসেনস।
আরটিভি/এফআই
গাছ লতা-পাতাহীন পাথর জঙ্গলের রহস্য
এটি এমন এক জঙ্গল, যেখানে গাছপালার সমারোহ নেই, ফুলের সুবাস নেই আছে পাথরের এক বিস্তৃত সমারোহ? হাজার হাজার বছর ধরে বৃষ্টি, বাতাস আর প্রকৃতির অন্যান্য শক্তি মিলে এই পাথরগুলোকে এমন আকৃতি দিয়েছে যা দূর থেকে দেখে মনে হবে প্রকৃতির হাতে গড়া এক পাথরের বন। চীনের ইউনান প্রদেশে অবস্থিত এই বিস্ময়কর বনকে শিলিন অর্থাৎ পাথরের জঙ্গল নামে ডাকা হয়। প্রকৃতির এই অদ্ভুত সৃষ্টি, যা যুগে যুগে মুগ্ধ করে আসছে মানুষকে। এমনকি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের খাতায় রয়েছে এই স্থান।
শিলিনের পাথরের জঙ্গল আসলে কোনো গাছ নয়, তবে দেখলে গাছের মতোই মনে হয়! এই অঞ্চলের পাথরের স্তম্ভগুলো ২৭০ মিলিয়ন বছর পুরনো চুনাপাথরের তৈরি। একসময় এখানে বিশাল এক সাগর ছিল। সময়ের সাথে মাটি ভেঙে পাথরে পরিণত হয়। আর ঝড় ও পানির জ্বালায় গঠিত হয় অদ্ভুত সব আকারের পাথরের স্তম্ভ, যা দেখে মনে হয় যেন পাথরের জঙ্গল! উচ্চতায় প্রায় ৩০ মিটার অবধি লম্বা পাথরের স্তম্ভগুলো দাঁড়িয়ে আছেগাছের মতোই। আর এই কারণেই প্রাকৃতিকভাবে গঠিত পাথরের স্তম্ভ ‘পাথরের জঙ্গল’ নামে পরিচিত।
এই ‘পাথরের জঙ্গলে’ ঢুকলে নিজেকে হারিয়ে ফেলবেনএক ভিন্ন জগতে। পাথরের মাঝে সরু পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে মনে হবে, যেন প্রকৃতির গড়া কোনো প্রাচীন নগরীর মধ্যে প্রবেশ করেছেন। এটি এমন এক স্থান, যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে রহস্যময়তার এক অদ্ভুত মিশ্রণ পাওয়া যায়।
শিলিন শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, এর ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্বও। ২০০৭ সালে, শিলিনের এই বিস্ময়কর অঞ্চলকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করে। পর্যটকরা এখানে এসে শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই উপভোগ করেন না, বরং এই স্থানটির সাথে জড়িয়ে থাকা ঐতিহ্যবাহী কিংবদন্তি ও ইতিহাসও আবিষ্কার করেন। শিলিনের ‘আশিমা’ নামক একটি লোকগাথা রয়েছে, যেখানে বলা হয় যে আশিমা নামে এক সুন্দরী মেয়ে পাথরের রূপান্তরিত হয়েছিল।
এই ‘পাথরের জঙ্গল’ নিয়ে গবেষকরা বলছেন, প্রায় ৫০৫ মিটার উচ্চতার স্তরগুলো তৈরি হয়েছে পার্মিয়ান যুগের মাকৌ এবং কিক্সিয়া গঠন থেকে। এই অঞ্চল চীনের বৃহত্তম কার্স্ট অঞ্চলগুলোর একটি। এছাড়াও শিলিন এলাকায় রয়েছে বেশ কিছু প্রাকৃতিক জলপ্রবাহ, যেমন চাং হ্রদ ও ইউয়েহ হ্রদ, যা এই অঞ্চলকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তুলেছে।এই বিস্ময়কর স্থানটি শুধু তার ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যেই নয়, স্থানীয় উদ্ভিদকুলের জন্যও বিখ্যাত। এখানে চিরসবুজ বৃক্ষের বন এবং বিশেষ করে কিছু বিরল উদ্ভিদ দেখা যায়, যা ইউনান প্রদেশের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য।
আরটিভি/এফআই
দোকানের মালিক গরু চন্দ্রমণি, শাড়ির ব্যবসা তুঙ্গে
প্রতিদিন সকাল সকাল দোকানে এসে হাজির এই অতিথি! কোনো ঝামেলা ছাড়াই ঘণ্টার পর ঘণ্টা চুপচাপ বসে থাকে। আর তার কারণে দোকানে বাড়ছে ক্রেতার সংখ্যা। ভাবছেন এ আবার কেমন অতিথি? এ অতিথি কোনো মানুষ নয়, একটি গরু। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। তবে ঠিক অতিথি নয়, ক্রেতাদের মতে শাড়ির দোকানের মালিক এই গরু, যার নাম ‘চন্দ্রমণি’।
চন্দ্রমণি, রায়পুরের মহালক্ষ্মী মার্কেটের একটি শাড়ির দোকানের গরু। গত সাত বছর ধরে, এই ১২ বছর বয়সী গরুটি প্রতিদিন দোকানে আসে। ঠিক দুপুর তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে। কখনও আধ ঘণ্টা, কখনও দুই ঘণ্টা। দোকানে প্রবেশ করলেই শুরু হয় চন্দ্রমণির সাদরে অভ্যর্থনা, যেন সে সেখানকার আসল মালিক। আর এভাবেই সে মন জয় করেছে স্থানীয় লোকজন ও অন্যান্য দর্শনার্থীদের। চন্দ্রমণির এই প্রতিদিনের উপস্থিতি দোকানের ব্যবসাকেও ব্যাপক বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এই ঘটনাটি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। লোকজন কৌতূহলী হয়ে আসছেন, কেউ চন্দ্রমণির সঙ্গে সেলফি তুলছেন, কেউ আবার শুধু তাকে দেখতে আসছেন। মজার ব্যাপার, চন্দ্রমণির এই বিশেষ মর্যাদা দোকানের ব্যবসায়ও এনেছে বাড়তি রমরমা!
প্রতিদিন চন্দ্রমণি আসায় দোকানের কর্মচারীরা বলেন, সে আমাদের মালিক, আমরা তাকে বিরক্ত করি না বরং সম্মানের সঙ্গে তাকে গ্রহণ করি।
কিন্তু কেন চন্দ্রমণি পেল এত বিশেষ মর্যাদা? দোকানের মালিক পদম ডাকিলিয়া জানান, আমাদের জন্মের পর মা কয়েক বছর দুধ পান করান, কিন্তু গরু আমাদের জীবনের প্রতিটি দিনেই দুধ দেয়। দুধ, ঘি, দই— সবই তো আসে গরুর কাছ থেকে। এমনকি, যে ফসল আমরা খাই, তা গরুর বিষ্ঠা দিয়ে পবিত্র হয়। চন্দ্রমণির সঙ্গে আমাদের এই সম্পর্ক আধ্যাত্মিক আর ব্যবসায়িক—দুয়ের মিশ্রণ।
চন্দ্রমণির প্রতিদিনের এই আগমন শুধু দোকানের জন্যই নয়, পুরো বাজারের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। দোকানের মালিক পদম ডাকিলিয়া মনে করেন, এটি আধ্যাত্মিক বিপণনের এক অনন্য উদাহরণ। ক্রেতারাও মজা করে বলেন, চন্দ্রমণি তাদের দোকানের নতুন মালিক! তাই তারাও সাদরে গ্রহণ করেন তাকে। তবে এই ঘটনার মজার দিকের পাশাপাশি রয়েছে আরও এক বার্তা, চন্দ্রমণি যেন সবাইকে শেখাচ্ছে, কীভাবে সহজ-সরল ভালোবাসায় গড়া সম্পর্ক জীবনে আনে সুখ আর শান্তি।
আরটিভি/এফআই-টি
১০ হাজার ফুট ওপর থেকেও যেভাবে শিকার দেখতে পায় ঈগল
আকাশের রাজা ও শিকারের শক্তিমান যোদ্ধা ঈগল। এই পাখির উড়ার গতি, শক্তিশালী নখ আর শিকারের অসাধারণ কৌশল যে কোনো প্রকৃতিপ্রেমীকে মুগ্ধ করে। কিংবদন্তি গল্প আর বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ভরপুর ঈগল। বলা হয় এটি শুধু একটি শিকারি পাখিই নয়, বরং এটি শক্তি ও সাহসের প্রতীক। তাইতো এই পাখিকে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, রাশিয়া ও আলবেনিয়া শক্তি ও স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করেছে। এছাড়া মেক্সিকো, পোল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ায়ও ঈগল জাতীয় ঐতিহ্য ও গৌরবের প্রতীক। আজ জানাবো সেই ঈগলের রহস্যময় জীবন ও তার শিকারের অসাধারণ গল্প।
অবিশ্বাস্য দৃষ্টিশক্তি: প্রথমেই বলি ঈগলের দৃষ্টিশক্তি। যা আল্লাহর সৃষ্টির এক বিস্ময়কর ক্ষমতা। গবেষণা বলছে মানুষের তুলনায় ঈগলের চোখ ৪ থেকে ৫ গুণ বেশি শক্তিশালী, যার ফলে তারা অনেক দূর থেকে শিকারকে দেখতে সক্ষম। গবেষণায় বলা হয়, কিছু প্রজাতির ঈগল প্রায় ২ মাইল তথা ১০ হাজার ৫০০ ফুট উপরে থেকেও ছোট শিকারকে দেখতে পারে। তাদের চোখের বিশেষ কোষ আলোর প্রতি সংবেদনশীল এবং রঙের প্রতি অত্যন্ত সতর্ক। এই দৃষ্টিশক্তি ঈগলকে শিকারের জন্য আরো দক্ষ করে তোলে, যেকোনো পরিস্থিতিতে তারা শিকার ধরতে পারে।
দেহের গঠন এবং ওজন: পূর্ণবয়স্ক ঈগলের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ ইঞ্চি হয়, এবং এর ওজন ৩ থেকে ৭ কেজির মধ্যে থাকে। হার্পি ঈগলের মতো কিছু প্রজাতি প্রায় ৯ কেজি পর্যন্ত ওজন ধারণ করতে পারে। তবে তাদের হালকা পালক এবং শক্তিশালী ডানা ঈগলকে সহজেই আকাশে উড়তে এবং দ্রুতগতিতে শিকার ধরতে সাহায্য করে। তাদের শারীরিক গঠন শিকার ধরার ক্ষেত্রে অদ্বিতীয় করে তুলেছে।
শক্তিশালী নখ এবং গতি: ঈগল আকাশ থেকে প্রায় ১২০-১৫০ মাইল প্রতি ঘণ্টা গতিতে শিকার ধরতে ডাইভ দেয়। তাদের পায়ের নখর এতটাই শক্তিশালী যে এর সাহায্যে শিকারকে মুহূর্তেই ছিন্নভিন্ন করা যায়। একটি প্রাপ্তবয়স্ক ঈগলের নখ প্রায় ৪০০ পাউন্ড চাপ প্রয়োগ করতে পারে, যা শিকারের মাংস ছিঁড়ে ফেলতে যথেষ্ট।
শিকার ধরার কৌশল: ঈগল প্রধানত জীবন্ত শিকার ধরতে পছন্দ করে। খরগোশ, মাছ, শেয়াল থেকে শুরু করে ছোট হরিণ পর্যন্ত তাদের শিকারের তালিকায় রয়েছে। মৎস্য ঈগল পানির ওপরে উড়ে গিয়ে পানির নিচে থাকা মাছ শিকার করার ক্ষেত্রে অসাধারণ দক্ষতা দেখায়। তারা পানির ওপরে উড়তে উড়তে মাটির কাছাকাছি থাকা শিকারকে মুহূর্তের মধ্যে ধরে নেয়।
বিশ্বজুড়ে প্রজাতি: বিশ্বজুড়ে ঈগলের প্রায় ৬০টি প্রজাতি রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রজাতি দেখা যায় ইউরেশিয়া এবং আফ্রিকায়। উত্তর আমেরিকায় মাত্র দুটি প্রজাতি আছে—বেল্ড ঈগল এবং গোল্ডেন ঈগল। প্রতিটি প্রজাতি আলাদা আচার-আচরণ এবং শিকার ধরার কৌশলে বিশেষ পারদর্শী।
ঈগলের বাসা: ঈগলের বাসা পৃথিবীর অন্যতম বড় পাখির বাসাগুলোর মধ্যে একটি। বেল্ড ঈগলের বাসা প্রস্থে প্রায় ৮ থেকে ১০ ফুট এবং ওজনে প্রায় এক টন হতে পারে। তারা বছরের পর বছর ধরে একই বাসা ব্যবহার করে এবং প্রতি বছর এটি বড় হতে থাকে।
ঈগল প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি। তার শক্তি, বুদ্ধিমত্তা, এবং শিকারের দক্ষতা তাকে প্রকৃতির শিকারি পাখিদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় করে তুলেছে। ঈগলের জীবনের প্রতিটি অধ্যায় আমাদের শেখায় সাহস, ধৈর্য্য, এবং শিকারের জন্য সঠিক কৌশল প্রয়োগের গুরুত্ব।
আরটিভি/এফআই
পুরোনো যন্ত্র থেকে মিলছে কেজি কেজি স্বর্ণ
ফেলে দেওয়া পুরোনো রিমোট টেলিভিশন, ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল ফোনের ভেতর লুকিয়ে আছে স্বর্ণ। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন! পুরোনো এসব ইলেকট্রিক যন্ত্র থেকে এই শ্রমিকরা সংগ্রহ করছেন ২৪ ক্যারেটের সোনা, আর তা বিক্রি করেই চলছে তাদের সংসার। কেউ কেউ মাসে পুরোনো এসব যন্ত্র থেকেই সংগ্রহ করেন একশ থেকে দেড়শ গ্রাম স্বর্ণ। তারপর তা নিয়ে যান স্বর্ণ গলানোর কারখানায়। তারা পরীক্ষা শেষে তা দিয়ে বানান নানান ডিজাইনের গয়না।
আফগানিস্তানের সীমান্ত শহর স্পিন বলডাকের শ্রমিকরা প্রতিদিন এমনই এক স্বপ্ন নিয়ে শুরু করেন তাদের কাজ—পুরোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ভেঙে খুঁজে বের করেন স্বর্ণের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা। এই স্বর্ণেই তাদের জীবনযাত্রার একমাত্র ভরসা। তবে এই পেশার পিছনে রয়েছে এক অবর্ণনীয় সংগ্রাম আর জীবনের ঝুঁকি। কিন্তু সমস্যা হলো, আধুনিক যন্ত্রগুলোতে এখন আর আগের মতো স্বর্ণ ব্যবহার হয় না। বরং সস্তা ধাতু দিয়ে তৈরি হয়। তবুও, এই শ্রমিকরা বিশ্বাস করেন হয়তো আজকের দিনেই তাদের ভাগ্য খুলে যাবে!
শুধু লাভের আশাই নয়, এই কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকরা তাদের জীবনকে প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মুখে ফেলছেন। বিষাক্ত ধাতু, ধুলোবালি আর রাসায়নিক পদার্থের ভেতরেই তারা কাজ করেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। স্বাস্থ্যবিধি মানার সুযোগ নেই, নিরাপত্তার কোন বালাই নেই। তবুও, তারা থেমে নেই, কারণ পেটের ক্ষুধা তাদের সামনে আরও বড় বাস্তবতা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আধুনিক ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি থেকে স্বর্ণ পাওয়ার সম্ভাবনা দিনে দিনে কমছে। যন্ত্র থেকে সংগৃহীত স্বর্ণ যায় বাজারে, সেখানে কারিগররা এ দিনে কেউ গলান ১ থেকে ২ কেজি স্বর্ণ। সস্তা ধাতুর ব্যবহার বেড়েছে, ফলে এই পেশার ভবিষ্যৎ ক্রমশ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। কমে কারিগরদের স্বর্ণ গলানোর কাজও।
কারিগররা বলেন, জাপানি ইলেকট্রনিক বিভিন্ন পণ্যে স্বর্ণ থাকে, কিন্তু চীনা ইলেকট্রনিক পণ্যে তেমন স্বর্ণ থাকে না। তাই এই গ্রাম থেকে আসা স্বর্ণের পরিমাণও কমছে। সম্ভবত প্রতি সপ্তাহে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম স্বর্ণ বাজারে আসে।
তবুও আফগান শ্রমিকরা ভেঙে পড়ছেন না। তারা জানেন, অল্প কিছুই পাওয়া গেলেও একদিন তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরবেই। আর এমন আশা নিয়েই প্রতিদিনই বসে যান পুরোনো যন্ত্র নিয়ে।
আরটিভি/এফআই/এসএ
পানির ওপর ৩৬০ ডিগ্রিতে ঘুরছে মেকানিকের স্বপ্নের ঘর
ঘরে জানালার পাশে বসে আছেন। মৃদু বাতাসে উড়ছে আপনার চুল, মনের আনন্দে কফির কাপে দিচ্ছেন চুমুক। আর পাহাড়ের অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করছেন, কিন্তু আবার ফিরে তাকাতেই দেখলেন সমুদ্র। ভেবে ভেবে ক্লান্ত, কিন্তু উত্তর খুজে পাচ্ছেন না। কীভাবে সম্ভব! এটা কি কোন ম্যাজিক?
শুনতে রূপকথার মতো লাগলেও, ভিয়েতনামের বাক জিয়াং প্রদেশের মেকানিক গুয়েন ভ্যান লুয়ং এই ম্যাজিককে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। ৫৭ বছর বয়সী এই মানুষটি শুধুমাত্র একটি ঘর নয়, বরং তার জীবনের একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করেছেন। তার ঘরটি সারাক্ষণ ঘোরে তাও আবার ৩৬০ ডিগ্রি। আর জানলে আরও অবাক হবেন জলাধারের ওপর স্থাপিত এই বিশেষ বাড়ি এখন বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
এই অদ্ভুত এবং অভিনব ঘরের পেছনের গল্পটা আরও চমকপ্রদ। প্রায় চার বছর ধরে নিখুঁত পরিকল্পনা আর কঠোর পরিশ্রমের পর, ২০১৬ সালে তিনি এই বাড়ির কাজ শেষ করেন। ১০০ বর্গমিটারের এই বাড়িটি ১৪ মিটার ব্যাসের জলাধারের ওপর তৈরি একটি বিশেষ কংক্রিটের ভিত্তির ওপরে ভাসে। বাড়িটি মাত্র ১০ মিনিটে পুরোপুরি একবার ঘুরে যেতে সক্ষম, এবং এটি চালাতে খরচ হয় মাত্র ০.৭ অ্যাম্পার বিদ্যুৎ, যা প্রায় দুইটি ১০০ ওয়াটের ফ্যানের সমান।
কিন্তু কেন এই বিশেষ বাড়ি? লুয়ং নিজের মতো করে এক স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেছেন , আমি এখন প্রায় ৬০-এ পা দিচ্ছি, আর চাইছি এমন কিছু রেখে যেতে, যা আমাকে মনে করিয়ে দেবে, আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে। এই ঘরটি তার জীবনের সেই বড় স্বপ্ন, যা শুধু ঘোরে না, জলাধারের ওপরে ভাসতে থাকে, একদম একটি নৌকার মতো।
তবে বাড়িটি তৈরি সহজ ছিল না। লুয়ং নিজে বলেছিলেন, ঘরটি তৈরির সময় তাকে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়েছিল। হালকা হলেও শক্তিশালী কাঠামো তৈরি করার জন্য তিনি বিশেষ কংক্রিট ব্যবহার করেছিলেন। তার এই উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার জন্য ২০২২ সালে ভিয়েতনাম ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি অফিস তাকে পেটেন্ট প্রদান করে।
লুয়ং-এর এই ঘর শুধু প্রযুক্তিগত কীর্তি নয়, এটি মানুষের অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং স্বপ্নের এক প্রতীক। এটি ঘোরে, ভাসে, এবং স্মৃতিতে থেকে যায় একটি মানুষের জীবনযাপনের সবচেয়ে সুন্দর উদাহরণ।
আরটিভি/এফআই
অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন / রেমিট্যান্স বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক খাতে বড় পরিবর্তন
ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয় সাড়ে ১৫ বছর দেশ পরিচালনা করা আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ৮ আগস্ট ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। ১৬ নভেম্বর এই সরকারের ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, ব্যাংকিং খাতে সুশাসনসহ অর্থনৈতিক খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। উল্লেখযোগ্য সফলতা হলো, নতুন বাংলাদেশ গড়তে ১০টি সংস্কার কমিশন গঠন, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, সরকার বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে সংস্কার, দুর্বল ব্যাংককে সহায়তা, বিদেশি ঋণ পরিশোধ, নতুন টাকা না ছাপানো, অযাচিত প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ স্থগিত, ব্যাংক, পুঁজিবাজারে সংস্কার কমিশন, অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র কমিটি গঠন, বিচার ব্যবস্থা, সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, সুশাসন আনার ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে বিশেষ করে ব্যাংকের ভেতরে যে কর্পোরেট গভর্নেন্স, এ বিষয়ে ইতিবাচক একটি পদক্ষেপ এসেছে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন শুল্ক কমানো এবং কর ছাড় দেওয়ার বিষয়টিও ইতিবাচক। এ ছাড়া বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রেও এক ধরনের প্রাথমিক স্থিতিশীলতা এসেছে।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, বাহিনীগুলোর সংস্কার, মূল্যস্ফীতি, দুর্নীতি দূর করা ও রাজনৈতিক দলের সংস্কারের ক্ষেত্রে এখনও গুণগত পরিবর্তন সম্ভব হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সাফল্যের পাশাপাশি অনেকগুলো সমস্যাও রয়েছে। কর ছাড় দিয়েও নিত্যপণ্যের দাম কমানো যাচ্ছে না। পুলিশ ও আনসার বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফেরেনি, জনপ্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান শেষ হয়নি, রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। এসবে বিশেষ নজর দিতে হবে।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার বলেন, দ্রব্যমূল্য হলো প্রথম চ্যালেঞ্জ। কারণ, মানুষ বাজারে গিয়ে সঠিক দামে পণ্য কিনতে না পারলে তারমধ্যে হতাশা তৈরি হবে এবং একসময় সে বিক্ষুব্ধ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম সরকার অনেক তীব্র গতির হবে, তৎপরতা দেখাবে—কিন্তু সেভাবে দেখিনি। প্রশাসনকে ঢেলে না সাজানোর কারণে পদেপদে তার খেসারত দিতে হচ্ছে।
রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশের সব সেক্টরে আমূল পরিবর্তন সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ দ্রুত সংস্কার শেষে নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা।
আরটিভি/আরএ/এআর