চুয়াডাঙ্গার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (টিটিসি) কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে মানহীন খাবার সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২৬ মে) রাতে ভাতের সঙ্গে দেয়া মাছ থেকে পচা গন্ধ বের হলে শুরু হয় বিক্ষোভ। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে অভিযোগ কোয়ারেন্টিনে থাকা ভারত ফেরতদের। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুনিরা পারভীন ও পুলিশ কর্মকর্তারা।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, করোনা রোধে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বন্ধ। এর মধ্যেও জরুরি চিকিৎসা নিতে স্থলপথে হাজার দেড়েক বাংলাদেশী বিশেষ ব্যবস্থায় ভারতে গিয়ে বিপাকে পড়ে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ ব্যবস্থায় আটকে পড়া বাংলাদেশি যাত্রীদের দেশে ফেরার ব্যবস্থা করে। গত ১৭ মে থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনাসহ দেশের ৩টি স্থলসীমান্ত ও চেকপোস্ট দিয়ে দেশে ফিরতে শুরু করেন বাংলাদেশীরা। শর্ত মোতাবেক দেশে ফেরা সবাইকে বিশেষ কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে ১৪ দিন। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন করছে গোটা বিষয়ের তত্ত্বাবধান। চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরা প্রায় সাতশ’ মানুষ অবস্থান করছেন চুয়াডাঙ্গার চারটি সরকারি ভবন ও কয়েকটি আবাসিক হোটেলের অস্থায়ী কোয়ারেন্টিন সেন্টারে। এরমধ্যে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রয়েছেন ১১৪ জন। এদের তিন বেলা খাবারের যোগান হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত তিনটি রেস্তোরাঁ থেকে।
আবাসন নিয়ে কোনো অভিযোগ না পাওয়া গেলেও সরবরাহকৃত খাবারের মান নিয়ে প্রথম থেকেই অভিযোগ উঠতে থাকে। বুধবার রাতে টিটিসি কোয়ারেন্টিন সেন্টারে ক্ষোভ রূপ নেয় বিক্ষোভে। অনেকে টিটিসি ভবনের জানালা দিয়ে ফেলে দেন খাবার। যাত্রীদের অভিযোগ, যে মাছ খেতে দেয়া হয়েছে তা পচা দুর্গন্ধযুক্ত ও খাওয়ার অনুপযোগী। গতকাল দুপুরের খাবার কোনো মতে খাওয়া গেলেও রাতে ভাতের সঙ্গে যে মাছ দিয়েছে তা পচা গন্ধ ছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোয়ারেন্টিনে থাকা কয়েকজন জানান, কোয়ারেন্টিনে আসার প্রথম দু’দিন ভালোই ছিলাম। এরপর থেকে খাবার নিয়ে যা হচ্ছে তা রীতিমত অত্যাচার। তিন বেলা দেয়া হচ্ছে অখাদ্য ও পরিমাণে কম। বুধবার সকাল থেকে তিন বেলা ছাড়া বিগত দিন সরবরাহকৃত খাবারের প্যাকেটের গায়ে লেখা ছিলো না কোনো রেস্তোরাঁর নাম। গতকাল দুপুরে যে মুরগির মাংস খেতে দেয়া হয়েছিল তা খাওয়া যায়নি। রাতে তো পচা মাছ ছিল। আমরা তো কোনো অপরাধ করিনি! তাহলে কেন এই জেলখানার শাস্তি?
কোয়ারেন্টিনে থাকা যাত্রীদের খাবারসহ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আমজাদ হোসেন জানান, মান যাচাই করে চুয়াডাঙ্গা শহরের তিনটি রেস্তোরাঁকে পর্যায়ক্রমে দেয়া হয়েছে সরবরাহের কাজ। তদারকিতে দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট থাকছেন। গতরাতে ১০-১২ জন যাত্রী মাছের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অন্যরা কোনো অভিযোগ করেনি।
তিনি আরও জানান, কোয়ারেন্টিনে থাকা বাংলাদেশী যাত্রীদের কাছ থেকে থাকা-খাওয়া বাবদ জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা জমা নেয়া হয়েছে। খাবার নিয়ে অভিযোগ ওঠায় এর আগে সরবরাহকারী হোটেল বদল করা হয়েছে। থাকা খাওয়াসহ যাত্রীদের দেখভালের বিষয়টির সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের ভাবমূর্তি জড়িত। আজ থেকে খাবার সরবরাহ করবে রেডচিলি। বুধবার রাতের খাবার সরবরাহকারী মেহমান হোটেলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুরে কোয়ারেন্টিন সেন্টারে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করায় হোটেল মেহমান সিলগালা করে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক হাবিবুর রহমান ওই অভিযান পরিচালনা করেন।
এসআর/