সরকারের উন্নয়নের জোয়ারে এখনও টেকসই বেড়িবাঁধের ছোঁয়া লাগেনি কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায়। প্রায় দেড় লাখ মানুষের আবাসস্থল দেশের একমাত্র বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর কুতুবদিয়া। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর থাকলেও অবহেলিত এ উপজেলায় বসবাসরতরা। দীর্ঘ বছর ধরে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে কুতুবদিয়াবাসী। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ লোক দেখানো বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলেও হালকা ঝড় বৃষ্টিতে তা তলিয়ে যায়। এতে মারাত্মকভাবে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে কুতুবদিয়া। অন্যদিকে সরকারের দেয়া বরাদ্দসমূহ ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টরা খাচ্ছে লুটেপুটে।
সরেজমিনে দেখা যায়, টানা বৃষ্টিতে জোড়াতালি দেয়া বেড়িবাঁধগুলো তলিয়ে সাগরের সঙ্গে মিশে গেছে। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে এ উপজেলার মানুষেরা। ডেলিভারি রোগীসহ সংকটাপন্ন রোগীদের দ্রুত ও উন্নত চিকিৎসা দিতে পারাপারের সমস্যা বলার মতো নয়। বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করা কতো কষ্টের তা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই বুঝে। দেশের অন্যন্যা উপকূলীয় এলাকায় পারাপারের জন্য যেভাবে ফেরি সুবিধা রয়েছে একইভাবে কুতুবদিয়াবাসির যাতায়াতের সুবিধার্থে ফেরি বা সী ট্রাক চালু হলে জিম্মি দশা থেকে রেহাই পাবে ভুক্তভোগীরা।
সরকারের সাবেক স্বাস্থ্য সচিব ও কুতুবদিয়ার সন্তান আ ন ম নাছির উদ্দিন আহমেদ জানান, উত্তাল ঢেউ এর তোড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে কুতুবদিয়া উপজেলা। এতে বহু ঘরবাড়ি সহায় সম্পত্তি পানিতে তলিয়ে গেছে। বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত রক্ষা পায়নি। তিনি আরও জানান, অনেক স্থানে বেড়িবাঁধ উপচে ঢুকে পড়ছে সাগরের পানি। বেড়িবাঁধের উচ্চতা প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ার কারণে এমনটা ঘটছে বলে মনে হচ্ছে। কুতুবদিয়াবাসীর বহুদিনের দাবি টেকসই এবং স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের। কিন্তু তাদের দাবি এখন পূরণ হয়নি।
কুতুবদিয়ার একাধিক সমাজপতি জানিয়েছে, বেড়িবাঁধ না থাকায় চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছে কুতুবদিয়ার দেড় লাখ মানুষ। সরকারের বারংবার বরাদ্দ থাকলেও কতিপয় দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারের লোক দেখানো কাজ ও গাফিলতির কারণে বর্ষা আসলে আবারও পানিবন্দি হয়ে থাকতে হয়। সঠিক সময়েও বরাদ্দের যথাযথ ব্যয় করা হলে একটি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ সম্ভব। কিন্তু কোনো অদৃশ্য কারণে বারবার দ্বীপবাসী বঞ্চিত হয়ে আসছে টেকসই বেড়িবাঁধ থেকে। এই অদৃশ্য ভূত থেকে দ্বীপবাসীকে রক্ষা করতে হবে। তাই সেনাবাহিনীর মাধ্যমে কুতুবদিয়ায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন দ্বীপবাসী।
জানা গেছে, পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সৈকত কুতুবদিয়ায়। অন্তত ২০ কিলোমিটার সৈকতে টেকসই বেড়িবাঁধের আওতায় আনা হলে দেড় লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা নিরাপদ হবে। তাই জনস্বার্থ বিবেচনায় বেড়িবাঁধের মূল অংশ রক্ষাকল্পে প্রাথমিকভাবে ২৫ ফুট উচ্চতার টেকসই বেড়িবাঁধে নির্মাণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি নক্সা ও প্রাক্কলন তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
জেএইচ