আজ পহেলা কার্তিক। উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক মরমি সাধক, বাউল সম্রাট ফকির লালনের ১৩১তম তিরোধান দিবস। করোনার কারণে এবারও লালন স্মরণোৎসব হচ্ছে না। এই সময়ে যেখানে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হতো, কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়া সেই লালন আখড়াবাড়িতে নেই কোনো আনুষ্ঠানিকতা। তারপরেও প্রতিবারের মতো দিনক্ষণ ঠিক রেখে এবারও কিছু লালনভক্তরা চলে এসেছিলেন আখড়াবাড়িতে। আশপাশে অবস্থান নিয়ে অথবা দূর থেকেই তারা সাঁইজীর ওফাত দিবসের রীতি পালন করছেন।
কুষ্টিয়ার এই ছেউড়িয়া গুরু সিরাজ সাঁইয়ের সঙ্গে ঘুরে জ্ঞাণ অর্জন করে ফকির লালন বাউল সম্রাটে পরিণত হয়। ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক আধ্যাত্মিক এই সাধকের মৃত্যুর পর ১৩১ বছর ধরে প্রথমে ছেউড়িয়ার আখড়া কমিটি ও পরে লালন একাডেমির উদ্যোগে লালন স্মরনোৎসব হয়ে আসছে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে গতবছর থেকে সেই রেওয়াজ ভাঙতে হয়। পরপর তিন নছর লালন উৎসব হলো না। কিন্তু কিছু সাধু, বাউল ও ভক্তরা এ অনুষ্ঠান ঘিরে আগে থেকেই দিনক্ষণ ঠিক রেখে আখড়াবাড়িতে আসেন। অনুষ্ঠান না দেখে ফিরে গেছেন তারা। দু-একজন যারা আছেন তারা রাখাল-বাল্য ও পুণ্যসেবার আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই মনে কষ্ট নিয়ে লালনকে স্মরণ করছেন।
লালন অনুসারী বাবু ফকির আরটিভি নিউজকে বলেন, অনেক ব্যথা নিয়ে বসে আছি।এই মহামারিতে দেশে পূজা হচ্ছে, কিন্তু গত দুই বছরে তিনটি লালন উৎসব হলো না। অনেক কষ্ট হচ্ছে।
লালন অনুসারী ও গবেষক হৃদয় শাহ ফকির আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, লালন ফকিরের দর্শন শৃঙ্খলার ডাক দেয়। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা মহামারি করোনার কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি।
এদিকে, গত ১২ অক্টোবর প্রেসবিফ্রিংয়ে এবারও লালন উৎসব করা সম্ভব নয় বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলাম। তিনি লালন একাডেমিরও সভাপতি।
তিনি বলেন, দেশের বিশেষ করে কুষ্টিয়ার করোনা প্রেক্ষাপটে এ জেলায় ৭৭৫ জন মারা গেছে। অনেক কমে এলেও এখনও মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন। যেহেতু লালন উৎসবে দেশে-বিদেশের লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত হয়, তাই সেখানে করোনা ঝুঁকি থেকেই যায়।
মনের মানুষের সন্ধান করা, নিজেকে খাঁটি করে গড়ে তুলতে পরবর্তি অনুষ্ঠানে এই ভবের হাটে মিলিত হবেন, এমনটিই প্রত্যাশা ভক্তদের।
এমআই/টিআই