সামনে নির্বাচন আসবে, যদি সেই নির্বাচনে ১০টি মার্ডারও হয়, আমি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা মাঠ থেকে সরবো না। আর আপনারা কেন্দ্র ছাড়বেন না, না, না, যতকিছু হউক না কেন। প্রশাসনের লোক বলেন, দলীয়করণ বলেন যাই কিছু হউক না কেন সবকিছু কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমার পক্ষে মেইনটেইন করা সম্ভব। মহিলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ উপস্থিত সকলকে কেন্দ্র না ছাড়ার আহ্বান করেন শিবপুরের সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা।
তার এমন বক্তব্যের এক পর্যায়ে মঞ্চে উপস্থিত জেলা যুবলীগ সভাপতি বিজয় গোস্বামী দাড়িয়ে সিরাজুল ইসলাম মোল্লার কানে কিছু একটা বলার পর বর্তমান সরকারের উন্নয়ন নিয়ে বক্তব্য শুরু করেন তিনি।
এমন বক্তব্য দিয়ে ভাইরাল হয়েছেন নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনের সাবেক সাংসদ সিরাজুল ইসলাম মোল্লা। উপজেলা যুবলীগের আয়োজনে গত বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় শিবপুরের ইটাখোলা গোল চত্বরে উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ বক্তব্য দেন।
২০১৪ সালে হাঁস প্রতীকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে বিজয়ী সাবেক এই এমপি বক্তব্যে আরও বলেন, আমি সাংসদ থাকাকালীন শিবপুরে কি উন্নয়ন হয়েছে, আর বর্তমানে কি উন্নয়ন হচ্ছে আপনারা তা দেখছেন। ইটাখোলা-সিএন্ডবি, শিবপুর-দুলালপুর, কামরাব রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারতলা ভবন এবং উপজেলা প্রশাসন ভবন, নদী খনন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ আমার মাধ্যমেই হয়েছে। বাংলাদেশের ১৪টি আর্দশ উপজেলার মধ্যে শিবপুর উপজেলার নাম আমি অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম।
আগামী নির্বাচনে যদি দশটি মার্ডারও হয় মাঠ না ছাড়ার ঘোষণার এমন বক্তবের ভিডিও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর নরসিংদী ও শিবপুরের রাজনীতির অঙ্গনে চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। অনেকে এমন বক্তব্যকে উস্কানি হিসেবে দেখছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ খান আরটিভি নিউজকে বলেন, শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ২০১৪ এবং ১৮ সালে নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন।
তাছাড়া ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ না করায় ২০১৮ সালে নৌকার মনোনয়ন পাননি। পরপর দুইবার নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করায় উনি বুঝতে পেরেছেন আওয়ামী লীগ থেকে কখনো মনোনয়ন পাবেন না। তাই আবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করার অভিপ্রায়ে উনার কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে উস্কানীমূলক এসব বক্তব্যে প্রদান করেছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূইয়া আরটিভি নিউজকে বলেন, সিরাজ মোল্লা সবসময়ই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন। আগামী নির্বাচনে কালো টাকার বিনিময়ে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা হিসেবেই এই ঔদ্ধত্যপুর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। আমি উনার এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনের সাংসদ জহিরুল হক ভুইয়া মোহন আরটিভি নিউজকে বলেন, সাবেক এমপির বক্তব্যটি আমি অনলাইনে শুনেছি। আগামী দিনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবেন যুবলীগের অনুষ্ঠানে হত্যার হুমকি দিয়ে এ ধরনের বক্তব্য একজন সাবেক এমপির হতে পারে? এটার নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। এই বক্তব্যের দায়ভার তাকেই নিতে হবে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয়ভাবে বিষয়টি হয়তবা নজরে এসেছে। যদিও তিনি আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদেও নেই।
এই বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা আরটিভি নিউজকে বলেন, একটি মহল নির্বাচন এলে সহিংসতা ঘটিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করেন। সামনের নির্বাচনে যদি ১০টি মার্ডারও হয় তাহলে কর্মী সমর্থকরা যেন মাঠ ছেড়ে না যায় সেই আহ্বান করেছি। যাতে কেউ এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারেন নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার জন্যই আমার এমন বক্তব্য দেয়া। আমি হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। কেউ যদি মার্ডার করার রাজনীতি করতে আসেন এবং বিজয় ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন তাদের হুশিয়ারি করার জন্যই এই বক্তব্যের উদ্দেশ্য।
এমআই