ঢাকাশনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইঁদুর ধরা নেশাটাই এখন আনোয়ারের পেশা (ভিডিও)

জয়পুরহাট প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১ , ০২:৩৮ পিএম


loading/img
ছবি: আরটিভি নিউজ

ঘরের আসবাবপত্র আর খেতের ফসল সব কিছুতেই ভাগ বসিয়ে তা নষ্ট করে ইঁদুর। সেই ইঁদুর মারা একসময় ছিল জয়পুরহাটের আনোয়ার হোসেনের নেশা। সময়ের ব্যবধানে এখন সেটিই হয়ে গেছে তার পেশা। বাড়ির কিংবা খেতের ইঁদুর মেরে বিনিময়ে পান চাল অথবা টাকা। তা দিয়েই দুই সস্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে চলে তার সংসার। ২৫ বছর ধরে ইঁদুর নিধন করে যাচ্ছেন তিনি। চার লাখ ইঁদুর মেরে স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার।
  
আনোয়ার হোসেনের বাড়ি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর ভট্টপলাশী গ্রামে। শখের বসে প্রথম ইঁদুর মারা শুরু করেন আনোয়ার হোসেন। ইঁদুরের কাটা লেজ জমা দিয়ে স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে পান পুরস্কার। তাকে এলাকার সবাই এখন ইঁদুর আনোয়ার নামেই ডাকে। ইঁদুর মেরে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার। এখন ইঁদুর মারাকে তিনি পেশা ও নেশা হিসেবে নিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

আনোয়ার হোসেন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৫ বছর আগে যুবক বয়সে একদিন ধানের জমির মধ্যে থাকা ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান বের করেন অনোয়ার। পরে সেই ধান মুড়ি বিক্রেতার নিকট দিয়ে বিনিময়ে মুড়ি নেন। এরপর প্রায়ই তিনি ধানের জমিতে থাকা বিভিন্ন গর্ত থেকে ইঁদুরের লুকিয়ে রাখা ধান সংগ্রহ করেন এবং তা পরে বিক্রি করেন। এ সময় যেসব ইঁদুর গর্ত থেকে বের হতো তাদের ধরে মেরে ফেলেন। একদিন কৃষি কর্মকর্তা তাকে মরা ইঁদুরের লেজ স্থানীয় কৃষি অফিসে জমা দিতে বলেন। ইঁদুরের শতাধিক লেজ জমা দেওয়ার পর তাকে কিছু গম ও চাল সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়। তারপর থেকে আনোয়ার ইঁদুর মারাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। দুই সন্তানের জনক আনোয়ার হোসেন স্ত্রীকে নিয়ে সুখেই আছেন।

জেলার আক্কেলপুর উপজেলার তিলকপুর ভট্টপলাশী গ্রামের কৃষক আল মামুন, মিলন হোসেন, আব্দুস সামাদ জানান, শুধু  আমন ধান না, আলু থেকে শুরু করে সব ধরণের ফসল নষ্ট করে এই ইঁদুর। চলতি আমন ধানের মৌসুমে ইঁদুরে অত্যাচার অনেক বেশি। আমাদের এই ফসলগুলো  ইঁদুরের হাত থেকে রক্ষা করছে আনোয়ার ভাই। ইঁদুর মারার কারণে বিঘা প্রতি ৪ মণ ধান আর নষ্ট হচ্ছে না। 

বিজ্ঞাপন

স্বামীর এসব কাজে সবসময় পাশে থেকে সহায়তা করেন তার স্ত্রী রুবি বেগম। তাদের সংসার ভালই চলছে। এছাড়া বিভিন্ন পুরস্কার পাওয়ায় তিনি নিজেকে ও পরিবারকে নিয়ে গর্ববোধ করেন। ২৫ বছর ধরে ইঁদুর মেরেছেন প্রায় ৪ লাখ। ২০০৪ সালে ২৩ হাজার ৪৫১টি ইঁদুর মারার জন্য পান জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার।

আনোয়ার হোসেন আরটিভি নিউজকে জানান, এলাকার ৫৭ জনকে ইঁদুর ধরা ও মারার কৌশল শিখিয়েছেন। এখন তারা যেকোনো কৃষক ডাকলে সাড়া দেন এবং তাদের ইঁদুর ধরেন। বিনিময়ে তারা যে পারিশ্রমিক পান তা দিয়ে সংসার খরচ চালান। সবাই তাকে ইঁদুর মারার ওস্তাদ হিসেবেই মানেন। জেলা ছাড়াও অন্যান্য জেলার অনেককেই তিনি এ শিক্ষা দিয়েছেন। তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থকে এসে তার কাছে কীভাবে এ কাজ করতে হয় তা হাতে-কলমে দীক্ষা নেন।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম আরটিভি নিউজকে জানান, দেশের কৃষকের ফসল রক্ষার্থে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় জাতীয় ইঁদুর নিধন অভিযান। এ অভিযানে এ পর্যন্ত একাধিক স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছেন আনোয়ার হোসেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগ সবসময় তার সঙ্গে আছে এবং আগামীতেও পাশে থাকবে।
   
জিএম/এসকে 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |