কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের দিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের মধ্যস্থতায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তের আশ্বাস দিলে তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেন।
এর আগে বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টা থেকে ডা. মাহফুজুর রহমানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ অশালীন আচরণের অভিযোগ এনে কর্মবিরতি শুরু করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের আন্দোলনের মাথায় রাতেই অভিযুক্ত সেই চিকিৎসককে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়। তবে অভিযোগের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সুরাহা না পাওয়ায় কর্মবিরতি থেকে সরে আসেননি আন্দোলনরত চিকিৎসকরা।
তবে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের পরও অচলাবস্থা কাটেনি কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে। শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, অনেক রোগী আছে বিভিন্ন ওয়ার্ডে। কিন্তু দেখা যায়নি কোন চিকিৎসক বা নার্স। কর্তব্যরত চিকিৎসকের রুম খোলা থাকলেও নেই কোন চিকিৎসক। দরজায় সেসময় লেখা ছিল ইন্টার্ন কর্মবিরতি চলছে। আর অল্প সংখ্যক নার্স ব্যস্ত ছিল জরুরি রোগী নিয়ে।
এই অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন রোগী ও তাদের স্বজনরা। অথচ কাগজে কলমে বর্তমানে ২৫০ শয্যার কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে কর্মরত রয়েছে মাত্র ৪৫ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক।
এর আগে থেকে কর্মবিরতিতে যায় হাসপাতালটিতে কর্মরত ইন্টার্ণ চিকিৎসকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন চিকিৎসা নিতে আসা রোগিরা। তবে দুপুর আড়াইটা নাগাদ সেই দৃশ্য পাল্টে যায়। কাজে ফেরেন চিকিৎসকরা।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ইন্টার্ণ চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি মীর এম এম বিল্লাহ্ তকী জানান, আমরা আমাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছি। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে আমাদের ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে দুপুর থেকেই আমরা নিজেদের কাজে যোগ দিয়েছি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মুমিনুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাতেই অভিযুক্ত চিকিৎসককে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। তদন্ত কমিটি অভিযোগ তদন্ত করে শিগগিরই প্রতিবেদন দেবে।
কক্সবাজার ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. মীর ম.ম. বিল্লাহ জানান, ১৮ ঘণ্টা কর্মবিরতির পর ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিয়ে বৈঠক করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অভিযোগ আমলে নিয়ে তা তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়। তদন্তের আশ্বাস পেয়ে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ।
হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, যে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অভিযোগ তুলেছিলেন সেই চিকিৎসককে পেকুয়ায় বদলী করা হয়েছে এবং ঘটনাটির ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
ইন্টার্ন চিকিৎসকরা দাবি করেছিলেন, যৌন হয়রানি অভিযোগ করে উল্টো শাস্তির আদেশ দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এটি প্রত্যাহার এবং অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায়।
একাধিক ইন্টার্ন চিকিৎসক জানান, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে চরম ভোগান্তিতে পড়ে রোগীরা। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করে উল্টো শাস্তি পেয়েছেন তারা। তবে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: মুমিনুর রহমান জানিয়েছেন, জ্যেষ্ঠ চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায়, তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে সেবা প্রত্যাশীরা। তারা বলছেন, চিকিৎসা নিতে এসে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাদের স্বজনরা বলেন, একেক জন এসে একেক কথা বলছে। আমরা বুঝতে পারছি না কি করবো। বড় ডাক্তার একবার এসেছিল। তারপর আর আসেনি।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অভিযোগ, ছয়জন নারী ইন্টার্ন চিকিৎসক যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের বেতন কাটার সিদ্ধান্ত নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি এম এম বিল্লাহ্ তকী বলেন, আমরা যারা অভিযোগ জানিয়েছি তাদের বিরুদ্ধে প্রহসনমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ কারণেই আমরা কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম।
এমআই