স্বামী মারা গেছে সেই কবে। বেঁচে নেই সাত ছেলে সন্তানের একটিও। নারায়ণগঞ্জ শহরে ষাটোর্ধ্ব রামরতি রবিদাস জুতো সেলাইয়ের কাজ করে নিজের ভরণপোষণ চালান। স্বজন-পরিচিতজন অনেক থাকলেও হাত পাততে রাজি নন কারও কাছে। তবে বয়স বৃদ্ধি নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তা রয়েছে রামরতির। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, আমার আর ভবিষ্যত কী। স্বামী নেই-সন্তানও নেই। কে আমাকে আরাম দেবে।
শহরের নবাব সলিমুল্লাহ সড়কের ফুটপাতে বসে জুতো সেলাইয়ের কাজ করেন রামরতি রবিদাস। স্বামী কমল রবি দাস ওরফে মুসা বেঁচে থাকতে ঘরের কাজকর্ম নিয়েই সময় কাটতো তার। মাঝে মধ্যে স্বামীর পাশে বসে তার কাজ দেখতেন। তবে তখন ঘুর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি একদিন তাকে এ কাজ করেই জীবন ধারণ করতে হবে।
স্থানীয়রা আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা অবদি মুচির কাজ করেন এ নারী। এরইমধ্যে কিছুটা সময় করে রান্নাবান্না, গোসলসহ ঘরের কাজ সেরে নেন। ঘর বলতে চওড়া মাত্র ৫ ফুট আর লম্বায় ১০ ফুট। ভিতরটায় আলো-বাতাস ঢোকার কোনো সুযোগ নেই। দরজা নামক ফাঁকা দিয়ে ঘরে আসা যাওয়া করতে শরীর কাত করতে হয়। সলিমুল্লাহ সড়কের পাশেই রামরতির গৃহ যেন আধুনিক যুগের এক গুহা!
রামরতি রবিদাস আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, ৯ বছর আগে তার স্বামী মারা গেছেন। একে একে সাতটি পুত্র সন্তান জন্ম নিলেও কেউ তারা কেউ বেঁচে নেই। পরিণত বয়সের আগেই সন্তানরা পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। ভাইয়ের এক ছেলেকে নিজের কাছে রেখে বড় করলেও বিয়ের পর সে এখন অন্য জেলায় থাকেন।
তার ভাসুর নারায়ণ রবিদাস আরটিভি নিউজকে বলেন, আমার ভাই মারা যাওয়ার পর আমরা তাকে কাজ না করে আমাদের সঙ্গে থাকতে বলেছি। তিনি কিছুটা স্বাধীনচেতা। স্বাধীনভাবে কাজ করেন, স্বাধীনভাবে চলে কারও মুখাপেক্ষী হতে চান না।
রামরতির ভাসুরপুত্রের স্ত্রী দীপা রানী রবি দাস জানান, আমার বড় মা (রামরতি) বাইরে যেমন নিজে রোজগার করেন তেমনি বাড়িতেও নিজের কাজ নিজে করেন। রান্নাবান্না থেকে শুরু করে কাপড় ধোয়া পর্যন্ত কারও সহযোগিতা নেন না। তবে অসুখ বিসুখ হলে আমরা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আসাদুজ্জামান সরদার বলেন, সরকার বিধবাভাতা দিয়ে এ নারীকে সম্মানিত করেছেন। তবে আর কোনো ভাতায় যুক্ত করা সম্ভব নয়। তিনি যদি কর্মক্ষম না থাকেন তবে ইচ্ছে করলে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে পারেন।
তিনি জানান, সরকার সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে সব শিশু পরিবারে ১০ বয়স্ক মানুষের থাকার ব্যবস্থা করেছে।