রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী তানভীর আলম তুষার আত্মহত্যা করেননি। তাকে আঘাতের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
সোমবার (২১ মার্চ) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
তুষারের বাবা মোহসিন আলী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মেডিকেলের প্রতিবেদনে তিনি জানতে পারেন যে, তার ছেলে আত্মহত্যা করেনি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। হয়তো রাতের কোনো এক সময় কেউ বাড়িতে এসে তার ছেলেকে হত্যা করে মরদেহ ঝুলিয়ে রেখে কৌশলে পালিয়ে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, ছেলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের কললিস্ট অনুসন্ধান করলে হয়তো কোনো ক্লু বের হবে। ছেলেকে কারা হত্যা করল, কখন ছেলের মৃত্যু হলো, কেন ছেলেকে হত্যা করা হলো জানা যাবে। ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হারাগাছ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবু ছাইম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. ইফফাত শারমিন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, তানভীর আলম তুষারকে আঘাতের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তার বাবা মামলা করেছেন (৪ মার্চ)। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
পুলিশ সংবাদমাধ্যমকে আরও জানিয়েছেন, রংপুর সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাহেবগঞ্জ বাজার এলাকার ব্যবসায়ী মোহসিন আলীর একমাত্র ছেলে ছিলেন তানভীর আলম তুষার। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অষ্টম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। গত বছরের ৭ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে তার চাচাতো ভাই সাব্বির আলম তাকে ডাকতে এসে রুমের দরজা বন্ধ দেখেন।
ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। এ সময় তুষারকে ঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেন। স্থানীয় লোকজন তাকে নামানোর ব্যবস্থা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দেয়।
এর আগে নিজের ফেসবুক আইডিতে ‘I QUIT for ever’ লিখে স্ট্যাটাস দেন তুষার।
এ ঘটনায় তুষারের পরিবারের বরাত দিয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের হারাগাছ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শওকত আলী সরকার জানিয়েছিলেন, মোবাইলে জুয়া খেলতেন তুষার। এ নিয়ে পরিবারের সঙ্গে তার মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তুষার ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তুষারের মা তাসলিমা বেগম বলেন, তুষার শান্ত স্বভাবের ছিলেন। এলাকার কারও সঙ্গে জোরে কথা বলতেন না। জুয়া খেলা কী তা তিনি বুঝতেন না। তার বন্ধুরা বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাকে মোবাইলে জুয়া খেলায় আসক্তি করেন।
তিনি বলেন, ৫ অক্টোবর তুষার তার এক বন্ধুর বাড়িতে যায়। সেখানে রাত্রীযাপন করে পরদিন বিকেলে বাড়িতে আসে। সে সময় ছেলেকে বিষণ্ন থাকতে দেখা যায়। পরিবারের সবার সঙ্গে কথাও বলেছে। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ৭ অক্টোবর ঘরে ছেলের লাশ দেখতে পাই।