ঢাকাশনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২

নিম্নবিত্তদের ৩০০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা ‘চেতনা’, অপঃপর..

আরটিভি নিউজ

বুধবার, ২৩ মার্চ ২০২২ , ০৪:৩৯ পিএম


loading/img

ঢাকার সাভার-আশুলিয়া এলাকায় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত অন্তত এক হাজার পরিবারের কাছ থেকে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ‘চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এ অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

বিজ্ঞাপন

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ইকবাল হোসেন সরকার (৩৫), মাজহারুল ইসলাম (৩৫), মমিন হোসেন (৩৫), জাহাঙ্গীর আলম (৩৫), ইব্রাহিম খলিল (৩৫), এস এম মকবুল হোসেন (৪০), মিজানুর রহমান (৩৮), আল আমিন হোসেন (২৮), ফজলুল হক (৩৫) ও নুর হোসেন (২৭)।

মঙ্গলবার (২২ মার্চ) বিকেল ৫টা থেকে দিবাগত রাত ১টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে র‍্যাব-৪ এর একটি দল আশুলিয়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত নগদ অর্থ, মোবাইল ফোন ও ব্যাংক চেকসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজ্জাম্মেল হক।

ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য আসামিরা ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কথা বলতেন। যদিও তাদের বিধি মোতাবেক কোনো ইসলামি শরিয়াহ বোর্ড ছিল না।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা র‍্যাবকে জানায়, ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৩০ সদস্য বিশিষ্ট গভর্নিং বডি নিয়ে ‘চেতনা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্থানীয় বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও স্বল্পআয়ের মানুষদের অধিক মুনাফায় সঞ্চয় ও ক্ষুদ্র ঋণের প্রতি আকৃষ্ট করতেন তারা। ধীরে ধীরে এই সংস্থার বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে। একই সঙ্গে চেতনা মাল্টিপারপাস আরও বড় পরিসরে কাজ করা শুরু করে। তাদের মূল টার্গেট ছিল আশুলিয়া ও সাভার এলাকার মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার। তাদেরকে অতি উচ্চ মুনাফা প্রদানের আশ্বাসে কোম্পানিতে সঞ্চয়ী পলিসি, এফডিআর, ডিপিএস, পেনশন পলিসি, শিক্ষা পলিসি, হজ পলিসি ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী পার্টনার পলিসিতে আকৃষ্ট করতেন।

বিজ্ঞাপন

মোজ্জাম্মেল হক বলেন, সাধারণ সঞ্চয়ী পলিসিতে ১৮ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ হারে মুনাফা এবং ফিক্সড ডিপোজিটের ক্ষেত্রে ৩ থেকে ৫ বছরের দ্বিগুণ মুনাফা প্রদানের আশ্বাসে হাজারেরও অধিক পরিবারকে সমিতিতে টাকা জমা রাখতে উৎসাহিত করতেন তারা। এক্ষেত্রে বিশ্বাস অর্জনের জন্য সংস্থাটি গ্রহীতাকে প্রথম দিকে কয়েক মাস চুক্তি অনুযায়ী লভ্যাংশ প্রদান করত। যা দেখে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি বিনিয়োগে আগ্রহী হতেন। অনেকে নিজের পেনশনের টাকা, গ্রামের ভিটেবাড়ি বিক্রি করা টাকা, বিদেশ থেকে কষ্ট করে অর্জিত অর্থ ওই সংস্থায় উচ্চ মুনাফা লাভের আশায় জমা রাখেন। এভাবে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গত ১৬ মার্চ অফিস তালা দিয়ে লাপাত্তা হন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।

জানা যায়, সংস্থাটির অংশীদাররা বিভিন্ন জায়গায় নামে-বেনামে জায়গা-জমি কেনা, বহুতল ভবন নির্মাণ ও ছোট-বড় কারখানা করেছেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে নামে-বেনামে বিভিন্নভাবে অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন তারা।

ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের কোনো অনুমোদন না থাকলেও ব্যবসায়ীদের উচ্চ সুদে ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করত প্রতিষ্ঠানটি। ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং মারধর করতেন তারা। সাধারণ মানুষের বিনিয়োগ করা টাকা নিজেদের নামে সরিয়ে কমিটির কর্মকর্তারা নিজেদের নামে-বেনামে ফ্ল্যাট ও প্লট, বাগান, আবাদি জমি এবং বিভিন্ন ব্যাংকে নগদ টাকা লেনদেন করেছেন।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |