বাংলাদেশের জাতীয় কবি কে? এ নিয়ে প্রশ্নের কোনো অবকাশ নেই। কাজী নজরুল ইসলাম হলেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি। কিন্তু একটি রাষ্ট্রে কোনো কিছুকে জাতীয় করতে যে লিখিত বা গেজেট প্রকাশ করতে হয় সেটি আজ পর্যন্ত পূরণ হয়নি দুখু মিয়ার বেলায়। তাই তিতা হলেও সত্য যে তিনি এখনও অলিখিত, অনানুষ্ঠানিক ও মৌখিকভাবে স্বীকৃত হয়ে আছেন।
জাতীয় করণ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিধায় কবির লেখা থেকে পাওয়া দেশের জাতীয় স্লোগান 'জয় বাংলা' গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। কবির নামে দেশে আছে দুটি আইনও। একটি কবি নজরুল ইনস্টিটিউট আইন অন্যটি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মনে করেন, জাতীয় কবিকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির প্রয়োজন আছে। আর সেটি পূরণ এখন সময়ের দাবি। কারণ, দাবিটি দীর্ঘদিন থেকে কবি পরিবার, কবি ভক্ত সমাজ থেকে সরকার মহলে জানানো হয়েছে। সম্প্রতি, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কবি’ হিসাবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক বরাবর আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয় নিয়ে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরকে ভাবাচ্ছে। তাদের মতামত তুলে ধরছে আরটিভি অনলাইন।
শিক্ষার্থী জায়েদ বলেন, এ বছর আমরা আমাদের প্রিয় কবির বাংলাদেশে আগমনের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করেছি। কবির সম্মানার্থে দেশে অনেক কিছু হলেও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির ব্যাপারে এত বছরেও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আমি দাবি জানাই কবিকে গেজেট আকারে জাতীয় কবির ঘোষণা দেওয়া হোক।
স্বীকৃতির ফলে আইনগত ভিত্তি শক্ত হবে উল্লেখ করে শিক্ষার্থী সিফাতী জান্নাত মীম বলেন, কবি নজরুল আমাদের প্রাণের কবি। জাতীয় কবি হিসাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে উনার আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি আমাদেরকে প্রশান্তি দেবে। স্বীকৃতির ফলে আইনগত ভিত্তি শক্ত হবে, ইতিহাসও হবে পাকাপোক্ত। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে জাতীয় কবিকে গেজেট প্রকাশ করে স্বীকৃতি চাই।
শিক্ষার্থী শাকিল বাবু বলেন, কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাম দেশের সকলের মানুষের কাছে অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে। কিন্তু তাকে মৌখিকভাবে জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও লিখিত কোনো ডকুমেন্টস নেই। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমি চাই অতিদ্রুত আমাদের প্রাণপ্রিয় কবি নজরুলকে লিখিতভাবে জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
দ্রুত ঘোষণা চেয়ে শিক্ষার্থী সাজেদুল বলেন, কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে নিয়ে আসেন। আমরা তাকে জাতীয় কবি বলে সম্বোধন করি কিন্তু তা কোথাও লিখিতভাবে জাতীয় কবির স্বীকৃতি নেই। বাংলাদেশে সাম্য, অসাম্প্রদায়িক ও শোষণ-মুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় নজরুলের চেতনার সুর প্রতিধ্বনিত্ব করতেই হবে। কাজেই কবি নজরুলকে যথাযথ মর্যাদা দিতে লিখিতভাবে জাতীয় কবির ঘোষণা দ্রুত চাই।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সুজন আলী বলেন, অফিশিয়ালি জাতীয় সংসদ থেকে জাতীয় কবি হিসাবে কবি নজরুলকে ঘোষণা করা হয়, তাহলে স্থায়ী একটা ঘোষণা হবে এবং এটা হওয়া উচিত। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসাবে মনে করি কবি নজরুলকে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় কবির সম্মানে ভূষিত করা হোক।
বঙ্গবন্ধু নীল-দলের সভাপতি ও প্রক্টর অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, জাতীয় কবির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির প্রয়োজন অনুভব করি। আগে থেকে আমরা শিক্ষকেরা এ দাবি নানাভাবে জানিয়ে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে বাংলাদেশে আসা কবি নজরুলকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির ব্যাপারে জননেত্রী শেখ হাসিনা পদক্ষেপ নেবেন বলে আশা করি।