চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১১ জন নিহত হয়েছেন। ঘটনার পর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দাবি করে, ব্যারিকেড ও গেটম্যানের লাল পতাকা উপেক্ষা করে চালক মাইক্রোবাস লাইনে তুলে দেওয়ায় ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে ভিন্ন তথ্য জানাচ্ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী অনেকে। তাদের দাবি দুর্ঘটনার সময় ক্রসিংয়ে ছিলেন না গেটম্যান। কেউ ব্যারিকেডও দেয়নি।
-
আরও পড়ুন... একসঙ্গে চলতেন তারা, একসঙ্গেই মারা গেলেন
রেল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের পাল্টাপাল্টি এমন বক্তব্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। তবে এবার প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরলেন দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া মাইক্রোবাসের যাত্রী ইমন।
ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের মধ্যে সবচেয়ে কম জখম হয়েছেন তিনি। শারীরিকভাবে ভালো থাকলেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ইমন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ২৪ নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ইমন বলেন, মাইক্রোবাসে আমরা সবাই গল্প-আড্ডায় ফিরছিলাম। ক্রসিংয়ে কোনো ব্যারিকেড ছিল না। সেখানে গেটম্যানও ছিলেন না। মাইক্রোবাস যখন একেবারে লাইনের ওপর উঠে যায়, ঠিক তখন খুব জোরে ট্রেনের হুইসেল শুনতে পাই। মুহূর্তেই ট্রেন আমাদের মাইক্রোবাসে ধাক্কা দেয়। এরপর অনেক দূর পর্যন্ত ঠেলে নিয়ে যায়।
-
আরও পড়ুন... ট্রেন দুর্ঘটনা : চিরনিদ্রায় ১১ জন
তিনি বলেন, যেদিক দিয়ে ট্রেন মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিয়েছে, তার উল্টো দিকে জানালার পাশে ছিলাম আমি। ট্রেনের গতি যখন কমে যায়, অনেকটাই থেমে গেলে জানালা দিয়ে আমি বেরিয়ে আসি। এরপর আশপাশের লোকজন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
ইমন বলেন, ভোর সাড়ে ৬টার দিকে আমরা খৈয়াছড়ায় গিয়েছিলাম। দুপুরে ফিরে আসছিলাম। মাইক্রোবাসে আরএনজে কোচিং সেন্টারের ১৬ জন ছিলাম। এর মধ্যে ১২ জন শিক্ষার্থী এবং চারজন শিক্ষক ছিলেন। বাকি দুজনের মধ্যে একজন চালক, আরেকজন চালকের সহকরী ছিলেন। কাদের কী অবস্থা এখনও স্পষ্ট কিছুই জানি না।
ইমনের বাবা আবুল কাশেম বলেন, আমার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে ইমন হাটহাজারী উপজেলার আমান বাজারের জিয়াউর রহমান কলেজে পড়ালেখা করে। ও আরএনজে কোচিং পড়ত। স্যার ও বন্ধুদের সঙ্গে বেড়াতে গিয়েছিল।
-
আরও পড়ুন... ‘বাবা আমি চলে যাব, আমার জন্য দোয়া করিয়েন’
২৪ নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. নাজমুন নাহার বলেন, দুপুর ২টার কিছু সময় পর ইমনকে হাসপাতালে আনা হয়। তার শরীরে যেসব জখম, তা খুব মাইনর (ছোট)। মাথার একপাশে একটু কেটে গেছে, পায়ে আঘাত পেয়েছে। এগুলো আশঙ্কাজনক কিছু নয়। তবে ইমন মানসিকভাবে কিছুটা সমস্যায় আছে।
তিনি বলেন, ইমনের পর আরও চারজনকে জরুরি বিভাগে আনা হয়েছিল। তাদের মাথায় ও শরীরে গুরুতর আঘাত থাকায় নিউরোসার্জন বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তাদের চিকিৎসা চলছে।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুর ১টার দিকে খৈয়াছড়া এলাকায় একটি রেলক্রসিংয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় ইমনের সঙ্গে থাকা ১১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও সাতজন। তাদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
-
আরও পড়ুন... কোচিং সেন্টারের আয় দিয়ে সংসার চলতো সজিবের
দুর্ঘটনার পর প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনছার আলী জানান, ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসছিল ‘মহানগর প্রভাতী’ এক্সপ্রেস। খৈয়াছড়া এলাকায় একটি লেভেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস লাইনে উঠে পড়ে। সংঘর্ষের পর মাইক্রোবাসটি ট্রেনের ইঞ্জিনের সঙ্গে আটকে যায়। ওই অবস্থায় মাইক্রোবাসটিকে বেশ খানিকটা পথ ছেঁচড়ে নিয়ে থামে ট্রেন।
সেসময় রেল কর্মকর্তা আনছার দাবি করেন, ট্রেন আসায় সিগন্যাল পেয়ে গেটম্যান সাদ্দাম বাঁশ ফেলে ব্যারিকেড দিয়েছিলেন। কিন্তু মাইক্রোবাসটি বাঁশ ঠেলে ক্রসিংয়ে উঠে পড়ে।
পরে পূর্বাঞ্চল বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী দাবি করেন, ঘটনার সময় গেটম্যান উপস্থিত ছিলেন। তিনি বার বার লাল পতাকা উঁচিয়ে তাদের বারণ করলেও মাইক্রোচালক শোনেননি। তার অবহেলার কারণেই এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে।