অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে লক্ষ্মীপুর সদরের পার্বতীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পরে ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের শূন্য পদে পৃথক দুটি চিঠি ইস্যু করে দুই ইউপি সদস্যকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতে দায়িত্ব পালন নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
এ ঘটনায় ওই দুই ইউপি সদস্যের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। এখন দুজনই নিজেদেরকে ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে দাবি করছেন। এ নিয়ে পরিষদের অন্যান্য সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে প্রশাসনিক জটিলতাসহ মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসেন স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনের চিঠি এ প্রতিবেদকের কাছে এসে পৌঁছেছে।
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র জানিয়েছে, অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি পার্বতীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওহিদুর রহমানকে বহিষ্কার করে পদটি শূন্য ঘোষণা করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসেন। ইতোপূর্বে এ ইউনিয়ন পরিষদের কোনো প্যানেল চেয়ারম্যান গঠন না হওয়ায় ইউপির দাপ্তরিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।
পরবর্তীতে স্থানীয় নাগরিকদের সেবাপ্রদান ও ইউপির দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২৪ জানুয়ারি (স্মারক নং ৭৩) ইউপি সদস্য মো. কামরুজ্জামানকে প্যানেল চেয়ারম্যান-১, ইউপি সদস্য মাইন উদ্দিন ভূঁইয়াকে প্যানেল চেয়ারম্যান-২ ও সংরক্ষিত ইউপি সদস্য (মহিলা) ইসরাত জাহান ফারজানাকে প্যানেল চেয়ারম্যান-৩ উল্লেখ করে প্যানেল চেয়ারম্যান গঠন করে প্রথমে একটি চিঠি ইস্যু করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
একই সঙ্গে (স্মারক নং ৭৪) মো. কামরুজ্জামানকে পার্বতীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের শূন্য পদে দায়িত্ব পালনের জন্য স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪ ধারার উপধারা-২ এর ক্ষমতাবলে একটি লিখিত প্রজ্ঞাপন জারি করেন ইউএনও।
এদিকে আবার দুদিনের মাথায় আগের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ মো. কামরুজ্জামানকে বাদ দিয়ে ২৬ জানুয়ারি পুনরায় একই ইউনিয়ন পরিষদে (স্মারক নং ৮৯) ইউপি সদস্য মো. মাইন উদ্দিন ময়ূরকে প্যানেল চেয়ারম্যান-১, ইসরাত জাহান ফারজানাকে প্যানেল চেয়ারম্যান-২ ও মাইন উদ্দিন ভূঁইয়াকে প্যানেল চেয়ারম্যান-৩ উল্লেখ করে আরেকটি চিঠি ইস্যু করেন।
একই সময় ভিন্ন আরেকটি স্মারকে (স্মারক নং ৯০) মো. মাইন উদ্দিন ময়ূরকে চেয়ারম্যানের শূন্য পদে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে পুনরায় আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন ইউএনও। এতে ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন নিয়ে দুই জনপ্রতিনিধির মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান-১ মো. কামরুজ্জামান বলেন, ২৪ জানুয়ারি প্যানেল চেয়ারম্যান গঠনের পর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমাকে ইউপি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন ইউএনও। এরপর থেকে বিভিন্ন জন্মনিবন্ধন, নাগরিকত্ব সনদসহ বিভিন্ন সনদে স্বাক্ষর এবং জনগণকে সেবা দিয়ে আসছি। কিন্তু হঠাৎ করে ২৯ জানুয়ারি ইউপি সদস্য মাইন উদ্দিন ময়ূর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে আরেকটি চিঠি এনে নিজেকে চেয়ারম্যান দাবি করছেন। কিন্তু আমাকে দায়িত্ব পালন স্থগিতের জন্যও ইউএনও কোনো চিঠি দেয়নি। এটা কিভাবে সম্ভব, একই ইউনিয়নে দুজন চেয়ারম্যান! এ ঘটনায় জনগণের সেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২৬ তারিখ উল্লেখিত প্রজ্ঞাপনটি বাতিলের দাবি জানান তিনি।
এদিকে নতুনভাবে ইস্যুকৃত প্যানেল চেয়ারম্যান-১ ও ইউপি সদস্য মাইন উদ্দিন ময়ূর বলেন, ২৬ জানুয়ারি ইস্যুকৃত চিঠির বিষয়টি ২৯ জানুয়ারি জানতে পারি। এরপর ৩১ জানুয়ারি পরিষদের দায়িত্ব গ্রহণ করি। তবে পূর্বে দায়িত্ব দেওয়া মো. কামরুজ্জামানকে কোনো কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়নি, সে বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। তবে তার দাবি, এক ইউপিতে দুইজন চেয়ারম্যান রয়েছেন, এমন কথা তিনি কোথাও শুনেননি।
পার্বতীনগর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. তসলিম উদ্দীন বলেন, প্যানেল চেয়ারম্যান-১ মো. কামরুজ্জামানকে দায়িত্ব দেওয়ার পর উনার নামে সিল ও প্রয়োজনীয় সব কিছু তিনি পরিষদের তৈরি করেছেন। কিন্তু হঠাৎ করে ২৯ জানুয়ারি আমাকে ডেকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরেকটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ইউপি সদস্য মাইন উদ্দিনের ময়ূরকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের জন্য একটি প্রজ্ঞাপন জারির চিঠি দেন। ওই আলোকে মাইন উদ্দিন ময়ূর দায়িত্ব পালন করবেন।
তবে পূর্বের কামরুজ্জামানের নির্দেশটি বাতিল না করার বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনওর রোষানলে পড়তে হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বলেন, ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের শূন্য পদে কামরুজ্জামানকে দায়িত্ব দেওয়া হলে, ইউনিয়ন পরিষদের বাকি অন্য সদস্যরা প্যানেল চেয়ারম্যান-১ কামরুজ্জামানকে অনাস্থা দেবেন বলে স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরীকে মৌখিকভাবে জানান। পরে ওই সংসদ সদস্যের ডিউ লেটার প্রাপ্তির মাধ্যমে প্যানেল চেয়ারম্যান পুনর্গঠন করে ইউপি সদস্য মাইন উদ্দিন ময়ূরকে ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তবে পূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব স্থগিতের জন্য কোনো চিঠি ইস্যু করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, এমপির নির্দেশ মোতাবেক পুনর্গঠন করা হয়েছে। এতে অনিয়ম হয়নি।