স্পঞ্জের মতো নরম রসগোল্লার নাম এখন মানুষের মুখে মুখে। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে রসগোল্লার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন কারিগররা। মিষ্টিপ্রেমীদের কাছে সবসময়ই জিভে জল আনা সেই রসগোল্লার নাম মাতাজী স্পঞ্জ মিষ্টি। আপ্যায়ন কিংবা সুখকর উদযাপনের কথা ভাবতেই ক্রেতার প্রথম পছন্দ এই স্পঞ্জ মিষ্টি। দেশের চাহিদা পূরণ করে বর্তমানে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এর সুখ্যাতি।
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার একটি বাজারের নাম মাতাজীহাট। সেই বাজারটিতে বিশেষ ধরনের এক রসগোল্লা পাওয়া যায়। স্পঞ্জের মতো নরম সেই মিষ্টি মুখে দিলেই গলে যায়। স্পঞ্জের মতো নরম আর মাতাজীহাটে পাওয়া যায় বলে স্থানীয়দের কাছে সেই মিষ্টি মাতাজীর স্পঞ্জি মিষ্টি নামে পরিচিত।
মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ ইউনিয়নের কুন্দনা গ্রামের বাসিন্দা গণেশ চন্দ্র মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি প্রতি বুধবার হাটের দিন মাতাজীহাট বাজারে দোকান বসিয়ে মিষ্টি বিক্রি করতেন। গণেশ মণ্ডলই প্রথম স্পঞ্জের মতো নরম রসগোল্লা বিক্রি করতেন। ধীরে ধীরে তার স্পঞ্জি রসগোল্লার সুনাম ছড়িয়ে পড়লে তার বেচা-বিক্রি বেড়ে যায়। একসময় মাতাজীহাটে মাটির ঘর করে সেখানে মিষ্টি বিক্রির দোকান খুলে বসেন। বর্তমানে গনেশ মণ্ডল মারা যাওয়ার পর তার ছেলে ফটিক চন্দ্র রনি দোকানটি পরিচালনা করেন।
তিনি আরও বলেন, তাদের দোকানেই বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৪০ থেকে ৫০ কেজি মিষ্টি বিক্রি হয়ে থাকে। এ ছাড়া নওগাঁ ও মহাদেবপুরের মিষ্টির দোকানগুলোতে আমাদের মিষ্টি অর্ডার দিয়ে দোকানদাররা নিয়ে যান। বিয়ের অনুষ্ঠান কিংবা অন্য যেকোনো অনুষ্ঠানের জন্য অনেকে একসঙ্গে অনেকে ৩০ থেকে ৪০ কেজি স্পঞ্জি রসগোল্লার অর্ডার দিয়ে থাকেন। এ ছাড়াও ভারত, মালোশিয়া, শ্রীলঙ্কাসহ অনেকেই বিভিন্ন দেশে মিষ্টি নিয়ে যায়। তাদের জন্য আলাদাভাবে প্যাকেটজাত করে পাঠানো হয়। স্পঞ্জের মিষ্টির পাশাপাশি তাদের দোকানের রসমালাই ও কালোজাম জাতের মিষ্টি অনেক সমাদৃত।
এদিকে দোকানে মিষ্টি খেতে আসা ক্রেতারা জানান, মাতাজীর রসে ভরা স্পঞ্জি রসগোল্লা একটি ঐতিহ্যবাহী একটি মিষ্টি। একবার খেলে বারবার খেতে মন চায়। এই রসগোল্লার সুনাম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম কিংবা অন্য এলাকায় আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে এই রসগোল্লা নিয়ে গেলে তারা আরও এই মিষ্টি খেতে চায়। দূর থেকে আসা ক্রেতা নিজে খেয়ে পরিবারের সদস্যদের জন্য এই রসগোল্লা নিয়ে যায়। এই মিষ্টি যে একবার খাবে বারবার সেই মিষ্টি খেতে চাইবে।
মাতাজী হাটে অবস্থিত মা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। বাবার রেখে যাওয়া স্পঞ্জ মিষ্টির ঐতিহ্য ধরে রেখে এর সুখ্যাতি চারেদিকে ছড়িয়ে দেওয়ায় লক্ষ্য ছেলের।