প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কার পাওয়া মাউথ পেইন্টার ইব্রাহিমের কষ্টে দিন কাটছে
২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর আরটিভিতে উঠে আসে হাত পা বিহীন মাউথ পেইন্টার নওগাঁর মান্দার ইব্রাহিম মল্লিক এর গল্প। সংবাদ প্রকাশের পর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাকে আধা পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়। মাথা গোজার ঠাই মিললেও মুখ দিয়ে আঁকা ছবিগুলো বিক্রি না হওয়ায় বর্তমানে নিজ চিকিৎসা খরচ বহনসহ সংসার চালাতে কষ্টে জীবন যাপন করছেন ইব্রাহিম। তার অসহায়ত্বের কথা শুনে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।
নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের বালুবাজার এলাকায় বসবাস করেন মাউথ পেইন্টার ইব্রাহিম মল্লিক। বাড়ি পেয়ে মাকে নিয়ে সরকারের দেওয়া বাড়িতে বসবাস করছেন ইব্রাহিম। তিন রুম বিশিষ্ট আধাপাকা বাড়িতে একটি কক্ষে গড়ে তোলার চেষ্টায় আছেন নিজের মুখ দিয়ে আঁকা ছবির প্রদর্শনী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অনেক সেলিব্রেটিদের ছবি মুখ দিয়ে এঁকেছেন ইব্রাহিম। সুযোগ পেলে দিতে চান তাদের ছবিগুলো উপহার।
গণমাধ্যমে ইব্রাহিম মল্লিককে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর কিছু দিন তার ছবিগুলো ভালো বিক্রি হয়েছিল। এরপরে তিনি বেশকিছু ভালো ছবি আঁকার অর্ডার পেতে থাকেন। কিন্তু করোনার সময় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণের তাকে আর কেউ ছবি আঁকার অর্ডার দেন না।
আক্ষেপ প্রকাশ করে প্রতিবন্ধী ইব্রাহিম মল্লিক জানান, তিনি সরকার থেকে বাড়ি পেয়েছেন। প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড পেয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবন্ধীদের ছবি আঁকার প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে এক লাখ টাকা পুরস্কার দিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তার আর একটি ছবিও বিক্রি হয় না। এতে করে তিনি খুব বিপাকে আছেন। সরকার যদি তাকে তার প্রতিভার সঠিক মূল্যায়ন করে তার ছবিগুলো প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে তাহলে তার দেশে-বিদেশে মূল্যায়ন বাড়বে, পরিচিতি বাড়বে। এতে করে তিনি সামাজিক ও আর্থিক দুইভাবেই সচ্ছল হবেন বলে তিনি মনে করেন।
তার এলাকাবাসী ও পরিবার বলেন, সরকার থেকে বাড়ি পেয়ে তাদের অনেক উপকার হয়েছে। তারা ইব্রাহিম মল্লিকের মুখ দিয়ে আঁকা ছবির সরঞ্জাম গুলো সাজিয়ে দেওয়ার সহযোগিতা করেন। ইব্রাহিমের যে প্রতিভা তার যথাযথ মূল্যায়ন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন। তারা মনে করেন সরকার অথবা বিত্তশালী কোন ব্যক্তি যদি তার আঁকা ছবিগুলো প্রদর্শনী অথবা বিক্রির ব্যবস্থা করতো তবে সে অনেক উপকৃত হতো।
মাউথ পেইন্টার ইব্রাহিম মল্লিক এর দুরবস্থার কথা শুনে পরানপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহাফুজুর রহমান উজ্জ্বল জানান- ইব্রাহিমের পরিবারকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রতিমাসে ৩০ কেজি চাল প্রদান করা হবে। এছাড়াও তার মুখ দিয়ে আঁকা ছবিগুলো প্রদর্শনের মাধ্যমে তার প্রচার ও প্রসারের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি।
দুর্ঘটনায় হারানো হাত পা বিহীন ইব্রাহিম মুখ দিয়ে ছবি একে নিজ প্রতিভাকে জনান দিচ্ছে। এমনকি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষও তার এই প্রতিভাকে আইডল হিসেবে দেখছেন। অস্বচ্ছলতায় তার প্রতিভা যেন হারিয়ে না যায় এমনটাই চাওয়া এলাকাবাসীর।
মন্তব্য করুন