প্রশংসা কুড়াচ্ছে ‘গোশত সমিতি’
ঈদের আগমুহূর্তে অস্থির হয়ে উঠেছে মাংসের বাজার। সারাদেশে গরুর মাংসের দাম কেজিতে কোথাও ৩০, কোথাও ৫০ টাকা বেড়েছে। ফলে নিম্নবিত্তদের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে গরুর মাংস। নিম্ন-মধ্যবিত্তও পড়ছেন দুচিন্তাই। তবে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার আশার আলো ব্যতিক্রমী ‘গোশত সমিতি’।
স্থানীয়দের ভাষায় এই সমিতির নাম ‘গোশত বা মাংস সমিতি’। অনেকের কাছে ‘গরু সমিতি’ নামেও পরিচিত। উপজেলার ধল্লা ইউনিয়ন ছাড়াও জয়মন্টপ, জামির্ত্তা, চান্দহর, বায়রা, তালেবপুর, শায়েস্তা, চারিগ্রাম, জামশা ও সিংগাইর সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের আরও অনেক সমিতি গড়ে উঠেছে।
জানা গেছে, সিংগাইরে গ্রাম, পাড়া বা মহল্লায় ঈদুল ফিতর সামনে রেখে ৩০ থেকে ১০০ জন মিলে গঠিত হয় মাংসের সমিতি। প্রতিবছর বাড়ছে মাংস সমিতির সংখ্যা। আগের বছর ঈদের পরপরই গঠিত হয় এ সমিতি। এতে অন্তর্ভুক্ত প্রতিজন সদস্য মাসে মাসে সমিতিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা রাখেন। ঈদের আগে জমাকৃত অর্থ দিয়ে পশু কেনা হয়। শবেকদরের দিন থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এই পশু জবাই করে গোশত সমিতির প্রত্যেক সদস্যকে ভাগ করে দেওয়া হয়। এতে ঈদ উদযাপনের ক্ষেত্রে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষের ওপর আর্থিক চাপ যেমন কমে, তেমনি ঈদের আগে সবাই বাড়তি আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারেন। বর্তমানে লোকজনের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে মাংস বা গোশত সমিতি।
ভ্যান চালক উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের মো. টোকন শেখ। পরিবারের সব খরচ মিলিয়ে তাকে অনেকটা নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থায় সংসার চালাতে হয়। ঈদ এলে পোশাকসহ সব কেনাকেটা শেষে একদমই খালি হাত এরই মধ্যে আদরের সন্তানদের বায়না থাকে ঈদের দিন গোশত খাওয়ার। ঈদের দিনে সন্তানদের গোশত খাওয়ানোর ইচ্ছা থাকলেও সাধ্যে কুলায় না। এ কারণে গত দুই বছর যাবৎ নয়াপাড়া ‘গোশত সমিতির সদস্য হয়েছেন।
নয়াপাড়া গোশত সমিতির মূল উদ্যোক্তা মো. সারোয়ার হোসেন জানান, এবার সমিতির ৬৩ জন সদস্য প্রতিমাসে ২০০ টাকা করে অর্থ জমা রেখেছেন। এরই মধ্যে গরু কেনা হয়েছে, আগামিকাল কিংবা পরের দিন জাবাই করে মাংস সমিতির সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হবে। বাজার দরের চেয়ে অনেক কম দামে এবং এক সাথে বেশি পরিমাণ গোশত পেয়ে প্রত্যেকেই খুব খুশি হবেন আশা করি। শবেকদরের দিন থেকে শুরু হয় সমিতির পশু জবাইয়ের কাজ। চলে ঈদের দিন পর্যন্ত।
এ বিষয়ে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পলাশ কুমার বসু বলেন, এটা খুবই ইতিবাচক উদ্যোগ। সকল শ্রেণির লোকজনের অংশগ্রহণে এ ধরনের গোশত সমিতি সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই সঙ্গে সকলের মধ্যে ঈদের আনন্দটাও অনেক বাড়িয়ে দেয়।
মন্তব্য করুন