লোকনাট্য কিচ্ছা শিল্পী সাইদুল অর্থাভাবে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত
তার গান না বাজালে বিয়েবাড়িতে আনন্দ হয় না। লোকনাট্য কিচ্ছা পরিবেশনে অঙ্গভঙ্গি নাচিয়ে লাখ লাখ দর্শক মাতাতেন তিনি। ক্যাসেট রেকর্ডিংয়ের যুগে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক কিচ্ছা গান, ভাণ্ডারি গান, ইসলামিক গান এবং লোক গল্প কাহিনি-সমৃদ্ধা অ্যালবাম বের করেছিলেন সাউন্ডটেক সঙ্গীতার মতো রেকর্ডিং সেন্টারগুলো। স্টেজে গান করতে গিয়ে স্ট্রোক করে এখন বিছানায় শয্যাশায়ী দিন পার করছেন দেশের কিচ্ছা সম্রাট খ্যাত শিল্পী সাইদুল ইসলাম। অর্থাভাবে করতে পারছেন না চিকিৎসা।
নওগাঁ সদর উপজেলার শৈলগাছি ইউনিয়নের দিঘির পার এলাকা বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম। তিন মেয়ে এবং দুই পুত্রসন্তানের বাবা তিনি। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর নিজ সংগীত জগতের সঙ্গী সুমাইয়া ইসলামকে বিয়ে করেন। ছেলেরা প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় বাবার চিকিৎসার খরচ বহনে অপারগ। তাই সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছে পরিবার।
৭০ বছর বয়সী সাইদুল ইসলাম দিঘির পাড়া বাজার এলাকার মৃত হাদেশ আলীর ছেলে। শৈশব জীবনে নানান চড়াই-উতরাই পার করে তিনি হয়ে উঠেছিলেন দেশের বিখ্যাত একজন শিল্পী। তার স্ত্রী সুমাইয়া সাইদুল জানান, শৈশবে কিচ্ছা গানের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে দিনাজপুরের হিলি অঞ্চলের কিচ্ছা শিল্পী জয়নাল আবেদীনকে অনুসরণ করে উস্তাদ মেনেছিলেন। গ্রামীণ কিচ্ছা কাহিনি সম্মিলিত গান শুধু সাইদুলের কণ্ঠে মানুষ ভালোবাসে।
শুধু দেশে নয়, ভারতেও সাইদুল কিচ্ছা গান গেয়েছেন স্টেজ প্রোগ্রাম করেছেন। তার জনপ্রিয়তা সারাদেশে বিস্তৃত। এখনও বিয়ে বাড়িতে তার গান সাউন্ড-বক্সে বাজিয়ে নাচেন ছোট বড় সকলে। তিনি আজ চিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যু শয্যায়। শুধু কিচ্ছা নয়, গেয়েছেন পালা গান, দেশের গান এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও গান করেছেন তিনি। চিকিৎসার অভাবে এমন শিল্পী যেন হারিয়ে না যায় এমনটাই প্রত্যাশা করেন পরিবার।
এদিকে সন্তানরা এবং এলাকাবাসী চান এমন একজন গুণী শিল্পী চিকিৎসার অভাবে যেন হারিয়ে না যান। সরকার যেন এই শিল্পীর চিকিৎসার খোঁজখবর রাখে। তিনি আবারও সুস্থ হয়ে গানে ফিরবেন এমনটাই কামনা করেন তারা।
শিল্পী সাইদুলের এমন অবস্থা জানার পর জেলা সমাজসেবা কর্যালয়ের উপপরিচালক নুর-মোহাম্মদ মুঠোফোনে জানিয়েছেন, তিনি একজন গুণী শিল্পী। তার চিকিৎসাসহ সকল সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বর্তমানে চিকিৎসা নিতে চাইলে সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন। তার মত গুণী শিল্পীদের পাশে সরকার সবসময় থাকবে।
এমন গুণী শিল্পী হারিয়ে গেলে আর একটিও আসবে না। সাইদুল শুধু শিল্পী না কিচ্চা গানের মাধ্যমে গ্রাম বাংলা মানুষের আনন্দ প্রদানের প্রধান রসদ এমনটাই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য করুন