ঢাকাবুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

সন্তান বিক্রির টাকার ভাগ নেন মা, স্বামীর নামে মামলা

আরটিভি নিউজ

সোমবার, ১০ জুন ২০২৪ , ০৩:৫৫ এএম


loading/img
ছবি: সংগৃহীত

যমজ শিশু রায়ান ও ফাহমিদা গর্ভে থাকাকালীন সময়ে বিক্রির চুক্তি করেন তাদের মা মুন্নী আকতার। পরবর্তীতে পৃথিবীর আলো দেখার সঙ্গে সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী মোট ৩ লাখ টাকা দিয়ে দুই দম্পতির কাছে তাদের বিক্রি করে দেওয়া হয়। যদিও এ ঘটনায় মোট ৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়। বাকি এক লাখ টাকা নেন চুক্তির মধ্যস্থতাকারী এক নারী। আর স্বামী হাবিবুর রহমানকে ফাঁসাতে সন্তান বিক্রির অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে মামলাও করেন মুন্নি।

বিজ্ঞাপন

একটি নালিশি মামলা তদন্তে নেমে ৫ মাস ৫ দিন বয়েসের ওই দুই যমজ শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিট। শনিবার (৮ জুন) রাঙ্গুনিয়া উপজেলা থেকে একজনকে এবং অপরজনকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থেকে উদ্ধারের পর সংস্থাটির কর্মকর্তারা এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য জানান।

রোববার (৯ জুন) দুপুরের পর শিশুদের মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। কিন্তু আদালতের বিচারক এজলাস থেকে নেমে যাওয়ায় দুই শিশু, তাদের মা এবং শিশুদের দত্তক নেওয়া দুই নারী নগরীর ডবলমুরিং থানার পাশে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রয়েছেন। আদালতের মৌখিক নির্দেশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান পিবিআই কর্মকর্তারা।

বিজ্ঞাপন

নালিশি মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট পিবিআই কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ৩১ মার্চ মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মুন্নী আকতার নামে এক নারী মামলা করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, গত ৩ জানুয়ারি নগরের পাঁচলাইশ থানার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি এক ছেলে এবং এক মেয়ের জন্ম দেন। জন্মের পরপর বাবা হাবিবুর রহমান সন্তান দুটিকে অজ্ঞাতনামা নারীদের হাতে তুলে দেন। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক রোকসানা আকতার ও মামুন এ কাজে সহযোগিতা করেন।ঘটনার সময় বিষয়টি নিয়ে মুন্নী আকতারের মেয়ে রুমা আকতার ও ছেলে রেহান প্রতিবাদ করলে হাবিবুর রহমান তাদের বাথরুমে আটকে রাখেন। পরবর্তীতে চিকিৎসকরা জানান, জন্মের পর বাচ্চা দুটি অসুস্থ হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে মুন্নী তার সন্তানদের কোনো খোঁজ না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত মামলাটির অভিযোগ শুনে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটকে তদন্তের আদেশ দেন।

তবে পিবিআই মামলার তদন্তে নেমে সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য পায়। সংস্থাটি জানায়, মুন্নী ও তার স্বামী পটিয়ার এক বাবুর্চির সহকারী হিসেবে কাজ করেন। ১৫ মাস আগে মুন্নী আকতার গর্ভবতী হন। জন্মের আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানতে পারেন তার পেটে এক ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে। রাশেদা বেগম নামে এক নারীর সঙ্গে মুন্নি বিষয়টি আলোচনা করেন। রাশেদার কাছে আগেই শিরু আকতার ও রুনা আক্তার নামে দুই নারী ছেলে ও মেয়ে দত্তক নেওয়ার কথা জানিয়ে রেখেছিলেন। কারণ, শিরু আক্তারের তিন মেয়ে থাকায় তার একটি ছেলে আর রুনা আক্তারের এক ছেলে থাকায় তার একটা মেয়ের প্রয়োজন ছিল। এরপর রাশেদা মুন্নির পেটের সন্তানদের কথা জানতে পেরে রুনা এবং শিরু দুজনকে সন্তানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। কথা চালাচালি করে দরদামও ঠিক করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহেদুল্লাহ বলেন, ‘রাশেদা শিরু আক্তারকে ছেলে সন্তান ম্যানেজ করে দেওয়ার জন্য ৩ লাখ টাকার চুক্তি করেন এবং রুনাকে মেয়ে সন্তান দেওয়ার জন্য ১ লাখ টাকার চুক্তি করেন। আবার রাশেদা বাদী মুন্নীর সঙ্গে ছেলের জন্য ২ লাখ এবং মেয়ের জন্য ১ লাখ টাকা দেওয়ার চুক্তি করেন। মাঝখানে রাশেদার নিজের জন্য ১ লাখ টাকা লাভ  রাখেন। পাশাপাশি মুন্নীর চিকিৎসার খরচও রাশেদা বহন করবেন বলে চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী জন্মের পরপরই রাশেদা দুই শিশুকে নিয়ে দুই নারীকে বুঝিয়ে দেন। পাশাপাশি রাশেদা দুই নারী থেকে ৪ লাখ টাকা নিয়ে ৩ লাখ টাকা মুন্নীকে বুঝিয়ে দেন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘যমজ সন্তান দুটির মা মুন্নী সন্তান বিক্রির বিষয়ে স্বামী হাবিবুর রহমানের সঙ্গে আগেই শেয়ার করেছিলেন। এতে রাজিও হয়েছিলেন হাবিবুর। কিন্তু হাবিবুর জানতেন শিশু দুটি বিক্রি হয়েছিল দেড় লাখ টাকা দিয়ে। যদিও মুন্নী মোট ৩ লাখ টাকা দিয়েই তার নাড়িছেঁড়া দুই সন্তানকে দত্তক দিয়ে দেন। পরবর্তীতে টাকা নিয়ে মুন্নী এবং তার স্বামী হাবিবুরের মধ্যে মনোমালিন্য হওয়ায় আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার তদন্তে নেমে ভুক্তভোগী দুই শিশুকে উদ্ধার করা হয়। আদালতের নির্দেশে শিশু ও তাদের প্রকৃত মা এবং দত্তক নেওয়া দুই নারীসহ ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে। সোমবার শিশুদের পুনরায় আদালতে হাজির করা হবে। এরপর বিচারকের নির্দেশনা সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |