শরীয়তপুর-ঢাকা রুটে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়, যাত্রীদের ভোগান্তি
প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ শেষে এবার কর্মস্থলে ফেরার পালা। এ সুযোগে শরীয়তপুর থেকে ঢাকা রুটের যাত্রীদের কাছ থেকে বাস মালিকেরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ সময়ে এই রুটের ভাড়া ২৫০ টাকা হলেও ঈদের সময়ে যাত্রীদের থেকে ৫০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। এতে যাত্রীরা চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। অতিরিক্ত টাকা নেওয়ায় যাত্রীরা বিপাকে পড়ছেন। কিন্তু উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে যাত্রীদের বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে।
বুধবার (১৯ জুন) জেলার বিভিন্ন বাস টার্মিনালে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) শরীয়তপুর কার্যালয় ও শরীয়তপুর আন্তঃজেলা বাস ও মিনি বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের মানুষ পদ্মাসেতু পারাপার হয়ে বাসে ঢাকায় যাতায়াত করেন। শরীয়তপুর পৌর বাস টার্মিনাল ও নড়িয়া উপজেলা সদর থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জের কদমতলা পর্যন্ত বাস চলাচল করে। সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ওই পথে প্রতিদিন তিন শতাধিক বাস চলে। গড়ে প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর একেকটি বাস গন্তব্যে ছেড়ে যায়। প্রতিদিন ৮-১০ হাজার মানুষ বাসে চড়ে এ পথে যাতায়াত করেন। ঈদের ছুটিতে যাত্রীসংখ্যা আরও বেড়ে যায়। শরীয়তপুর শহর থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর দূরত্ব ৭৩ কিলোমিটার।
বিআরটিএ এ পথে বাসের যাত্রী ভাড়া ২৯৪ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতি ২৫০ টাকা ভাড়ায় যাত্রী আনা-নেওয়া করে। তবে ঈদ কেন্দ্র করে গত সোমবার (১৭ জুন) ও মঙ্গলবার (১৮ জুন) যাত্রীদের কাছ থেকে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা ভাড়া আদায় করা হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন স্থানে যাত্রীরা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের অভিযোগ, প্রতিবার ঈদের সময়ই বাস মালিকরা ভাড়া বাড়িয়ে দেন এবং যাত্রীরা উপায় না দেখে বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে বাধ্য হন। এই অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কে অনেকে অনৈতিক এবং অমানবিক হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই ভাড়া বৃদ্ধি যৌক্তিক সীমার বাইরে চলে গেছে এবং এতে সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে।
ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি মোবাইলের দোকানে কাজ করেন শরীয়তপুর সদর উপজেলার ধানুকা গ্রামের আবু রাহাত খান। তিনি আজ শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের একটি বাসে করে শরীয়তপুর সদর থেকে থেকে ঢাকার শহরে যাচ্ছেন। তার কাছ থেকে মাঝপথে ৫০০ টাকা বাসভাড়া নেওয়া হয়েছে।
আবু রাহাত খান বলেন, আমরা গরিব মানুষ। স্বল্প বেতনে কাজ করি। সারা বছরের সঞ্চয় দিয়ে ঈদ উদ্যাপন করি। সেই কষ্টের টাকা যদি বাসের মালিক-শ্রমিকেরা রেখে দেন, তাহলে আমরা কোথায় যাব?
আজ সকালে সদর উপজেলার চর চিকন্দি এলাকার কামরুল খান পরিবারের দুই সদস্যকে নিয়ে ঢাকা থেকে এসেছেন। তাদের কাছ থেকে ৬০০ টাকা করে বাসভাড়া আদায় করা হয়েছে।
যাত্রীরা দাবি করছেন, সরকার এবং পরিবহন কর্তৃপক্ষ যেন এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ঈদে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে এবং স্বাভাবিক ভাড়ায় যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
ভাড়া বেশি নেওয়া হচ্ছে কেন জানতে চাইলে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস বাসের চালক সানি বলেন, ঢাকা থেকে শরীয়তপুরে খালি বাস নিয়ে যেতে হচ্ছে। যাওয়ার সময় যাত্রী হলেও আসার সময় কোনো যাত্রী থাকে না। তাই যাওয়া-আসার খরচ সমন্বয় করতে ভাড়া একটু বেশি নেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে শরীয়তপুরে আন্তঃজেলা বাস ও মিনি বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহম্মেদ তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঈদের সময় যাত্রীদের চাপ বেড়ে যায় এবং অতিরিক্ত সার্ভিস চালাতে হয়। শরীয়তপুর থেকে যাওয়ার সময়ই অতিরিক্ত যাত্রী আছে। কিন্তু ঢাকা থেকে শরীয়তপুর যাওয়ার সময় কোনো যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। যাত্রীরা যাতে শরীয়তপুরের বিভিন্ন বাস টার্মিনালে দাঁড়িয়ে না থাকেন, সেই কথা বিবেচনা করে ঢাকা থেকে খালি বাস পাঠাতে হচ্ছে। সেতুর টোল, মহাসড়কের টোল, বিভিন্ন চাঁদা ও তেল খরচ সমন্বয় করতে ভাড়া বেশি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য কিছুটা ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ মুঠোফোনে বলেন, বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না। ঈদের সময় ভাড়া নির্ধারণের বিষয় শরীয়তপুর আন্তঃজেলা বাস ও মিনি বাস মালিক সমিতির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যাত্রী হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালাবেন ম্যাজিস্ট্রেট।
মন্তব্য করুন