শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার আলালপুর ইউনিয়নে গরিবের চর গ্রামে আসমা আক্তারের বাড়ির টিনের চালার ওপরে মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলে আছে আঙুর। যা নজর কাড়ছে সবার। স্বাদ ও সাইজে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও শখের বসে লাগানো গাছে ধরা ফলটি দেখতে বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন স্থানীয়ারা।
সোমবার (২৪ জুন) সকালে উপজেলার আলাওলপুর ইউনিয়নের গরিবের চর এলাকার দর্জিকান্দি গ্রামের বাঘ বাড়িতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
আসমা আক্তারের উঠানে চাষ করা আঙুর ফল দিয়ে তিনি তৈরি করছেন আচারসহ অন্যান্য মুখরোচক খাবার। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর ফল চাষের স্বপ্ন গৃহবধূ আসমার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়ির বারান্দায় টিনের চালার ওপর ঝুলে আছে আঙুর। টিনের ওপরে বাঁশের মাচা তৈরি করা হয়েছে। ফলের ভারে ঝুলে পড়েছে গাছের লতাগুলো। বাজারের তুলনায় গাছটিতে থাকা আঙুরের আকার কিছুটা ছোট। স্বাদেও রয়েছে কিছুটা ভিন্নতা। বাড়িতে আঙুরের গাছ দেখতে এবং খেতে আসছেন আশপাশের অনেকে।
জানা গেছে, দর্জিকান্দি গ্রামের আমির হোসেন বাঘের সঙ্গে আসমা বেগমের বিয়ে হয় প্রায় ১০ বছর আগে। বিয়ের পর আসমা বেগম তার স্বামী আমির হোসেনের কাছে আঙুর ফল গাছের একটি চারা এনে দেওয়ার বায়না করেন। কোথাও আঙুর ফল গাছের চারা না পেয়ে আমির হোসেন স্ত্রীকে অন্য উপহার দিয়েও আসমা বেগমকে খুশি করতে পারেননি। চার বছর আগে আমির হোসেন অনেক খোঁজাখুঁজি করে দিনাজপুর থেকে আঙুর ফল গাছের একটি চারা ও এক বস্তা মাটি এনে দেয় তার স্ত্রীকে। ওই মাটি ব্যবহার করে বাড়ির উঠানের এক কোণে আঙুর ফল গাছের চারাটি রোপণ করেন আসমা বেগম। চারাটি সুন্দরভাবে পরিচর্যা করার পরে দুই বছর আগে প্রথম ফলন আসে।
প্রতিবেশী আফজাল হোসেন জানান, চরের মাটি অনেক উর্বর। মাটির উর্বরতার কারণেই এমন ফলন হয়েছে। ফলটি খেতেও বেশ ভালো। আসমা আপার কাছে গাছের কাটিং চেয়েছি, তিনি আমাকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কৃষি বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করব, তাদের পরামর্শ পেলে আঙুর ফল চাষ করব।
আসমা আক্তার বলেন, বিয়ের পরে স্বামীর কাছে আঙুর ফল গাছের চারা এনে দেওয়ার বায়না করেছিলাম। বিভিন্ন জেলায় খুঁজে বিয়ের কয়েক বছর পর তিনি আমাকে আঙুরের চারাটি এনে দিয়েছিলেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, আমি আঙুর ফল গাছ রোপণ করলে তাতে ভালো ফলন আসবে। আমার বিশ্বাসের জয় হয়েছে। অনেক যত্ন নিয়ে আঙুর গাছের চারাটি বড় করেছি। ফলনও এসেছে বেশ ভালো। ফলগুলো আমি এখনও বিক্রি করিনি। আত্মীয়-স্বজন ও গরিব মানুষকে উপহার দিয়েছি।
আসমা বেগমের স্বামী আমির হোসেন বলেন, স্ত্রীর শখ পূরণ করতে বিভিন্ন জেলায় খুঁজে আঙুর ফলের চারা এনে দিয়েছিলাম। সেই চারা রোপণ করার পরে বাড়ির উঠান জুড়ে ফলন এসেছে।
গোসাইরহাট উপজেলার কৃষি অফিসার মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, দর্জিকান্দি গ্রামে আসমা বেগম নামে এক গৃহবধূ আঙুর ফল চাষ করেছেন। তার গাছে বেশ ভালো ফলন হয়েছে। এতে বোঝা যায়, গোসাইরহাটের মাটি আঙুর ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তার বাগানটি পর্যবেক্ষণ করার জন্য। তিনি সার্বক্ষণিক কারিগরি সহযোগিতা করছেন। পর্যবেক্ষণের পরে যদি আঙুর ফলগুলো মিষ্টি করা যায়, তাহলে অন্যান্য কৃষকরাও আঙুর ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হবেন।