• ঢাকা শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১
logo

বিপৎসীমার ওপরে সুরমার পানি, আবারও বন্যার কবলে সুনামগঞ্জ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ০২ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৯
বিপৎসীমার ওপরে সুরমার পানি, আবারও বন্যার কবলে সুনামগঞ্জ
ছবি : আরটিভি

সুনামগঞ্জে দ্বিতীয়বারের মতো বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুরমা নদীর পানি। সেই সঙ্গে বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার ও ছাতক উপজেলার গ্রামীণ সড়ক, ঘরবাড়ি ও ফসিল জমি।এতে পানিবন্দি হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল ৬টায় সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

এক মাসের ব্যবধানে দুইবার সুনামগঞ্জ বন্যা কবলিত হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এই অঞ্চলের মানুষেরা। জেলার ২০০টি আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে ৯শ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

ভুক্তভোগীরা বলেন, কয়েকদিন আগে একদফা বন্যা হয়ে গেলেও এখন আবারো বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় আমাদের অবস্থা নাজেহাল হয়ে গেছে।

তাহিরপুর উপজেলার এক বাসিন্দা বলেন, বন্যার পানিতে আমাদের অবস্থা খুব খারাপ। প্রতিনিয়ত পানি বাড়ছে। এরইমধ্যে সড়ক ডুবে গেছে। ঘরবাড়িতে পানি।

মল্লিকপুর এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, সোমবার (১ জুলাই) রাতভর বৃষ্টি হয়েছে। এতোটা ভয় আমি আগে কখন পাইনি। সারা রাত জেগে থেকেছি। বার বার মনে হচ্ছিল এই বুঝি ঘরে পানি প্রবেশ করবে। সব আবার তলিয়ে যাবে। ভোরের দিকে ভয় সত্যি করে ঘরে পানি প্রবেশ করে। পানি আরেকটু বাড়লে আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়া জায়গা নেই।

নবীনগর এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাসায় আসছি ৭-৮ দিন হবে। এর মাঝেই আবার বন্যার কবলে পড়ে গেছি। বানের এই পানি সব কেড়ে নিচ্ছে। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি। দু’দিন ধরে কোনো কাজ নেই। সৃষ্টিকর্তাই এখন ভরসা।

পৌর শহরের বাসিন্দা জমিরুল হক পৌরব বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানিতে আমাদের বেহাল অবস্থা। আমরা এই পানির হাত থেকে রক্ষা চাই।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, সুনামগঞ্জে ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হওয়ার কারণে সুরমা ও যাদুকাটা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আরও একদিন মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে নদীর পানি বেড়ে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, রাতভর নিজে উপস্থিত থেকে পৌর শহরের যে এলাকায় পানি ওঠে সেখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা পরিষ্কার করেছি। যাতে পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, বন্যা মোকাবিলায় আমাদের সকল প্রস্তুতি নেওয়া আছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা-উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে।

এদিকে, বন্যাকবলিত সিলেট বিভাগের চার জেলায় এইচএসসি পরীক্ষা পেছালেও স্বস্তিতে নেই পরীক্ষার্থীরা। বন্যায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। পরীক্ষা কেন্দ্রে এখনও পানি থাকায় পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ও ভাল ফল করা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন অভিভাবকেরা।

সারা দেশে গত ৩০ জুন থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হলেও, সিলেট বিভাগের চার জেলার ৮৩ হাজার শিক্ষার্থী বসতে পারেনি পরীক্ষায়। ঘরে-বাইরে, পরীক্ষা কেন্দ্রে পানি থাকায় প্রথম চারটি পরীক্ষা স্থগিত করে শিক্ষাবোর্ড।

এখনও অনেকের ঘরবাড়ি ও পরীক্ষা কেন্দ্রে রয়েছে পানি। এ অবস্থার মধ্যেই ৯ জুলাই পরীক্ষায় বসবে শিক্ষার্থীরা।

মন্তব্য করুন

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বন্যায় ১৫ জেলায় ২০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি, দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি
বন্যায় পানিবন্দি হাজারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরা 
গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পানিবন্দি ৫০ হাজার মানুষ