বৃদ্ধকে জবাই করে হত্যা
অপরিচিত মুঠোফোনের সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে আব্দুল খালেক ওরফে খাজা মিয়াকে (৮০) জবাই করে হত্যার ১৩ দিন পর ক্লুলেস এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, উপজেলার চররশিদ গ্রামের মন্তাজ মিয়ার বাড়ির মো. জয়নাল আবেদীনের ছেলে আইয়ুব আনছারী (২৯), পশ্চিম চরজব্বর গ্রামের শফিক উল্যার ছেলে আব্দুল হাকিম (২৩) ও একই গ্রামের রেজাউল হক চৌধুরীর ছেলে মো. রাজু (২২)।
রোববার (১৪ জুলাই) বিকেল ৫টায় নোয়াখালী পুলিশ সুপার কার্যালয়ের হলরুমে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন।
নিহত খাজা মিয়া উপজেলার চরজব্বর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চর রশিদ গ্রামের খালেক মিয়ার বাড়ির মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। তিনি ৫ সন্তানের জনক ছিলেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, বৃদ্ধ খাজা মিয়ার হত্যার শিকার হওয়ার দুদিন আগে তার ছোট ছেলে আব্দুল্যার মোবাইলে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসে এবং তার বাবাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পুলিশ ওই মোবাইল নম্বরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আসামি আইয়ুব আনছারীকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে আইয়ুব আনছারী এই হত্যাকাণ্ডে তার সহযোগী হিসেবে আব্দুল হাকিমের নাম প্রকাশ করে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আব্দুল হাকিমকে উপজেলার কাঞ্চন বাজার এলাকা থেকে আটক করে। এরপর পুলিশ দুই আসামিকে আদালতে উপস্থাপন করলে আদালত আইয়ুবকে চার দিন ও আব্দুল হাকিমের তিন দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পুলিশ সুপার জানান, রিমান্ডে থাকা আব্দুল হাকিম পুলিশের কাছে আরও একজনের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য দেন। তার ভাষ্যমতে, অপর আসামি মো. রাজুকে আটক করা হয়। এরপর রাজুকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে রাজু পুরো ঘটনা পুলিশের কাছে স্বীকার করে। আসামি রাজু পুলিশকে জানায়, গত ৫ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে আইয়ুব আনছারীর উদ্যোগে স্থানীয় কাঞ্চন বাজারে স’মিলের সামনে তারা তিনজন একত্রিত হন। ওই সময় আইয়ুব আনছারী অপর দুজনকে জানান যে, চরজব্বর থানার একটি মামলা নিয়ে বাদী শফিকের সঙ্গে মামলার বিষয়ে কথা হয়েছে। শফিক আব্দুল খালেক খাজা অথবা খাজার ছোট ছেলে আব্দুলকে শায়েস্তা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। যদি আইয়ুব শফিকের সঙ্গে থাকে তাহলে ওই মামলার বাদী শফিক আইয়ুবকে মামলা থেকে বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। আসামি আইয়ুব আনছারী শফিকের এই প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে আব্দুল খালেক খাজা অথবা খাজার ছোট ছেলে আব্দুলকে মেরে ফেলার ছক আঁকতে শুরু করেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার বিজয়া সেন আরও জানান, আসামি আইয়ুব আনছারী অপর দুই আসামিকে আব্দুল খালেক খাজা মিয়াকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা জানায় এবং কে, কী দায়িত্ব পালন করবে, তা বণ্টন করে দেয়। আব্দুল হাকিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয় কাঞ্চন বাজারে ভিকটিমের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য। বিনিময়ে আইয়ুব আনছারী আব্দুল হাকিমকে নগদ ২ হাজার টাকা দেয় এবং কাজ হয়ে গেলে আরও টাকা দেবে মর্মে জানায়।
অপর সহযোগী রাজুকে পরে ৫ হাজার টাকা দেবে বলে আশ্বস্ত করে। ঘটনার দিন গত ৬ জুলাই বিকেল চারটা থেকে আব্দুল হাকিম কাঞ্চন বাজারে ভিকটিমকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। মাগরিবের নামাজের পর আব্দুল হাকিম খাজা মিয়াকে জিরো পয়েন্টে দেখতে পেয়ে বিষয়টি আইয়ুব আনছারীকে জানায়। এর কিছুক্ষণ পর রাত ৮টার দিকে ভিকটিম আব্দুল খালেক খাজা মিয়াকে আবুল কালামের সঙ্গে জিরো পয়েন্টে দেখে নিশ্চিত হয়ে ভিন্নপথে দ্রুত ঘটনাস্থল-সংলগ্ন মাদরাসার সামনে থাকা আইয়ুব আনছারীর সঙ্গে রাত সাড়ে ৮টার দিকে গিয়ে মিলিত হয়। এর ২ থেকে ৩ মিনিট পর অপর সহযোগী রাজু সেখানে উপস্থিত হয়। পরে তিনজনই ভিকটিম আসার অপেক্ষায় ভিকটিম খাজা মিয়ার বাড়ির প্রবেশের রাস্তায় খড়ের স্তূপের পেছনে ওত পেতে থাকে। তারপর তারা ভিকটিমকে সুযোগ বুঝে জবাই করে হত্যা করে।
মন্তব্য করুন